বিশেষ প্রতিনিধি, শৈলকুপা থেকে ফিরেঃ

ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌর নির্বাচনে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও স্বতন্ত্র (আ’লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থীর গাড়ি ভাংচুরের মধ্য দিয়ে শনিবার নির্বাচন শেষ হয়েছে। তবে বড় ধরণের কোন অপ্রীকর ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে নারী ভোটাররা দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ভোট দেবার জন্য অপেক্ষা করে। দুপুর পর পুরুষ ভোটাররা ব্যাপক হারে ভোট দিতে দেখা যায়।

দুপুর ১২টার মধ্যে ৬৩% ভোট পোল হওয়ার কথা জানান কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসররা। সকালে শৈলকুপা পৌর এলাকার শাহী মসজিদ এলাকার ভোট কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ঢুকতে বাধা দেয়। খবর পেয়ে প্রশাসনের লোকজন পরিবেশ ফিরিয়ে আনে।

শৈলকুপা পৌরসভায় মোট ভোটার ছিল ২৮ হাজার ৬৩২। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ১১৩ ও মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৫১৯ জন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিভিন্ন কেন্দ্রে ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, শহরে দুই প্লাটুন বিজিবি, ৪শ’ পুলিশ সদস্য এবং ১৩৫ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করার কারণে বড় ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপুর্ন হওয়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।

আ. লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর, সমর্থককে কুপিয়ে আহত

ঝিনাইদহের শৈলকূপা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তৈয়েবুর রহমানের গাড়ি ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ শনিবার সকালে পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের ঝাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তৈয়েবুর রহমান কেন্দ্রের ভেতরে আটকে পড়েন। হামলাকারীরা গাড়ির কাঁচ ভেঙে ফেলে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রকাশ্যে ভোটারদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নৌকায় ভোট নেওয়া হচ্ছে এমন কথা শুনে ১৪ নং ঝাউদিয়া কেন্দ্রে এসেছিলাম। নৌকার প্রার্থী কাজী আশরাফুল আলমের গুণ্ডাবাহিনী হামলা করে আমার গাড়ি ভাঙচুর করেছে। প্রাণ রক্ষার্থে আমি কেন্দ্রের ভেতরে আশ্রয় নিই। স্ট্রাইকিং ফোর্স এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।’

কাজী আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। দলীয় কোনো নেতাকর্মীকে বিশৃঙ্খলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাডিং অফিসার শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে কেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা তৈয়েবুর রহমানকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’

সকালে ভুলটিয়া এলাকায় আলাউদ্দিন নামে তৈয়েবুর রহমানের এক সমর্থককে কুপিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। আলাউদ্দিন খুলনা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আলাউদ্দিন বলেন, ‘ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভুলটিয়া এলাকায় পৌঁছালে কাউন্সিলর প্রার্থী মন্নু হোসেনের নেতৃত্বে ১০ থেকে ২ জন আমাকে আক্রমণ করে। তারা চাপাতি দিয়ে আমার মাথায় কোপ দেয়।’

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহনেওয়াজ বলেন, ‘তার মাথায় পাঁচটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। আঘাত গুরুতর। রোগী শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।’

কাউন্সিলর প্রার্থী মন্নু হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

গোপন কক্ষে গিয়ে ভোট দিচ্ছেন নৌকার এজেন্ট!

দুপুর দুইটা। বাইরে নারী ভোটারদের লাইন। ভোটকক্ষে চলছে ভোটগ্রহণ। কেন্দ্রের কক্ষে গিয়ে চোখে পড়ল, এক এজেন্ট গোপন কক্ষে ভোটারের সঙ্গে অবস্থান করছেন।

ঘটনাটি ঝিনাইদহের শৈলকূপা পৌরসভার ছয় নম্বর কেন্দ্র শৈলকূপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের। সেখানে আজ শনিবার শৈলকূপা পৌর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে।

ভোটারদের সঙ্গে গোপন কক্ষে প্রবেশ করছেন নিজেকে নৌকার এজেন্ট পরিচয় দেওয়া সেই নারী (নীল জামা পরিহিত)।

প্রায় ২০ মিনিট ওই কক্ষে নজর রাখেন এই প্রতিবেদক। ওই এজেন্ট নিজের নাম বলেন পুতুল খাতুন। তিনি নিজেকে নৌকার এজেন্ট বলে পরিচয় দেন।

দেখা গেছে, তিনি এজেন্টদের নির্দিষ্ট স্থান থেকে উঠে কক্ষের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন। কখনো কখনো গোপন কক্ষেও প্রবেশ করছেন। এরপর আ’লীগের এক কর্মী এসে এই প্রতিবেদককে বলেন আ’লীগের মেয়র প্রার্থী বাইরে আপনাদের ডাকছে। তার সাথে গিয়ে মেয়র প্রার্থীর কাছে জানতে চাওয়া, আপনি আমাদের ডাকছেন? তখন উত্তরে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী বলেন, আমি আপনাদের ডাকবো কেন?

এ বিষয়ে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মাসুদ আহমদ বলেন, ‘ভোটকক্ষে কোনো প্রার্থীর এজেন্ট স্থান ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারেন না। আপনি বললেন, আমি বিষয়টি দেখছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here