ঢাকা ০১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালীগঞ্জে হামলার পর বন্ধ মাঠ-ঘাট, মৃত্যুর পর আরও ক্ষতির আশংকা

Reporter Name

ঝিনাইদহঃ

সামান্য আহতের ঘটনায় কেন মামলা দেওয়া হলো, এবার দেখে নেওয়া হবে। হুমকী দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হলো আহত কৃষক শাহাবুদ্দিন আহম্মেদের (৪৫) মাঠের চাষাবাদ। মামলা উঠিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের মাঠে যেতে মানা। শুরু করা হলো কৃষক শাহাবুদ্দিনের পরিবারের উপর নানামুখি নির্যাতন। নির্যাতিত এই পরিবারটি হচ্ছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বুজিডাঙ্গামুন্দিয়া গ্রামের।

এতো কিছুর পরও পরিবারের সদস্যরা কষ্ট সহ্য করছিলেন, আশায় ছিলেন সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষে গৃহকর্তা বাড়ি ফিরবেন। শেষ পর্যন্ত আহত শাহাবুদ্দিন বাড়ি ফিরেছেন তবে জীবিত নন, মৃত। লাশ হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ফেরেন তিনি। আর মামলার বাদি তার স্ত্রী রওশানারা বেগম শত হুমকী মোকাবেলা করলেও এখন স্বামীর মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পড়েছেন। তার আশংকা আসামী পক্ষের লোকজন তাদের এবার গ্রামছাড়া করবে।

শাহাবুদ্দিন আহম্মেদের কন্যা ফারহান আক্তার সুমি জানান, তার বাবা একজন কৃষক। তারা তিন বোন আর এক ভাই, যাদের মধ্যে তিনিই বড়। ছোট দুই বোন ও এক ভাই পড়ালেখা করে। সুমি জানান, গত ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর বিকালে বাড়ির পাশে খেলা করছিল তার ছোট বোন শৈতী আক্তার (৮)। এ সময় তারই চাচাতো বোন শারমিন খাতুন (১৪) এর সঙ্গে শৈতীর বচসা হয়। এক পর্যায়ে তার বাবা শাহাবুদ্দিন, চাচা শুকুর আলী ও চাচী পারুল বেগম গোলমালে জড়িয়ে পড়েন। চাচা শুকুর আলী পাশে থাকা একটি খড়কাটা বটি’র পেছনের কাঠের অংশ দিয়ে বাবা শাহাবুদ্দিনের মাথায় আঘাত করেন। তখন তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং রক্ত ঝরতে থাকে। এই অবস্থায় বাবাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার পর দ্রæত খুলনা মেডিকেলে নিতে বলা হয়। তারা খুলনায় নিয়ে গেলে সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এরপর তিনি ঢাকায় চিকিৎসা নেন।

রওশানারা বেগম জানান, তার স্বামী শাহাবুদ্দিন আহম্মেদের মাথার আঘাতটি এতোটা খারাপ ছিল যে চিকিৎসকরা একদফা অস্ত্রপচার করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বলে দেন তিন মাস পর আবার অস্ত্রপচার করতে হবে। সেভাবে গত ১৫ দিন পূর্বে তিনি আবারো ঢাকা মেডিকেলে যান এবং মাথায় অস্ত্রপচার করেন। এই অস্ত্রপচারের দুইদিন পর বুধবার রাতে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রওশানারা বেগম জানান, তার স্বামী আহত হবার পর গ্রামের কিছু মানুষ তাদের মামলা করতে দিচ্ছিলেন না। এদিকে স্বামীর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল। ঠিক সেই সময় ১৮ ডিসেম্বর তিনি কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যে মামলায় ওই দুইজনকে আসামী করা হয়। ওই মামলার প্রধান আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, এখনও তিনি কারাগারে রয়েছেন।

নওশানারা বেগম আরো জানান, এই মামলা করার পর তার ও তার বাচ্চাদের উপর নানা নির্যাতন শুরু হয়। মাঠে তাদের তিন বিঘা চাষযোগ্য জমি আছে যা চাষ করতে দেওয়া হয়নি। এখনও জমিগুলো পড়ে আছে। আসামীর পক্ষের লোকজন সারাক্ষণ হুমকী দিয়েছে মামলা মিটিয়ে নিতে হবে। সামান্য বিষয় দাবি করে তারা মামলা মিটিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তার স্বামী মারাই গেলেন। বুধবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ৫ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় তার লাশ বাড়িতে পৌছায়। সাড়ে ১১ টার দিকে পারিবারি কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, স্বামী চলে গেলেন এখন তার চিন্তা পরিবার নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবেন। আসামীরা বড় কোনো ক্ষতি করতে পারে এই আশংকা রওশানারা বেগমের। বড় মেয়ে ফারহানা আক্তার সুমি’র বিয়ে দিয়েছেন। মেঝো মেয়ে সোনালী আক্তার (১৯) অনার্স পড়ছে। ছোট মেয়ে শৈতী আক্তার (৭) তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে, আর একমাত্র ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (১৫) দশম শ্রেণীর ছাত্র। এদের পড়ালেখা কিভাবে করাবেন তাই নিয়ে চিন্তিত তিনি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার এসআই আবুল খায়ের জানান, আহত ব্যক্তি শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মারা যাওয়ায় মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তর হয়েছে। প্রধান আসামী কারাগারে আছেন, অন্য আসামীকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। চাষাবাদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ তাকে কেউ দেয়নি বলে জানান। তবে বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

Tag :

About Author Information
Update Time : ০৭:৩৫:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ মার্চ ২০২০
৫৫৬ Time View

কালীগঞ্জে হামলার পর বন্ধ মাঠ-ঘাট, মৃত্যুর পর আরও ক্ষতির আশংকা

Update Time : ০৭:৩৫:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ মার্চ ২০২০

ঝিনাইদহঃ

সামান্য আহতের ঘটনায় কেন মামলা দেওয়া হলো, এবার দেখে নেওয়া হবে। হুমকী দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হলো আহত কৃষক শাহাবুদ্দিন আহম্মেদের (৪৫) মাঠের চাষাবাদ। মামলা উঠিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের মাঠে যেতে মানা। শুরু করা হলো কৃষক শাহাবুদ্দিনের পরিবারের উপর নানামুখি নির্যাতন। নির্যাতিত এই পরিবারটি হচ্ছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বুজিডাঙ্গামুন্দিয়া গ্রামের।

এতো কিছুর পরও পরিবারের সদস্যরা কষ্ট সহ্য করছিলেন, আশায় ছিলেন সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষে গৃহকর্তা বাড়ি ফিরবেন। শেষ পর্যন্ত আহত শাহাবুদ্দিন বাড়ি ফিরেছেন তবে জীবিত নন, মৃত। লাশ হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ফেরেন তিনি। আর মামলার বাদি তার স্ত্রী রওশানারা বেগম শত হুমকী মোকাবেলা করলেও এখন স্বামীর মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পড়েছেন। তার আশংকা আসামী পক্ষের লোকজন তাদের এবার গ্রামছাড়া করবে।

শাহাবুদ্দিন আহম্মেদের কন্যা ফারহান আক্তার সুমি জানান, তার বাবা একজন কৃষক। তারা তিন বোন আর এক ভাই, যাদের মধ্যে তিনিই বড়। ছোট দুই বোন ও এক ভাই পড়ালেখা করে। সুমি জানান, গত ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর বিকালে বাড়ির পাশে খেলা করছিল তার ছোট বোন শৈতী আক্তার (৮)। এ সময় তারই চাচাতো বোন শারমিন খাতুন (১৪) এর সঙ্গে শৈতীর বচসা হয়। এক পর্যায়ে তার বাবা শাহাবুদ্দিন, চাচা শুকুর আলী ও চাচী পারুল বেগম গোলমালে জড়িয়ে পড়েন। চাচা শুকুর আলী পাশে থাকা একটি খড়কাটা বটি’র পেছনের কাঠের অংশ দিয়ে বাবা শাহাবুদ্দিনের মাথায় আঘাত করেন। তখন তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং রক্ত ঝরতে থাকে। এই অবস্থায় বাবাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার পর দ্রæত খুলনা মেডিকেলে নিতে বলা হয়। তারা খুলনায় নিয়ে গেলে সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এরপর তিনি ঢাকায় চিকিৎসা নেন।

রওশানারা বেগম জানান, তার স্বামী শাহাবুদ্দিন আহম্মেদের মাথার আঘাতটি এতোটা খারাপ ছিল যে চিকিৎসকরা একদফা অস্ত্রপচার করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বলে দেন তিন মাস পর আবার অস্ত্রপচার করতে হবে। সেভাবে গত ১৫ দিন পূর্বে তিনি আবারো ঢাকা মেডিকেলে যান এবং মাথায় অস্ত্রপচার করেন। এই অস্ত্রপচারের দুইদিন পর বুধবার রাতে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রওশানারা বেগম জানান, তার স্বামী আহত হবার পর গ্রামের কিছু মানুষ তাদের মামলা করতে দিচ্ছিলেন না। এদিকে স্বামীর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল। ঠিক সেই সময় ১৮ ডিসেম্বর তিনি কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যে মামলায় ওই দুইজনকে আসামী করা হয়। ওই মামলার প্রধান আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, এখনও তিনি কারাগারে রয়েছেন।

নওশানারা বেগম আরো জানান, এই মামলা করার পর তার ও তার বাচ্চাদের উপর নানা নির্যাতন শুরু হয়। মাঠে তাদের তিন বিঘা চাষযোগ্য জমি আছে যা চাষ করতে দেওয়া হয়নি। এখনও জমিগুলো পড়ে আছে। আসামীর পক্ষের লোকজন সারাক্ষণ হুমকী দিয়েছে মামলা মিটিয়ে নিতে হবে। সামান্য বিষয় দাবি করে তারা মামলা মিটিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তার স্বামী মারাই গেলেন। বুধবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ৫ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় তার লাশ বাড়িতে পৌছায়। সাড়ে ১১ টার দিকে পারিবারি কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, স্বামী চলে গেলেন এখন তার চিন্তা পরিবার নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবেন। আসামীরা বড় কোনো ক্ষতি করতে পারে এই আশংকা রওশানারা বেগমের। বড় মেয়ে ফারহানা আক্তার সুমি’র বিয়ে দিয়েছেন। মেঝো মেয়ে সোনালী আক্তার (১৯) অনার্স পড়ছে। ছোট মেয়ে শৈতী আক্তার (৭) তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে, আর একমাত্র ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (১৫) দশম শ্রেণীর ছাত্র। এদের পড়ালেখা কিভাবে করাবেন তাই নিয়ে চিন্তিত তিনি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার এসআই আবুল খায়ের জানান, আহত ব্যক্তি শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মারা যাওয়ায় মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তর হয়েছে। প্রধান আসামী কারাগারে আছেন, অন্য আসামীকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। চাষাবাদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ তাকে কেউ দেয়নি বলে জানান। তবে বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।