সবুজদেশ ডেস্কঃ
শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল লম্বা রেসের ঘোড়া। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্মরণীয় টেস্ট অভিষেক। একদম শুরুতে হইচই ফেলে দেয়া পারফরম্যান্স। চট্টগ্রামে টেস্ট অভিষেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে নিয়েই ৮০ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটান মেহেদী হাসান মিরাজ।
দ্বিতীয় ইনিংসে (১/৫৮) আহামরি কিছু করতে না পারলেও ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে পরের টেস্টেই ১৫৯ রানে ১২ উইকেট (৬/৮২ + ৬/৭৭) নিয়ে ম্যাচ জেতানো বোলিং। ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক, রূপকার-স্থপতি বনে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জিতেছিলেন।
এরপর ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম অফ ক্রিকেটে আবার এক টেস্টে ১২ উইকেট (৭/৫৮ + ৫/৫৯) শিকার করেছেন মিরাজ।
মোটকথা, শুরুর প্রথম দুই বছর দেখে মনে হচ্ছিল খুলনার অফস্পিনার কাম মিডল অর্ডার মেহেদি হাসান মিরাজই হবেন বাংলাদেশের স্পিন বোলিংয়ের অন্যতম বড় নির্ভরতা। কার্যকর অস্ত্র।
শুরুর পর কয়েক বছর জ্বলেছেন ভালই। তারপর যত কময় কমছে, ততই বলের ধার কমেছে মিরাজের। এর মধ্যে শেষ কয়কটি ম্যাচে তার বল ঘোরেনি একটুও। বরং সময়ের প্রবাহমানতায় দলে অবস্থানও হয়েছে নড়বড়ে।
এই যেমন গত বছর টিম বাংলাদেশ যে চারটি টেস্ট খেলেছে, তাতে মিরাজের অংশগ্রহণ ছিল না। মানে শেষ বছর একটি টেস্টও খেলা হয়নি। শেষ টেস্ট খেলতে নামা ভারতের বিপক্ষে ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর। কিন্তু ২০২০ সালে দেশের হয়ে একটি টেস্ট ম্যাচেও সুযোগ পাননি এ অফ স্পিনার। একইভাবে ওয়ানডে ফরম্যাটেও দিনকে দিন অবস্থান হয়েছে নড়বড়ে।
গত বছর মার্চে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে সিরিজে তেমন কিছু করতে পারেননি অফস্পিনার মিরাজ। তিন ম্যাচের সিরিজে সাকুল্যে তিন উইকেট জমা পড়ে পকেটে। এদিকে টেস্ট আর ওয়ানডেতে তার নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীও জন্মেছে।
টেস্টে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন তরুণ নাঈম হাসান। আর সীমিত ওভারের ফরম্যাটে মিরাজের শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন আরেক স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান। তবে যেহেতু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার বোলিং সাফল্যটা বেশি, তাই এবার আবার জাতীয় দলে ফেরার জোর তাগিদ মিরাজের কণ্ঠে।
আজ মঙ্গলবার মিডিয়ার সামনে কথা বলতে এসে মিরাজের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘দেখেন দেশে কিংবা দেশের দেশের বাইরে- যেখানেই খেলি না কেন, শেষ তিন-চারটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ কিন্তু আমি এত ভালো করতে পারিনি। তবে এবারের প্রতিপক্ষ যেহেতু ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাই আবার নিজেকে খুঁজে পেতে আশাবাদী।’
কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দেশের মাটিতে তার ট্র্যাক রেকর্ড বেশ ভাল। আর তাই মুখে এমন কথা মিরাজের, ‘আমার জন্য একটা আলাদা অ্যাডভান্টেজ থাকবে, যেহেতু ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসছে এবং আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ওয়ানডে দুটোতেই ভালো করেছি।’
তবে ভাল খেলার আশাবাদ মানেই যে ভাল খেলতে পারবেন বা খেলবেন- এমন নিশ্চয়তা দেননি মিরাজ। তার ভাষায়, এটা নিজেকে ফেরানোর ভালো একটা সুযোগ। তিনি বলেন, ‘সুযোগ পেলে চেষ্টা করব, নিজের পারফরম্যান্সটা ভালো করার জন্য। এবং দিনশেষে দলের সাফল্যে অবদান রাখার জন্য।’
অনেকদিন পর আবার জাতীয় দলের ক্যাম্পে, ড্রেসিং রুম, টিম হোটেল শেয়ার করা যাচ্ছে। আর সবার মত মেহেদি মিরাজও উৎফুল্ল। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন পর একসাথে হয়েছি এবং আমাদের সবাই অনেক উৎফুল্ল খেলার জন্য। বিশেষ করে আমাদের সাকিব ভাইও টিমে ফিরেছেন। এক বছর টিমের বাইরে ছিলেন তিনি। কিন্তু আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট যে করোনার জন্য দীর্ঘদিন খেলা হয়নি। এটা আমাদের বাংলাদেশের জন্য প্লাসপয়েন্ট। আমি মনে করি, আমাদের টিম খুব ভালো একটা পজিশনে আছে। আমাদের সামনে যে সিরিজ আছে, ইনশা আল্লাহ আমরা সেখানে ভালো কিছু করতে পারবো।’