ঢাকাঃ

‘এর আগেও বুয়েটে বিভিন্ন হলে এবং আমাদের এই হলেও শিবির বলে রুমে ঢুকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এটা আগেও হয়েছে, বেশ কিছুদিন হয়েছে। সেরকম কিছু আমরা ভেবেছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো পুলিশকে আগেই খবর দেয়া আছে। এখন মারধর করে পুলিশের হাতে দেয়া হবে।’

‘দেখেন আমি আমার আরো ফ্রেন্ডদের কাছে যেটা শুনেছি, ওর কান্নার শব্দ তারা পেয়েছে। কিন্তু কেউ এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়নি।’

রোববার দিনগত রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদকে শেরে বাংলা হলের তার নিজের রুম থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে এভাবেই বলছিলেন পাশের রুমে থাকা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আশরাফ-উল-আলম।

আশরাফ-উল-আলম বলেন, ‘তারা এর আগেও অনেককে শিবির বলে তুলে নিয়ে এমন রেগিং করেছে। আমরা আবরারের বিষয়টি সেভাবেই ভেবেছিলাম। কিন্তু ঘটনাটা যখন অন্যরকম হয়ে গেল, তখন তারাও হয়তো কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। সবশেষ বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল।’

আবরার ফাহাদ থাকতো ১০১১নং রুমে। আর তাকে নির্যাতন করা হয়েছে ২০১১নং রুমে। এ ঘটনার বর্ণনা দেয়া আশরাফ-উল-আলম থাকেন একই হলের ২০০৯নং রুমে।

যেভাবে আবরারকে মারধর করা হয়েছে তাতে তার অনেক বেশি চিৎকার করে তার কান্নাকাটি করার কথা, আপনারা এটা পাশের রুমে থেকে কেন টের পেলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফ বলেন, ‘এখানে যে আগাইয়া যাইতো তারই অবস্থা আসলে ভালো হইতো না। এজন্য পার্সোনালি হয়তো আর কেউ সাহস পায়নি। আর তারাও (হত্যাকারীরা) সেভাবেই এখানকার পরিবেশকে ডমিনেট করে। যাতে কেউ আগাই আসার সাহস না পায়।’

‘এর আগেও একদিন আমাদের একজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই ঘটনায় কয়েকজন তাকে নিতে গেলে তাদেরকেও পেটানো হয়েছে। সেটা শিবির সন্দেহে একজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে যারা এগিয়ে গিয়েছিল তারাও মারধরের শিকার হয়।’

তার ভাষ্য, ‘সেদিন মারধরের ঘটনায় আহত ছাত্রের বিষয়ে আমরাতো জানতাম সে শিবির কিনা। আসলে সে শিবির ছিল না। এজন্য অনেকেই তাকে উদ্ধারের জন্য গিয়েছিল, যাতে নিয়ে যেতে না পারে। এজন্য গেটও লাগিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তারাও সেখানে গিয়ে মারধরের শিকার হয়। এজন্য আসলে কেউ এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায় না।’

এক প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করে ২০০৯নং রুমের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একটা লোককে মারধর করার সময় যে সাউন্ড হয় সেরকম কোনো সাউন্ড আমরা পাইনি। দেখুন আমাদের রুমটা একটা রুম পরেই, অথচ আমি রাত আড়াইটা পর্যন্ত জাগা থেকেও তাকে মারধরের কোনো শব্দ পাইনি।’

হত্যার সঙ্গে জড়িত তিন শিক্ষার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওরা তিনজন পলিটিক্যাল তো মাঝে মধ্যে মিটিং করতে এখানে বসে আর কি। ওই রাতে আমি দেখেছি ওখানে অনেক জুতো ছিল। ওই রাতে আমি যখন রাত নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার দিকে ডাইনিংয়ে যাই তখন একবার অনেক জুতো দেখতে পাই। আমি একবার ওই রুমের পাশে বাথরুমে গিয়েছিলাম। সেটা সাড়ে ১০টার পৌনে ১১টা হবে।

ওই ছাত্র বলেন, ‘আসলে বলতে কি আমি চিল্লাচিল্লি তো দূরের কথা গালাগালি শব্দও পাইনি। আমি একটা রুম পরে আমার রুমটায় হেডফোন লাগিয়ে আমি পড়াশোনা করছিলাম। এসময় আমার দরজার সামনে বারান্দাটায় আলো ছিল না। এ কারণে কে বা কারা হাঁটাহাঁটি করেছে সেটাও বলতে পারবো না।’ 

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here