ঢাকা ০৯:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনাভাইরাস: ঝিনাইদহে সদর হাসপাতালে নেই কোন প্রস্তুতি

Reporter Name

ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিদেশফেরত ব্যক্তিসহ ২৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মহেশপুরে পাঁচজন, কালীগঞ্জে একই পরিবারের ১৩ জন এবং সদর উপজেলায় পাঁচজন রয়েছেন। এদের মধ্যে ইতালি, ভারত এবং আমেরিকা ফেরত কয়েকজন রয়েছেন।

বিদেশফেরত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলেও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়নি কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। হাঁচি-কাশি কিংবা জ্বর-ঠান্ডার রোগীদের জন্য নেই আলাদা ব্যবস্থা। এসব রোগীরা কোথায় চিকিৎসা নিবে তার জন্যও নেই হেল্প ডেস্ক। ডায়রিয়া বিভাগে শুধু তিনটা বেড রেখে আইসোলেন ইউনিট লিখে রাখা হয়েছে। চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত ওয়ার্ডবয় থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পর্যন্ত নেই কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা। ফলে করোনা আতঙ্কে চিকিৎসা সেবা প্রদান নিয়ে চরম শঙ্কায় পড়েছেন তারা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিজ জেলার সদর হাসপাতালের এই চিত্রে হতাশাগ্রস্থ সর্বস্তরের মানুষ। অথচ এ হাসপাতালে প্রতিদিন নানা রোগে আক্রান্ত অন্তত সহস্রাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন , হাসপাতালে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ চিকিৎসা আসে। তারা যত্রতত্র হাঁচি-কাশি দিচ্ছে, কারও মুখেই মাস্ক নেই। এখান থেকে তো যে কারও মাধ্যমেই করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। কারণ আমরা কেউ তো জানি না কার শরীরে এই ভাইরাস আছে।

অন্যান্য রোগীরা জানান, যেখানে সারাদেশে সতর্ক অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বেহাল চিত্র। হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক কিছুই করছেন না। তারা হাসপাতালের প্রবেশ মুখে হেল্প ডেস্ক ও হাঁচি-কাশি রোগীদের জন্য আলাদা চিকিৎসা ডেস্ক চালু করার দাবি জানান।

মেডিসিন বিভাগের একাধিক নার্স বলেন, আমাদের কোনো সেফটি নেই। কোনো গাউন, মাস্ক কিছুই নেই হাসপাতালে। আমরাই যনি নিরাপদে থাকতে না পারি তাহলে রোগীদের সেবা দেব কীভাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলেন, ফিঙ্গার, হাঁচি-কাশিসহ নানা কারণে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কেউই করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য সুরক্ষিত বা প্রস্তুত না। আমাদের নিজেদের শরীরেরই নিরাপত্তা নেই তাহলে রোগীদের কীভাবে চিকিৎসা দেব।

অভিযোগের বিষয়ে সদর হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক ডা. আয়ুব আলী বলেন, আমাদের হাসপাতালে করোনাভাইরাস চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা আছে। করোনা শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত আতঙ্ক রোধে চিকিৎসকদের গাউন, মাস্ক, আই-প্রটেকটর ব্যবহার করতে দিচ্ছি না। এগুলো পরলে মানুষ আতঙ্কিত হবে।

তবে এর আগে যদি চিকিৎসা দিতে গিয়ে কোনো চিকিৎসকের শরীরের আক্রান্তের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তখন কি হবে- এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি ।

এদিকে এ বছর নতুন করে আসা কোনো গাউন দেখাতে পারেননি তত্ত্বাবধায়ক। গেল বছরের একটি গাউন ও কয়েকটি মাস্ক এবং কিছু চশমা দেখিয়ে তা আলমারিতে বন্ধ করে রাখেন তিনি।

Tag :

About Author Information
Update Time : ০৩:০৮:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ মার্চ ২০২০
৫৯৪ Time View

করোনাভাইরাস: ঝিনাইদহে সদর হাসপাতালে নেই কোন প্রস্তুতি

Update Time : ০৩:০৮:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ মার্চ ২০২০

ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিদেশফেরত ব্যক্তিসহ ২৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মহেশপুরে পাঁচজন, কালীগঞ্জে একই পরিবারের ১৩ জন এবং সদর উপজেলায় পাঁচজন রয়েছেন। এদের মধ্যে ইতালি, ভারত এবং আমেরিকা ফেরত কয়েকজন রয়েছেন।

বিদেশফেরত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলেও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়নি কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। হাঁচি-কাশি কিংবা জ্বর-ঠান্ডার রোগীদের জন্য নেই আলাদা ব্যবস্থা। এসব রোগীরা কোথায় চিকিৎসা নিবে তার জন্যও নেই হেল্প ডেস্ক। ডায়রিয়া বিভাগে শুধু তিনটা বেড রেখে আইসোলেন ইউনিট লিখে রাখা হয়েছে। চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত ওয়ার্ডবয় থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পর্যন্ত নেই কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা। ফলে করোনা আতঙ্কে চিকিৎসা সেবা প্রদান নিয়ে চরম শঙ্কায় পড়েছেন তারা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিজ জেলার সদর হাসপাতালের এই চিত্রে হতাশাগ্রস্থ সর্বস্তরের মানুষ। অথচ এ হাসপাতালে প্রতিদিন নানা রোগে আক্রান্ত অন্তত সহস্রাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন , হাসপাতালে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ চিকিৎসা আসে। তারা যত্রতত্র হাঁচি-কাশি দিচ্ছে, কারও মুখেই মাস্ক নেই। এখান থেকে তো যে কারও মাধ্যমেই করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। কারণ আমরা কেউ তো জানি না কার শরীরে এই ভাইরাস আছে।

অন্যান্য রোগীরা জানান, যেখানে সারাদেশে সতর্ক অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বেহাল চিত্র। হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক কিছুই করছেন না। তারা হাসপাতালের প্রবেশ মুখে হেল্প ডেস্ক ও হাঁচি-কাশি রোগীদের জন্য আলাদা চিকিৎসা ডেস্ক চালু করার দাবি জানান।

মেডিসিন বিভাগের একাধিক নার্স বলেন, আমাদের কোনো সেফটি নেই। কোনো গাউন, মাস্ক কিছুই নেই হাসপাতালে। আমরাই যনি নিরাপদে থাকতে না পারি তাহলে রোগীদের সেবা দেব কীভাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলেন, ফিঙ্গার, হাঁচি-কাশিসহ নানা কারণে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কেউই করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য সুরক্ষিত বা প্রস্তুত না। আমাদের নিজেদের শরীরেরই নিরাপত্তা নেই তাহলে রোগীদের কীভাবে চিকিৎসা দেব।

অভিযোগের বিষয়ে সদর হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক ডা. আয়ুব আলী বলেন, আমাদের হাসপাতালে করোনাভাইরাস চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা আছে। করোনা শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত আতঙ্ক রোধে চিকিৎসকদের গাউন, মাস্ক, আই-প্রটেকটর ব্যবহার করতে দিচ্ছি না। এগুলো পরলে মানুষ আতঙ্কিত হবে।

তবে এর আগে যদি চিকিৎসা দিতে গিয়ে কোনো চিকিৎসকের শরীরের আক্রান্তের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তখন কি হবে- এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি ।

এদিকে এ বছর নতুন করে আসা কোনো গাউন দেখাতে পারেননি তত্ত্বাবধায়ক। গেল বছরের একটি গাউন ও কয়েকটি মাস্ক এবং কিছু চশমা দেখিয়ে তা আলমারিতে বন্ধ করে রাখেন তিনি।