নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ:

মিনা রানী। স্বামী মারা গেছে অনেক আগেই। ১৮ শতক জমিতে ধান রোপন করেছিলেন। ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু অশনির বৃষ্টিতে পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন ধার-দেনা কিভাবে শোধ করবেন সেই চিন্তায় বিভোর তিনি।

মিনা রানীর মতো জেলার জেলার ধানচাষীদের অবস্থা এমনই। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’দফায় বৃষ্টির ফলে ক্ষেতের পাকা ধানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চরম হতাশায় পরেছে কৃষক। একদিকে শ্রমিক সঙ্কট, অন্য দিকে বৈরী আবহাওয়া যেন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষেতে কেটে রাখা ধান ঘর্ণিঝড় অশনি বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধানের ফলন ও দাম ভালো হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধান ঘরে তোলার মুহূর্তে বৈরী আবহাওয়া ও ভারী বৃষ্টির কারণে চাষিরা পড়েছেন উৎকণ্ঠায়। এ ছাড়া শ্রমিক সঙ্কটে ধান ঘরে তোলা নিয়ে খুব চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় মাঠের পর মাঠ পাকা ধান মাটিতে নূইয়ে পড়েছে। অনেক জমিতে জমে থাকা পানি কেটে রাখা ধানের উপরে উঠে গেছে। এতে ধানের সঙ্গে ডুবেছে কৃষকদের স্বপ্নও।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, কালীগঞ্জ উপজেলায় ধানচাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ৩০ হেক্টর। কিন্তু কার্তিক মাসের কিছু ফসল নষ্ট হওয়ায় কারণে এবার চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৫’শ ৩০ হেক্টোর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৫’শ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ ভাগ মত বাড়িতে এনে পালা দিয়ে রেখেছেন আর গুলো ক্ষেতেই পড়ে বৃষ্টির পানিতে ভিজছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার আলাইপুর গ্রামের মাঠে বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটছে মিনা রানী।

এ বিষয়ে উপজেলার জামাল ইউনিয়নের আলাইপুর গ্রামের ফিরোজ হোসেন জানান, এ বছর ধার-দেনা করে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কষ্টার্জিত ফসল ঘরেতোলার আগেই বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে তার জমির সব পাকা ধান। ধানের ফলন ভালো হয়েছিল কিন্তু বৃষ্টিতে সব শেষ করে দিয়েছে।

আরেক কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি ২ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছিলেন। বৃষ্টি শুরু আগে কেটে রেখেছিলেন জমিতে। হঠাৎ বৃষ্টিতে সেই ধান সব তলিয়ে চারা গজিয়ে গেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শিকদার মোঃ মোহায়মেন আক্তার জানান, উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ লক্ষমাত্রা চেয়ে বেশিই হয়েছে। তেমনি ভাবে ফলনও ভালো হয়েছিল। হ ঘর্ণিঝড় অশনি বৃষ্টির কারণে যে সমস্ত বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে সে সমস্ত ক্ষেতের আইল কেটে দ্রুত পানি বের করে দিতে হবে। তা ছাড়া যেসব ক্ষেতে ধান নুয়ে পড়েছে সেসব ক্ষেতের ধান দ্রæত কাটার জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৮৯ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ৩২ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টিতে কেটে রাখা কিংবা পড়ে যাওয়া ধান চারা গজিয়ে কিংবা ঝরে কিছুটা ক্ষতি হবে। তবে যদি বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে কৃষককের ক্ষতির মাত্রা বাড়বে।

ভিডিও…

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here