সবুজদেশ ডেক্সঃ আওয়ামী লীগের সাংসদ এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী ও ভাইদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের মাঠে আউয়ালের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁর আপন ভাই।

জামায়াতের সাবেক সাংসদ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলেও গণসংযোগ চালাচ্ছেন। ২০-দলীয় জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি (জাফর) ছাড়াও বিএনপির চার নেতা এবার জোটের মনোনয়ন চাইবেন।

পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর-১ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৩, ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগিয়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সাংসদ হন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের আউয়াল সাঈদীকে হারিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আউয়াল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বার সাংসদ হন।

আওয়ামী লীগ
’৭৯ ও ’৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সুধাংশু শেখর হালদার জয়লাভ করেন।’ ৯৬ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মাত্র ২৮০ ভোটের ব্যবধানে সুধাংশুকে হারিয়ে সাংসদ হন। ২০০৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোটের মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার। তিনি নৌকা না নিয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। আর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আউয়াল।

২০১৬ সালে তিন ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন আউয়াল। এরপর আউয়ালের মেজ ভাই পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ শুরু করেন। সেজ ভাই পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান আউয়ালের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলেন। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দুই দফা আউয়াল ও হাবিবুর রহমানের মধ্যে বিরোধ মেটানোর জন্য উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন। তাঁরা দুজনই মনোনয়ন চাইছেন।

সাংসদ আউয়াল বলেন, ‘সাঈদীর মতো প্রার্থীকে হারিয়ে আমি হারানো আসন উদ্ধার করেছি। এ আসন ধরে রাখার মতো প্রার্থী আমি ছাড়া কেউ নেই।’

হাবিবুর রহমান বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি জেলা আওয়ামী লীগকে গোপনে সংগঠিত করেছিলেন। এ আসনে সাঈদীর ছেলে প্রার্থী হলে তাঁকে হারানোর মতো কর্মী-সমর্থক একমাত্র তাঁর রয়েছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আশায় প্রচারণা চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, সাবেক সাংসদ শাহ আলম, প্রয়াত এনায়েত হোসেন খানের মেয়ে ও বঙ্গবন্ধুর চাচাতো ভাই শেখ হাফিজুর রহমানের স্ত্রী শেখ এ্যানি রহমান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্না এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা।

ভাইদের বিরোধ যখন তুঙ্গে, ঠিক তখন মাঠে নামেন শেখ এ্যানি রহমান। প্রয়াত সাংসদ সুধাংশু শেখর হালদারের অনুসারীরা শেখ পরিবারের বধূ এ্যানি রহমানকে নিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন। শ ম রেজাউল করিম বলেন, তিনি দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। না পেলে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।

বিএনপি ও শরিক দল
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কারাগারে আছেন। জামায়াতের প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই। কিন্তু পিরোজপুর-১ আসনে তৎপর রয়েছেন জামায়াতের কর্মী-সমর্থকেরা। গুঞ্জন রয়েছে, এবার সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদী প্রার্থী হতে পারেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন করার প্রস্তুতি হিসেবে তিনি এলাকায় জনসংযোগ করছেন।

তবে সাঈদীর বাড়ি ইন্দুরকানি উপজেলায় হওয়ায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের একটি অংশ চাইছে সাঈদীর পরিবারকে পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-ইন্দুরকানি) আসন ছেড়ে দিতে। সে ক্ষেত্রে পিরোজপুর-১ আসনে ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী হতে চান জোটের আরেক শরিক দল জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব, সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ মোস্তফা জামাল হায়দার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ আসনে তিনি দুবার সাংসদ ছিলেন। আগামী নির্বাচনে জোটের কাছে তাঁর দল এটিসহ ১১টি আসন দাবি করবে।

পিরোজপুর জেলা বিএনপি তেমন একটা সক্রিয় নয়। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাঝেমধ্যে কেন্দ্রঘোষিত দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। এর বাইরে দলটির কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না। তবে বিএনপির হয়ে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান, জেলার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এম সরোয়ার হোসেন ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফকরুল আলম।

আলমগীর হোসেন বলেন, পিরোজপুর-১ আসনে বিএনপির সাংসদ না থাকায় দলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন সময় এসেছে আসনটি বিএনপিকে ফিরিয়ে দেওয়ার।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here