ঢাকা ০৩:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা সন্দেহে ইতালি থেকে ঝিনাইদহে ফেরা দম্পতি নিয়ে হুলস্থুল

Reporter Name

ফাইল ফটো

ঝিনাইদহঃ

ইতালী থেকে দেশে ফিরেই ঝিনাইদহের এক দম্পত্তি ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের নিয়ে শহরে রীতিমতো হুলস্থুল কান্ড ঘটে যায়।

এদিকে শহরের হামদহ খোন্দকার পাড়ার এক কাস্টম কর্মকর্তার ছেলেও বাড়ি ফিরে শহরে চলাফেরা করে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। অন্যদিকে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরী সভা করেছে মঙ্গলবার। জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম এ খবর জানান।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর মাষ্টার পাড়ায় ইতালী ফেরৎ এক দম্পত্তি ঝিনাইদহে ফিরে শহরে মার্কেট করতে বের হয়। খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগমকে জানানো হয়। সিভিল সার্জন ওই বাড়িতে স্বাস্থ্য কর্মীদের পাঠিয়ে দেন। সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কাজল কুমার বিশ্বাস বেলা ১১টার দিকে তাদের বাড়ি গিয়ে দেখেন তারা মার্কেট করতে বের হয়েছেন। খবর দিয়ে বাড়ি এনে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা সিন্ধান্ত জানান। তবে তাদের কাছে ইতালি স্বাস্থ্য বিভাগের হেলথ কার্ড আছে। তারা করোনা ভাইরাস মুক্ত বলে ইতালী স্বাস্থ্য বিভাগ সনদ দিয়েছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কাজল কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, গত ৭ মার্চ কামাল-সোনালী দম্পত্তি ইতালী থেকে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে তারা চলে যান স্বামীর বাড়ি যশোরের চৌগাছা শহরে। সেখান থেকে সোমবার রাত ৯টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর মাস্টার পাড়ায় শ্বশুর বাড়িতে এসে কেনা কাটার জন্য তারা ঝিনাইদহ শহরে বেরিয়ে পড়েন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, করোনা ভাইরাসের কোন লক্ষন তাদের মধ্যে নেই। তারা করোনা ভাইরাস মুক্ত বলে ইতালী সরকারের হেলথ কার্ড রয়েছে। তারপরও অধিক সতর্কতা অবলম্বনের জন্য তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে বিকাল পর্যন্ত হামদহ খোন্দকার পাড়ার এক কাস্টম কর্মকর্তার ছেলের বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম, করোনা ভাইরাস নিয়ে কোন আতংকিত না হয়ে সচেতনতার মাধ্যমে আমরা মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছি। এ জন্য পরিত্যক্ত ঝিনাইদহ পুরাতন হাসপাতাল এলাকার খাবার স্যালাইন ফ্যক্টরি, বাস টার্মিনাল এলাকার শিশু হাসপাতাল ও শহরের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সচেতনতা বাড়াতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যারা বিদেশ থেকে আসবেন তাদেরকে নিজ বাসায় ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম জানান, লক্ষন দেখা গেলেই কেবল স্বাস্থ্য কর্মী ও চিকিৎসকদের তত্বাবধানে রোগীদের নেওয়া হবে। তবে এটা নিজেদের বাসাতে করলেই রোগাক্রান্তদের জন্য ভাল হবে বলে তিনি জানান। তিনি ইতালী ফেরত ওই দম্পত্তির খবর শোনা মাত্রই তাদের বাড়ি স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠিয়ে দেন বলে জানান।

তিনি আরো জানান হামদহ খোন্দকার পাড়ার এক কাস্টম কর্মকর্তার ছেলের বিষয়েও তথ্য নিতে তাদের বাড়িতে লোক পাঠানো হয়েছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসকরা জানান, বিদেশ ফেরতদের কাছে করোনা মুক্ত সনদ থাকলেও তারা ঝুকি মুক্ত নয়। কারণ তারা তো অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। সরকারের উচিৎ বিমান বন্দর থেকেই কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া উচিৎ। কিন্তু বিমান বন্দর থেকে কেবল তাদের মোবাইল ফোন নাম্বার রেখে ১৪ দিন বাসায় থাকতে পরামর্শ দেওয়া হলেও প্রবাসিরা যুক্কি, অজুহাত আর কাজ দেখিয়ে নিজ নিজ শহর বা গ্রামের পাবলিক প্লেসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

Tag :

About Author Information
Update Time : ০৫:০০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ মার্চ ২০২০
১১৬০ Time View

করোনা সন্দেহে ইতালি থেকে ঝিনাইদহে ফেরা দম্পতি নিয়ে হুলস্থুল

Update Time : ০৫:০০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ মার্চ ২০২০

ঝিনাইদহঃ

ইতালী থেকে দেশে ফিরেই ঝিনাইদহের এক দম্পত্তি ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের নিয়ে শহরে রীতিমতো হুলস্থুল কান্ড ঘটে যায়।

এদিকে শহরের হামদহ খোন্দকার পাড়ার এক কাস্টম কর্মকর্তার ছেলেও বাড়ি ফিরে শহরে চলাফেরা করে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। অন্যদিকে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরী সভা করেছে মঙ্গলবার। জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম এ খবর জানান।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর মাষ্টার পাড়ায় ইতালী ফেরৎ এক দম্পত্তি ঝিনাইদহে ফিরে শহরে মার্কেট করতে বের হয়। খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগমকে জানানো হয়। সিভিল সার্জন ওই বাড়িতে স্বাস্থ্য কর্মীদের পাঠিয়ে দেন। সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কাজল কুমার বিশ্বাস বেলা ১১টার দিকে তাদের বাড়ি গিয়ে দেখেন তারা মার্কেট করতে বের হয়েছেন। খবর দিয়ে বাড়ি এনে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা সিন্ধান্ত জানান। তবে তাদের কাছে ইতালি স্বাস্থ্য বিভাগের হেলথ কার্ড আছে। তারা করোনা ভাইরাস মুক্ত বলে ইতালী স্বাস্থ্য বিভাগ সনদ দিয়েছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কাজল কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, গত ৭ মার্চ কামাল-সোনালী দম্পত্তি ইতালী থেকে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে তারা চলে যান স্বামীর বাড়ি যশোরের চৌগাছা শহরে। সেখান থেকে সোমবার রাত ৯টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর মাস্টার পাড়ায় শ্বশুর বাড়িতে এসে কেনা কাটার জন্য তারা ঝিনাইদহ শহরে বেরিয়ে পড়েন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, করোনা ভাইরাসের কোন লক্ষন তাদের মধ্যে নেই। তারা করোনা ভাইরাস মুক্ত বলে ইতালী সরকারের হেলথ কার্ড রয়েছে। তারপরও অধিক সতর্কতা অবলম্বনের জন্য তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে বিকাল পর্যন্ত হামদহ খোন্দকার পাড়ার এক কাস্টম কর্মকর্তার ছেলের বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম, করোনা ভাইরাস নিয়ে কোন আতংকিত না হয়ে সচেতনতার মাধ্যমে আমরা মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছি। এ জন্য পরিত্যক্ত ঝিনাইদহ পুরাতন হাসপাতাল এলাকার খাবার স্যালাইন ফ্যক্টরি, বাস টার্মিনাল এলাকার শিশু হাসপাতাল ও শহরের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সচেতনতা বাড়াতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যারা বিদেশ থেকে আসবেন তাদেরকে নিজ বাসায় ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম জানান, লক্ষন দেখা গেলেই কেবল স্বাস্থ্য কর্মী ও চিকিৎসকদের তত্বাবধানে রোগীদের নেওয়া হবে। তবে এটা নিজেদের বাসাতে করলেই রোগাক্রান্তদের জন্য ভাল হবে বলে তিনি জানান। তিনি ইতালী ফেরত ওই দম্পত্তির খবর শোনা মাত্রই তাদের বাড়ি স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠিয়ে দেন বলে জানান।

তিনি আরো জানান হামদহ খোন্দকার পাড়ার এক কাস্টম কর্মকর্তার ছেলের বিষয়েও তথ্য নিতে তাদের বাড়িতে লোক পাঠানো হয়েছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসকরা জানান, বিদেশ ফেরতদের কাছে করোনা মুক্ত সনদ থাকলেও তারা ঝুকি মুক্ত নয়। কারণ তারা তো অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। সরকারের উচিৎ বিমান বন্দর থেকেই কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া উচিৎ। কিন্তু বিমান বন্দর থেকে কেবল তাদের মোবাইল ফোন নাম্বার রেখে ১৪ দিন বাসায় থাকতে পরামর্শ দেওয়া হলেও প্রবাসিরা যুক্কি, অজুহাত আর কাজ দেখিয়ে নিজ নিজ শহর বা গ্রামের পাবলিক প্লেসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।