জাহিদ হাসান, যশোরঃ
* ১০২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বরাদ্দ ৫৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা
* দুটি ফুলের চারার একটি ফুল বাগানের ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫ হাজার টাকা
* ফুল বাগানের অস্তিত্ব নেই অথচ সংস্কার দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে
যশোরের বাঘারপাড়ার দয়ারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডে (স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট-প্ল্যান) ৭০ হাজার টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। ব্যয়ের বিবরণে দেখা গেছে ফুল বাগান সংস্কার বাবদ পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এই স্কুলের সামনে রয়েছে দুইটি ফুলের চারার একটি ফুল বাগান। এ বাগানের তিন পাশ ২১ হাত প্লাষ্টিকের নেট দিয়ে ঘেরা। এখানে স্লিপ ফান্ডের ইউনিট প্রতি খরচ দেখানো হয়েছে ৫ হাজার টাকা।
পূর্ব পাইকপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট বাজেটে ৭৩ হাজার ৫শত টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বিদ্যালয়ের ২৫০ জন ছাত্র ছাত্রীর one day one word note book মাথাপিছু ২৫ টাকা হিসাবে ৬ হাজার ২’শ ৫০ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসারে আদেশ ছিল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে নোট বুক বিতরন করা। কিন্তুু ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে রয়েছে আরো অনেক অভিযোগ।
সদুল্যাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫১ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যয়ের খাতে ফুলের বাগান সংস্কার বাবদ তিন হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে অথচ এখানে বাগানের কোনো অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাইনি।
জুন মাসের আগে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এভাবেই প্রতিবছর প্রায় একই উপকরণ দেখিয়ে অথবা নিজেদের তৈরি একটু ভিন্ন ধরনের ক্রয় ভাউচার দেখিয়ে বাঘারপাড়া উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে অধিকাংশ চলছে স্লিপ ফান্ডের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। চলতি অর্থবছরসহ গত দুই-তিন বছরের পিইডিপি-৪ এর আওতার স্লিপ ফান্ডের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ ওঠেছে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিদের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৪র্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় চলতি বছর উপজেলার ১০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ৫৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব টাকায় স্ব-স্ব বিদ্যালয়গুলোতে উপকরণ হিসেবে এবার ডিজিটাল হাজিরা, শিশুদের ডায়রী , জাতীয় শোক দিবস ও স্বাধীনতা দিবস এর ব্যানার, মেধাবী পুরস্কার , জাতীয় দিবস পালন, বার্ষিক ক্রীড়া, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, দরজা, জানালা ও চেয়ার মেরামত, অভিযোগ বাক্স সাইন বোর্ড, কার্পেট ক্রয়, শিশুদের খাতা কলম, ফুলের বাগান সংস্কার , মা সমাবেশ, নীতি বাক্যের ব্যানার তৈরি, ফুটবল ক্রয় বিভিন্ন উপকরণ ক্রয়ের কথা থাকলে ও পরিপূর্ণভাবে না করে নয়ছয় করা হয়। নামে মাত্র কিছু উপকরণ ক্রয় দেখিয়ে প্রতিবছরই শিক্ষক ও সভাপতিদের যোগসাজসে নিজেদের তৈরি করা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, গতবছরের কিছু উপকরণ ক্রয় করা দেখিয়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মতো সম্পন্ন কাজ করা হয়নি। এ ছাড়াও পুরাতন কাজগুলোকে নতুন কাজ বলে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। শিক্ষকদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা প্রতিবছরই স্কুলের চাহিদামতো উপকরণ ক্রয় করেন। দাপ্তরিকভাবে সুষ্ঠু তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে দয়রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুপ্ত কুমার সাহা জানান, আমি সভাপতি এবং শিক্ষকদের সাথে নিয়ে নারিকেলবাড়িয়া বাজার থেকে ৯০ টাকা দরে ৫০ ফিট নেট ক্রয় করেছি। আমার মোট টাকায় খরচ হয়েছে।
পূর্ব পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিটিএ (শিক্ষক অভিভাবক কমিটি) কমিটির সভাপতি মদন দেবনাথ জানান, স্লিপ বাস্তবায়নে আমার কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে বলে আমি জানি, কিন্তু আমার স¦াক্ষর পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক কে.এম.তানভীর আহম্মেদ বলেন, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ডায়েরি বাবদ টাকা নিয়েছি এটা সত্য । তবে আমাকে অফিস থেকে টাকা নিতে বলছিল পরে স্লিপের টাকা আসলে সমন্বয় করে নিয়েছি। ছাত্রছাত্রীদের টাকা ফিরিয়ে না দিয়ে খাতা দিয়ে দিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত ) রোকনুজ্জামান জানান, স্লিপের টাকায় মালামাল ক্রয়ে যদি অসংঙ্গতি পাওয়া যায় তাহলে সে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।