ঢাকাঃ

করোনা প্রার্দুভাব বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত বাড়ছে। রাজস্ব আহরণ আর সেবা প্রদানের জন্য খোলা রয়েছে আয়কর বিভাগের সব কর অঞ্চল খোলা রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনা মহামারির মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেছেন। বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিনই কোন না কোন কর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনা মহামারি মোকাবেলা, সংক্রমণ রোধ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুরক্ষায় আটটি চাহিদা ও প্রস্তাব করেছে কর কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যাকসেস এমপ্লয়ীজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (কেন্দ্রীয় কমিটি), ঢাকা (বিটিইডব্লিউএ)।

## করোনায় আয়কর বিভাগে এক উপকর কমিশনারসহ মারা গেছেন তিনজন

## অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপনের অনুরোধ

## আক্রান্তদের ব্যয়ভার বহন, নমুনা পরীক্ষা হাসপাতালের সাথে চুক্তির অনুরোধ

## মৃত্যুবরণ করলে ক্ষতিপূরণ ও সুরক্ষা সামগ্রী প্রদানের অনুরোধ

সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর এ সংক্রান্ত একটি আবেদন দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ও কর পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম আকাশ সই করা আবেদন দেওয়া হয়। সকল কর অঞ্চলসমূহের কর্মরত কর্মচারীদের করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) এর ব্যাপক প্রাদুর্ভাবজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংক্রমনের বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের অংশ হিসেবে এ চাহিদা ও প্রস্তাব করা হয়।

আটটি চাহিদা ও প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য একটি করে অ্যাম্বুলেন্স ও ১০টি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বরাদ্দ করা, একটি করে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা, নমুনা পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতালের সাথে চুক্তি করা, আক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা, আক্রান্ত হয়ে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী মৃত্যুবরণ করলে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যায় সরকারি অনুদানের প্রজ্ঞাপন জারি করার ব্যবস্থা করা, প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত মাস্ক, পিপিইসহ পর‌্যাপ্ত পরিমাণ মেডিকেল ইকুপমেন্ট সরবরাহের ব্যবস্থা করা এবং প্রতিটি কর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করা।

আবেদনে বলা হয়, ‘বৈশ্বিক মহামারিজনিত রোগ করোনাভাইরাস এর ব্যাপক প্রার্দুভাবজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও সীমিত আকারে আয়কর অফিসসমূহ খোলা রেখে রাজস্ব আহরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন আয়কর বিভাগের সকল পর‌্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো যে, সরকারের রাজস্ব ভান্ডারকে পরিপূর্ণ করার লক্ষ্যে আয়কর বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’

আরো বলা হয়, ‘ইতোমধ্যে আয়কর বিভাগের তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিবার-পরিজনসহ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ও নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সমগ্র আয়কর বিভাগে অশুভ আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় রাজস্ব আহরণ এর কার‌্যক্রম চলমান, উৎসাহ ও আগ্রহশীল করার লক্ষ্যে বিটিইডব্লিউএ এর পক্ষ হতে আটটি চাহিদা ও প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব চাহিদা ও প্রস্তাবসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।’

বিটিইডব্লিউএ হিসাব মতে, আয়কর বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত তিনজন মারা গেছেন। এর মধ্যে উপকর কমিশনার সুধাংশু কুমার সাহা ৮ জুন মারা গেছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুক কুমার দাস নামের একজন নিরাপত্তা প্রহরী ২২ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এছাড়া মোহাম্মদ সাব্বির আহমেদ নামে একজন উচ্চমান সহকারী ১৫ জুন করোনায় মারা গেছেন। তিনি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুর পর তার নমুনা পজেটিভ আসে।

এ বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি ও কর পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম আকাশ বলেন, তিনজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আরো ৩০-৪০ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জেনেছি। বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবারও আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা খোঁজ রাখছি। মূলত রাজস্ব আহরণ আর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই সহকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনা মহামারি মোকাবেলা করে রাজস্ব আহরণের স্বার্থে আমাদের প্রস্তাবনাগুলো যৌক্তিক। আমরা আয়কর বিভাগের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here