খন্দকার হাবীব আহসানঃ
নবজাতকসুলভ সবুজ শোভিত পলিমাটির বাংলাদেশটির জন্ম কোনো আকস্মিক ঘটনা ঘটনা নয়। পরাধীনতা, নিষ্পেষণ, নিপীড়নে যখন বাঙ্গালীর স্বপ্ন দাসত্বে রুপ নিয়েছিলো, সেই দুঃসময়ে বাঙ্গালীর মুক্তির ত্রাতা হিসাবে আবির্ভাব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সংগ্রামমুখর স্বাধীন স্বপ্ন সত্ত্বার। সেই সব অন্ধকার দিনে শোষকের নির্যাতন, দমনপীড়ন সর্বদা তুচ্ছ ছিলো শেখ মুজিবের স্বপ্ন সাহসের নিকট। অতঃপর ৭ কোটি বাঙ্গালীর চোখে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন চিত্রায়িত করা অভিভাবক শেখ মুজিব পেরেছিলেন স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিতে।
কাঙ্খিত স্বাধীনতা যখন অর্জিত, বাঙ্গালীর শিরদাঁড়া যখন পরাজিত শক্তির মুখোমুখি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের চোখে তখন নবজাতক বাংলাদেশের আগামীর সোনালী স্বপ্ন। বঙ্গবন্ধু একটু একটু করে বাঙ্গালীর লালিত স্বপ্ন সাধনায় বাস্তবরূপের রঙ্গিন আঁচড় বুলাচ্ছিলেন দূর বা নিকটের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই। পরাজিত শক্তির কাপুরুষতায় তখনও নষ্ট চক্রান্তের বলয় থেকে মুক্তি পায়নি আমাদের বাংলাদেশ। সহজাত আপোষহীন সংগ্রামী শেখ মুজিব তখনও কল্পনা করেননি এই বাঙ্গলীর কেউ ঘৃণ্য চক্রান্ত করতে পারে ৭ কোটি বাঙ্গালীর স্বপ্ন সাধনার অভিভাবকের বিরুদ্ধে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের সীমাহীন বর্বরতা দেখিয়ে পরাজিত শক্তির ক্ষমতালোভী কাপুরুষ প্রেতাত্মারা সপরিবারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। পিতার রক্তে রক্তাক্ত হয় স্বপ্নের বাংলাদেশ। বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় ৭ কোটি বাঙ্গালীর ভালবাসার সুতায় বোনা বাঙ্গালীর হৃদয়টি। গাতকরা ক্ষমতার কেন্দ্রে আস্তানা গেড়ে আকস্মিক আঘাতে দিশেহারা নবজাতক বাংলাদেশকে চক্রান্তের কক্ষপথে ঘুরাতে থাকে পরাজিত শক্তির ইশারায়। স্বপ্নের রাজপ্রাসাদ থেকে হঠাৎই ছুড়ে ফেলা হয়, স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। পিতা হত্যার বিচার বন্ধে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইনও জারি করা হয়। আবারো নতজানু হয়ে মানবেতর দিন কাটে বাংলাদেশের।
মৃতপ্রায় বাংলাদেশকে পুনঃজাগরণের প্রয়াসে ১৯৯৬ এর নির্বাচনে বাঙ্গালীর চোখে আবার দৃশ্যমান হয় অপ্রতিরোধ্য সাহসী রক্তের কাঙ্খিত উত্তরাধিকার শেখ হাসিনার মুখাবয়ব। জনগণ ভোটাস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে, সকলের কন্ঠে বেজে ওঠে অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নের স্লোগান, নেতৃত্ব দিতে থাকেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিঁনি ১৫ আগস্টের খুনিদের স্মরণ করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধুর রক্তের স্রোত প্রতিটি বাঙ্গালীর প্রতিশোধের সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। পরিতাপের বিষয়, খুনিরা ছায়াতলে থেকে যায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির কন্টকবৃক্ষের। বরং ২০০৪ সালের এমনই আগস্টে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করে খুনীদের পৃষ্ঠপোষকরা।
পুনরায় ২০০৬ সালে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় এলে বাস্তবায়িত হয় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের চুড়ান্ত কার্যক্রম। বাঙ্গালী জাতির গ্লানির ভার কিঞ্চিত মুক্ত হয় খুনিদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলে। ১৯৭৫ এর আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশকে কঙ্কালসার করে শকুনের মত বারবার ছিড়ে খাওয়া বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা অব্যাহত চেষ্টা চালান পুনরায় জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখাতে। রক্তেভেজা এই পলিমাটি আর অশ্রুগঙ্গাকে রুপ দিতে থাকেন সবুজের আবহে।
আগস্ট বাঙ্গালীর প্রতিটি রক্তকণাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আমরা পিতা হত্যাকারী ঘৃণ্য জাতি। ৭ কোটি বাঙ্গালীর স্বপ্নসাধক আর স্বাধীনতার মহাকাব্যের স্রষ্টার অপূরণীয় স্বপ্নের স্বপ্নভঙ্গের মাস আগস্ট। শ্রদ্ধা আর চিরস্মরণে শোকে বিহ্বল থাকার মাস আগস্ট।
আবারো বঙ্গবন্ধুর সাহসী তনয়া শেখাচ্ছেন সহস্র বেদনা ইস্পাতকঠিন হৃদয়ে চেপে কিভাবে লিখতে হয় উন্নয়নের মহাকাব্য। পিতার স্বপ্ন কিভাবে ক্রমাগত সঞ্চারিত হচ্ছে কন্যার চোখে, তা বাঙ্গালী মুগ্ধ নয়নে দেখছে একটি ডিজিটাল, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের লালিত চেতনার ক্রমাগত উজ্জ্বল ছবিতে, যে ছবির বাহক আজ ও আগামীর তারুণ্য, যাদের চোখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন।
লেখক : সাবেক-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ