নাটোরঃ
নৌবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় সাত লাখ টাকার বিনিময়ে শরীরচর্চার শিক্ষক হিসেবেও চাকরি নেন তিনি
নাটোরে সরকারি বিধি লংঘন করেএক ব্যক্তি একই সাথে সরকারের নৌ বাহিনী এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম মোনায়েম সরকার। তার বাড়ি লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া ইউনিয়নে।
জানা গেছে, দুইটি চাকরির খবর প্রকাশিত হলে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির পক্ষে অপর এক যুবক বিদ্যালয়ে প্রক্সি দিচ্ছেন। যদিও এমপিও শিটে অভিযুক্ত ব্যক্তির নামই রয়েছে।
ওয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং স্থানীয়দের অভিযোগ, মোনায়েম সরকার নৌবাহিনী সদর দপ্তরে একটি পদে চাকরি করেন। তিনি সরকারি বেতন নিয়মিত তোলেন। একইসাথে ২০১৬ সালে উচ্চ বিদ্যালয় শরীরচর্চা শিক্ষক পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে তিনি আবেদন করেন। কমিটিকে সাত লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়ার বিনিময়ে তিনি শরীরচর্চা শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। বেশ কিছুদিন এমপিওভুক্তির বেতন তোলেন তিনি। এরপর নৌবাহিনীতে তার চাকরির কথা জানাজানি হলে তিনি বিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দেন কিন্তু এমপিও শিটে সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী তার বেতন আদেশ বহাল থাকে।
স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় এবং ম্যানেজিং কমিটির সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকায় এখনো পর্যন্ত তার নাম এমপিও শিটে রয়েছে তবে তার হয়ে বিদ্যালয় প্রক্সি দিচ্ছেন স্থানীয় মনজুর হোসেন এর ছেলে কলেজে মাস্টার্স পড়ুয়া সবুজ হোসেন। এতথ্যটি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর আলী ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রঞ্জু আহমেদ।
এপ্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর আলী জানান, মোনায়েম সরকার নৌবাহিনীতে চাকরি করেন প্রথমে তারা বিষয়টি জানতেন না। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। তার এমপিওভুক্তি হওয়ার পর ছয়মাস তিনি বেতন তোলেন। দুই জায়গায় চাকরি বিষয়ে জানা গেলে ২০১৭ সালের জুন মাসে তাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিস দেয়া হয়। এরপর জুলাই মাস থেকে তিনি বিদ্যালয় আসেননি। তার বেতন উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।
পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা চিন্তা করে সভাপতি রঞ্জু আহমেদের ভাতিজা সবুজ হোসেনকে ওই বিষয়ে বিদ্যালয়ে কাজ করতে অনুরোধ করেন সভাপতি তবে তার সম্মাননা বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি প্রদান করেন বলেও জানান প্রধান শিক্ষক। তবে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে মোনায়েম এর কাছ থেকে সাত লক্ষ টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রঞ্জু আহমেদ টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, “সম্প্রতি মোনায়েম সরকার তাকে জানিয়েছেন, অল্পদিনের মধ্যে তিনি নৌবাহিনীর চাকরি ছেড়ে শিক্ষক পদে যোগদান করবেন।”
এবিষয়ে মোনায়েম জানান, “২০১৬ সালে তিনি ঢাকালীগে খেলা অবস্থায় নৌবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে যোগ দেন তিনবছর পর পর চুক্তি নবায়ন হয়।” নন- কনটিনিউয়াস হিসেবে আগামী ডিসেম্বরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষে তিনি বিদ্যালয়ে যোগ দেবেন বলেও জানান।
বিষয়টি সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বাণীন দ্যূতি জানান, “বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে মোনায়েমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ জানান, “একইসাথে সরকারি দুইটি চাকরি করা সরকারি নিয়ম ভঙ্গের সামিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।” তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও আশ্বাস দেন।