ঢাকাঃ

কাউন্সিলের কারণে আবারও আলোচনায় এসেছে দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। 

রোববার (১৫ নভেম্বর) হেফাজতের সদর দফতর বলে খ্যাত চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত কমিটি নিয়ে সংগঠনটিতে শুরু হয়েছে নতুন টানাপোড়েন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারীরা সদ্য ঘোষিত কমিটি তথা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী অনুসারীদের মূল ধারায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। 

এতে কোনো প্রকার সমঝোতা না হলে অচিরেই ভাঙ্গনের মুখে পড়বে সংগঠনটি এবং পদ বঞ্চিত নেতারা পাল্টা কমিটি গঠনের হুমকি দিয়েছেন।   

এক্ষেত্রে হেফাজত ভাঙ্গনের দায় দায়িত্ব কাউন্সিল আয়োজকদের ঘাড়ে উঠবে বলে মনে করছে হেফাজতের একাংশের নেতারা। যদিও এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত তাদের কোন কর্মসূচির ঘোষণা আসেনি।

সোমবার বিকালে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী সঙ্গে কথা হয়। 

এ সময় তিনি হেফাজতের সদ্য ঘোষিত কমিটি বিশেষ মহলের ইঙ্গিতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আত্মীয়করণ ও দলীয়করণের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটির মনোনীত ১২০ জনের মধ্যে অধিকাংশ নেতাই বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (কাসেমী) ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দায়িত্বশীল। 

বাকী যারা আছেন তারা জুনায়েদ বাবুনগরীর আত্মীয়-স্বজন।

মঈনুদ্দীন রুহীর দাবি, বিএনপি-জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকে হেফাজতের নতুন কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়েছে। তার সংগঠন থেকে হেফাজতের নতুন কমিটিতে ৩৪ জন বিভিন্ন পদে স্থান পেয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত মজলিসের অন্তত ২০-২২ জন কেন্দ্রীয় নেতা হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। দল দু’টির একটি বর্তমানে একক রাজনীতি করলেও খেলাফত মজলিস বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। অন্যান্যরা হলেন বাবুনগরীর আত্মীয়-স্বজন ও তার অনুসারী।

যদিও এসব অভিযোগ মানতে নারাজ সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটির নেতারা। তাদের দাবি, হেফাজতে ইসলামের গঠনতন্ত্র অনুসারে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোন দল বা গোষ্ঠিকে খুশি করতে এ কমিটি গঠিত হয়নি। 

হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী যুগান্তরকে বলেন, ইসলামী নেতৃবন্দ দ্বীনি বিষয়কে সামনে রেখে সারা দেশের বিজ্ঞ আলেমদের নিয়ে নেতৃত্বের মোহ ত্যাগ করে নতুন কমিটি গঠন করেছে। যাদের সদ্য ঘোষিত কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তারা ছিল বিতর্কিত ও সমালোচিত এবং তাদের কারণে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের দেশের নানা ইস্যূতে খেসারত দিতে হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, হেফাজতে ইসলামের ব্যাপকতা, সর্বজনীন ইমেজ ক্ষুণ্নকারীদের হয়তো জায়গা হয়নি। তার মানে এ নয় কোন মহলের ইঙ্গিতে বা ইশারায় এ কমিটি গঠিত হয়েছে। দেশের শীর্ষ কওমি আলেমদের নিয়ে গঠিত হেফাজতের নতুন কমিটির আলেমদেরকে ঐক্যবদ্ধ রেখে ইসলামের হেফাজত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়াই হবে আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

এছাড়া ভিন্ন পথে কোনও কিছু করার ষড়যন্ত্র করা হলে দেশবাসী তা রুখে দেবে বলে সতর্ক করেন তিনি। 

আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, কোন গোষ্ঠী যদি আবেগতাড়িত হয়ে এসব ষড়যন্ত্রের পিছনে ছোটাছুটি করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো-আপনারা আবেগের বশবর্তী হয়ে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি হয় এমন কোন কাজে জড়াবেন না।

অন্যদিকে মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা মনে করি, হেফাজতের মূল প্রতিষ্ঠাতা, উদ্যোক্তা, যাদের শ্রম ও ঘামে হেফাজতে ইসলাম এই পর্যন্ত এসেছে, তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ও মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চক্রান্ত কওমী অঙ্গনের জন্য অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।

আগামীর কর্মপন্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা আরও দু’চারদিন সময় নেবো। এরমধ্যে করণীয় ঠিক করবো। করণীয় নিয়েই বৈঠক চলছে। এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বৈধ কমিটি সময়ের ব্যাপার। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই আলোচনা চলছে। 

এসবের প্ররিপেক্ষিতে যদিও দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত আলেম আল্লামা শফির হাতে গড়া হেফাজতে ইসলাম ভেঙ্গে যায় সেক্ষেত্রে ভাঙ্গনের দায় দায়িত্ব কাউন্সিল আয়োজকদের নিতে হবে বলে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাকালীন এ নেতা হুশিয়ার করেন।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী মারা যান। এরপর থেকেই আমীর নির্বাচন নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়। 

গত শনিবার ঢাকায় ও চট্টগ্রামে পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তোলে আল্লামা শফীর অনুসারী একটি অংশ। 

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রয়াত আল্লামা শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন। আর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তাদের কাউকেই সম্মেলন স্থলে দেখা যায়নি।

প্রসঙ্গত, রোববার হেফাজতের কাউন্সিলে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির ১২০ জন সদস্য মনোনীত হয়েছেন। অবশিষ্ট ৩১ জন সদস্য পরবর্তীতে যুক্ত করবে হেফাজতের নতুন কমিটি। 

এ কমিটিতে আল্লামা শফীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত অনেকেই বাদ পড়েছেন। এমনকি শফীপুত্র হেফাজতের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীকে বাদ দেয়া হয়েছে। তাকে সম্মেলনে দাওয়াত দেয়া হয়নি।

এর মধ্যে বর্তমান কমিটির হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা সলিমুল্লাহ ও ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত আমিনীসহ হেফাজতের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাকে পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here