ঢাকাঃ

দুই হাজার দুশ’ টাকা দামের কম্বল কেনা হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার টাকায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ঢাকা ডেন্টাল কলেজের ২০১২-২০১৩ আর্থিক বছরের ক্যাশ বুক, বিল ভাউচার এবং অন্যান্য নথিপত্র পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। খোদ সরকারের অডিট বিভাগ এই অনিয়মের আপত্তি জানিয়েছে। দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ওই টাকা আদায় করতেও বলা হয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়—২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ডেন্টাল কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতিটি কম্বল ৬ হাজার ৫০০ টাকা হারে ২৯৪টি কম্বল কেনা বাবদ মেসার্স সৌরভ এন্টারপ্রাইজকে ১৯ লাখ ১১ হাজার টাকা পরিশোধ করে। যদিও প্রতিটি কম্বলের সার্জিক্যাল রিক্যুইজিটস (এসআর) রেট ২২০০ টাকা। কিন্তু প্রতিটি কম্বল ৪৩০০ টাকা বেশি দরে ৬৫০০ টাকা করে কেনা হয়। ফলে ২৯৪টি কম্বল কিনতে গিয়ে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২০০ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই লেনদেনের সময় ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ডা. এসএম ইকবাল হোসেন। কম্বল কেনার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল-২ অধিশাখার জারি করা মেডিক্যাল অ্যান্ড সার্জিক্যাল রিক্যুইজিটস (এমএসআর) সামগ্রী মূল্য তালিকার আদেশ অনুযায়ী প্রতিটি কম্বলের বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২২০০ টাকা। কিন্তু বেশি দামে কেনার পক্ষে কর্তৃপক্ষের কাছে সংশ্লিষ্ট টেন্ডার ডকুমেন্টস টিওসি রিপোর্ট, অ্যানুয়াল প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান এবং সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রদানের কোনও প্রমাণ পায়নি অডিট অধিদফতর।

যদিও অডিট অধিদফতরকে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানায়—‘২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর ও ৪ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ত্রিপক্ষীয় সভায় জবাব প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে দরপত্রের মাধ্যমে মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। এজন্য উন্মুক্ত দরপত্রও আহ্বান করা হয়। বলা হয়, ২০১১ সালে প্রতিটি কম্বলের দাম ২২০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমান বাজার দামের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এবং ওই দামের কম্বল মানসম্মতও নয়। এ কারণে সাড়ে ছয় হাজার টাকা করে মানসম্মত কম্বল কেনা হয়েছে।

কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের এই জবাব অডিট অধিদফতরের কাছে মোটেও সন্তোষজনক মনে হয়নি। বরং তারা মনে করে, কম্বলগুলো বেশি দামে কেনা হয়েছে। সরবরাহকারীকে অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

এরপর আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেয় অডিট অধিদফতর। কিন্তু জবাব না পাওয়ায় ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ফের তাগিদ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর এবং ৪ ডিসেম্বর এনিয়ে দুটি ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আবারও ডেন্টাল কলেজকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এবারও জবাব পায়নি অডিট অধিদফতর।

জানা গেছে, অডিট সুপারিশে কম্বল কেনার পেছনে অতিরিক্ত পরিশোধ করা টাকা আদায় এবং সরকারি কোষাগারে জমা করে প্রমাণসহ অডিটরকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা ডেন্টাল কলেজের (ডিডিসি) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে নেই। এ ধরনের অনিয়ম যদি হয়ে থাকে, সেটি আমার মেয়াদকালের আগে হয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’

কেনাকাটার সময় দায়িত্বে থাকা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা.এসএম ইকবাল হোসেন এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে গত ২৫ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার ফোনে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। 

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here