আসন্ন কোরবানির ঈদের সময় সড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে পশুবাহী ট্রাকে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে যানজট নিয়ন্ত্রণে ঈদের আগে ৭ দিন ও ঈদের পর ৭ দিন সুনির্দিষ্ট আগাম তথ্য ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মহাসড়কে যানবাহন না থামানোর অনুরোধও জানানো হয়েছে।

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মোট ৩৩টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সম্প্রতি ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে মহাসড়কে যাত্রী সাধারণের যাতায়াত নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করতে কার্যকর ব্যবস্থা ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ’ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়ে সংশ্লিষ্টদের এ অনুরোধ জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২২ বা ২৩ আগস্ট সারাদেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত সময়ের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, ঈদের সময় ড্রাইভাররা পশু পরিবহনের পর খালি ট্রাকে যাত্রী বহন করে থাকেন। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাকেও যাত্রী বহন করা হয়। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় অপ্রত্যাশিত প্রাণহানি ঘটে। এ প্রেক্ষাপটে কোনো অবস্থাতেই ট্রাকে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের নিচে গতি সম্পন্ন গাড়ি কোনো অবস্থাতেই মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে না।

পুলিশ, র‌্যাব, জেলা প্রশাসন, বিআরটিএ, ট্রাক মালিক ও শ্রমিক সমিতিকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, সব শ্রেণির মহাসড়কে মোটরযান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে আসন্ন ঈদের ১০ দিন আগেই প্রয়োজনীয় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শেষ করতে হবে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও সব নির্বাহী প্রকৌশলীকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছে।

এছাড়া কোরবানির পশু পরিবহন ও বাজারজাত করণে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনালের জন্য আন্তঃসংস্থা সমন্বয়ে তিনটি ভিজিলেন্স টিম গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ টিমগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন, বাসের ছাদ ও ট্রাকে যাত্রী পরিবহন না করাসহ যে কোনো পরিস্থিতি সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে- যানবাহন চালাচলের সুবিধার্থে মহানগরী এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর ও উভয় পাশের অস্থায়ী বা ভাসমান বাজার অপসারণ করতে হবে। মহাসড়কের উপর ধান, পাট, খড়, কাঠ ইত্যাদি শুকাতে দেয়া যাবে না। মহাসড়কে লক্কর-ঝক্কর গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। নসিমন, করিমন, ইজিবাইক জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের অননুমোদিত অ্যাঙ্গেল, বাম্পার, হুক ইত্যাদি অপসারণ করা। নির্ধারিত এক্সেল লোডের অতিরিক্ত পণ্যবাহী মোটরযানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া ও এ বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

সভায় ঈদের সময় সিএনজি স্টেশন সার্বক্ষণিক চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ার উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ঈদের আগের ৪দিন ও ঈদের পরের ৪ দিন সিএনজি স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খেলা রাখতে হবে।

এছাড়া ঈদের আগের ৩ দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, পঁচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্টস সামগ্রী, ওষুধ, কাঁচা চামড়া এবং জ্বালানি বহনকারী যানবাহন এর আওতামুক্ত থাকবে।

এছাড়া ঈদ উপলক্ষে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পোশাক কারখানা ছুটি দেয়া ও খোলা রাখা, বড় ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করা এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর ও পাশে গরুর হাট বসানোর জন্য ইজারা না দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয় চিঠিতে।

লাইসেন্স ছাড়া অনভিজ্ঞ চালক দিয়ে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হবে না বলেও চিঠিতে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here