সবুজদেশ রিপোর্টঃ

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যার আসামি টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাটির এজাহারভুক্ত সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

রোববার চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিশেষ ও মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

একইসঙ্গে আদালত প্রদীপের জামিন আবেদনও নামঞ্জুর করেছে।

দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামির পক্ষে আগের দিন জামিন আবেদন করা হয়েছিল। ওই আবেদনের শুনানি শেষে আজ আদালত তা নামঞ্জুর করেন। আমরা আসামির এজাহারভুক্ত সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করেছি, আদালত তা মঞ্জুর করেছেন, প্রসেস হয়ে গেছে। এখন সেই সম্পত্তি জব্দে আর কোনো বাধা নেই।’

মামলার এজাহারে বলা হয়, নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ি প্রদীপ কুমার দাশ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য শ্বশুরের নামে নির্মাণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে ওই বাড়িটি প্রদীপ দাশের শ্বশুর তার স্ত্রী ‍চুমকি কারণের নামে দান করেন। দানপত্র দলিল হলেও বাড়িটি প্রদীপ দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণ কর্তৃক অর্জিত বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

আয়কর রির্টানে আসামি চুমকি কারণের কমিশন ব্যবসা এবং বোয়ালখালী উপজেলায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া পাঁচটি পুকুরে মাছের ব্যবসার যে আয় দেখানো হয়েছে তাও স্বামী প্রদীপ দাশের অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের উদ্যেশ্যে ভুয়া ব্যবসা প্রদর্শন করে দেখানো হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করে দুদক।

এই মামলার আরেক আসামি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি পলাতক আছেন।

রোববার আদালতে জামিন শুনানি হলেও আসামি প্রদীপ কুমার দাশকে আদালতে আনা হয়নি। তিনি কক্সবাজার কারাগারে আছেন বলে দুদকের আইনজীবী জানিয়েছেন।


এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রামে দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

সেদিনই আসামির পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল।

গত ২৩ অগাস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে ওসি প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ওসি প্রদীপের সঙ্গে তার স্ত্রী চুমকি কারণকেও আসামি করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর ৪(২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়।

গত ঈদুল আজহার আগের রাতে (৩১ জুলাই) কক্সবাজারের টেকনাফের কাছে বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

ওই ঘটনার পর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারের হাকিম আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেখানে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলিকে ১ নম্বর এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর আসামি করা হয়।

মামলা হওয়ার পর ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য ৬ অগাস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর প্রদীপকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশে বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ ও কক্সবাজারের এসপি এবিএম মাসুদ হোসেনসহ আটজনের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here