বিশেষ প্রতিনিধিঃ

প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো উপহার সামগ্রী নিয়ে বুধবার দুপুরে সেই আশ্রয়দাতা আমজাদ- ছাকিরন দম্পতি আদরী ও তার প্রতিবন্ধি মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। এ দম্পতির হাতে সকাল ১১ টায় প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো ১ লক্ষ টাকার মধ্যে নগদ ৫৫ হাজার টাকা এবং ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি মটর ইঞ্জিনচালিত ভ্যান তুলে দেয়া হয়। এ সময় স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ শেখ, ওসি মাহাফুজুর রহমান মিয়া, প্রেসক্লাব সভাপতি জামির হোসেন, সাধারন সম্পাদক সাবজাল হোসেনসহ মিডিয়াকর্মিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রকাশ থাকে যে, ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ময়ধরপুর গ্রামের রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অজ্ঞাত অসুস্থ এক মানসিক প্রতিবন্ধি। ময়লা মাখা শরীর কিন্ত মানুষ তো। সে সময়ে দেখতে ভীড় করেছেন গ্রামের লোকজনসহ উৎসুক পথচারীরা। সন্ধ্যা গড়িয়ে ঘনিয়েছে রাত। সে সময়ে যারা সামনে গেছেন শুধু মুখের দিকে ফ্যালফেলিয়ে তাকাচ্ছিলেন এই প্রতিবন্ধী। ফলে বোঝা যাচ্ছিল তখনও বেঁচে আছেন। শুধু দরকার জরুরী চিকিৎসাসেবা। কিন্ত কে দায়িত্ব নিয়ে ঝামেলা পোহাবেন। এমন ভেবে সময় যত গড়িয়েছে কমেছে উৎসুক জনতার ভীড়। তাই বলে একজন মানুষ চোখের সামনে চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে। এটাও হতে পারে না। এমন ভাবনা থেকেই দিনমজুর আমজাদ সমাজসেবক আব্দুর রশিদসহ গ্রামের বেশ কয়েকজন এগিয়ে এসেছেন। তারা গাঁটের টাকায় গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে আসেন কালীগঞ্জ হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসকের মুখে কথা শুনে তো তারা কিংকর্তব্যবিমুঢ়। কেননা তিনি বললেন মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। এখন তার খাবার আর বিশ্রাম দরকার। এদিকে একটু সুস্থ হতেই হাসপাতালের বেডে শুয়ে প্রতিবন্ধি শুরু করেন পাগলামী। বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে তারা আবার ফেরেন এলাকায়। এরপরের চিত্র আরও ভিন্ন। এমন অবস্থায় কে দাঁড়াবেন তার পাশে? উৎসুক জনতার কাতার থেকে অনেকে বলেছেন এই প্রতিবন্ধি কোলাবাজারে প্রায় দুই মাস ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্যরা যাই ভাবুকনা কেন এই অসহায় মানসিক প্রতিবন্ধির পাশে দাঁড়িয়েছেন দিনমজুর আমজাদ। তিনি প্রতিবন্ধিকে সাথে নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন। সংসারে অভাব আছে তারপরও আমজাদের স্ত্রী ছাকিরন বেগমও স্বামীর কর্মকান্ডকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনেক সময় নিজেদের চুলা জ্বলে না।

কিন্ত প্রতিবন্ধিকে নিজের সংসারের সদস্য মনে করে তিনিও মানবিক হয়েছেন। মহত্বের পরিচয় দিয়ে বাড়িতে রেখে প্রতিবন্ধির শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চিকিৎসা ও যাবতীয় সেবাযতœ দিয়েছেন। আমজাদ-ছাকিরনের দম্পতির এমন মহত্বের কথা তুলে ধরে ডেইলি বাংলাদেশে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। ওইদিন বিকালেই কালীগঞ্জ হাসপাতালে প্রতিবন্ধি ফুটফুটে চেহারার কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অজোপাড়াগায়ের এমন ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী মা ও সন্তানের দায়িত্বভার গ্রহনের মহৎ ঘোষনায় সর্বমহলে প্রশংসায় ভেসেছেন। নবজাতকটির জন্মের পরেই স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার ছুটে গিয়ে নবজাতককে কোলে তুলে নিয়ে মা ও নবজাতকের চিকিৎসার যাবতীয় খোঁজখবর নিয়ে মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

পরে রাতে হাসপাতালে ছুটে আসেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা। এ সময় জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথও নবজাতকটিকে আদরে কোলে নেন। তিনি নবজাতকের নাম রাখেন আদরী। এ সময় আশ্রয়দাতা আমজাদ- ছাকিরন দম্পতির হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়ে মহত্বের পরিচয় দেন। মা ও মেয়ে আদরীর চিকিৎসাসহ যাবতীয় ব্যয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেয়া হবে জেলা প্রশাসকের এমন উদারতাপূর্ণ ঘোষনা দেশব্যাপি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। পরে ৫ অক্টোবর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আব্দুল লতিফ শেখ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কৌশিক আহম্মেদ আদরীকে কোলে তুলে নিয়ে ১০ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করেন। ফুটফুটে চেহারার আদরীকে অনেকে নিতে চেয়েছেন।

কিন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শিশু কল্যান বোর্ড সভায় আমজাদ – ছাকিরন দম্পতির মহৎ কাজের জন্য তাদের হাতেই তুলে দেয়ার মহৎ সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ৬ অক্টোবর ফেসবুক ভিত্তিক কালীগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা গ্রæপ ওই পরিবারের হাতে ১৪ হাজার ৫’শ টাকা তুলে দিয়ে মহত্বের পরিচয় দেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here