সব কিছুই খোলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ কেন?
শাহরিয়ার আলম সোহাগ:
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কারণে গত ১৭ই মার্চ থেকে স্কুল, কলেজসহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার, যা আজ অবধি চালু হয়নি। এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে পিএসসি, জেএসসি, এইচএসসি এবং সব শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা।
এই দীর্ঘ সময় অনলাইন ও সংসদ টিভিতে ক্লাস চললেও ডিভাইস ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ৬৮% শিক্ষার্থীর কাছে সেই সেবা পৌঁছায়নি। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের সাম্প্রতিক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার কারণে এখন ৭৫% শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ৭৬% অভিভাবক চাইছেন স্কুলগুলো স্কুলে দেয়া হোক।
এদিকে, দীর্ঘদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আগামী ১লা মার্চ আবাসিক হলে উঠার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (২৩) ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের ঝাল চত্ত্বরে সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেয় তারা। এছাড়াও ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে একই কারণে।
একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যাতীত সবকিছুই ঠিক আগের মতোই চলছে। কেউ মাস্ক পরছেন আবার কেউ পরছেন না। নেই আগের মতো মাস্ক না পরলে প্রশাসনের জরিমানা। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হচ্ছে। দর্শক আনতে করা হচ্ছে মাইকিং। লোকসমাগম ঘটছে বেশ। দেখে মনে হচ্ছে করোনা বলে পৃথিবীতে কিছু আসেনি। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে এতো করোনার অজুহাত কেন?
আগের থেকে দেশে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হারও অনেক কমেছে। করোনার মধ্যেই দেশে ধাপে ধাপে পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেউই লাইনে দাঁড়াচ্ছে না। এখানে করোনার অজুহাত নাই কেন?
এবার আসি বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী বহনের দিকে। করোনার প্রথম দিকে যাত্রীবাহী বাসে এক সিট পর পর যাত্রী বসানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিছুদিন পরই সেটা আগের নিয়মে চলে আসে। এখন সেই আগের মতো গাদাগাদি করেই চলছে যাত্রীবাহী বাসগুলো। তাহলে আমরা কোথায় করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানছি?
চলুন এবার চায়ের দোকান ও বাজার-ঘাট থেকে ঘুরে আসি। দেশে মার্চে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চায়ের দোকানে লোকসমাগম নিয়েও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। সময় বেঁধে দিয়েছিল নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাইরে বের না হয় সেদিকেও ছিল প্রশাসনের নজরদারি। কিন্তু এখন কি আর এসব নির্দেশনা কেউ মানছে? প্রশাসন কি এখনো চায়ের দোকান, বাজার-ঘাটে অভিযান চালাচ্ছে? উত্তর হবে- না। তাহলে আমরা সব জায়গা উন্মুক্ত করে দিয়ে কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখছি?
লেখক: সংবাদকর্মী।
(সবুজদেশ নিউজ ডটকমের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, সবুজদেশ নিউজ ডটকম কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার সবুজদেশ নিউজ ডটকম নিবে না।)