বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার সাবেক দুই আলোচিত ওসি মিজানুর রহমান খান ও মোঃ ইউনুচ আলী এখন কেমন আছেন? তারা দুইজন কালীগঞ্জ থানায় দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, ভয়-ভীতি ও মিথ্যা মামলা দায়েরসহ নানা বিষয়ে তারা দুজনই বেশ আলোচিত ছিলেন। তাদের একজন ওসি মিজানুর রহমান বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িতদের অর্থের মাধ্যমে বাঁচানোর অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আছেন। অন্যজন মোঃ ইউনুচ আলী খুলনা পুলিশের রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) এ সংযুক্ত আছেন।

মিজানুর রহমান খান গত ২০১২ সালের ৫ জুলাই কালীগঞ্জ থানায় যোগদান করেন। যোগদানের পর হতে তিনি থানার এসআই ও এএসআইদের সাদা পোশাকে অভিযান পরিচালনা করিয়ে আটক বাণিজ্য শুরু করেন। এছাড়া ক্রসফায়ারের ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ থানার সামনে বসতো আটকদের ছাড়ানোর তদবিরের হাট। টাকা দিলে রফা না দিলেই অনেক নিরীহ মানুষদের মিথ্যা মামলা দিয়ে পরের দিন সকালে চালান দেওয়ার কাহিনী সিনেমাকেও হার মানাতো। তার কাহিনী থেকে বাদ পড়েনি সাংবাদিক, ছাত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সাধারণ মানুষ। কালীগঞ্জ মাইক্রো বাসস্ট্যান্ড হতে কালো রঙের গাড়িগুলোই তার প্রতিরাতের টহল গাড়ি হিসেবে ব্যবহার হতো। এই গাড়িতেই নিরীহ মানুষের হয়রানি করে আটক বাণিজ্য করতেন তিনি।

এরপর তিনি ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক কারণে কালীগঞ্জ থানা থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উত্তরার একটি থানায় যোগদান করেন। সেখান থেকে কিছুদিন পর পুনরায় ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেন। এরপর আবার শুরু করেন আটক বাণিজ্যসহ নিরীহ মানুষদের হয়রানি। সর্বশেষ মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত হয়েছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশীদ মিয়া। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাও হয়েছে। এ মামলা থেকে বাঁচাতে পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান খান (ঝিনাইদহ সদর থানার সাবেক ওসি) তদন্ত কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষের প্রস্তাব করেছিলেন। এ ঘটনায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে।

এদিকে গত ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ থানায় যোগদান করেন মোঃ ইউনুচ আলী। তিনিও সেই মিজানুর রহমানের পথ অনুসরণ করেন। ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখিয়ে সাধারণ মানুষ হয়রানিসহ শুরু করেন ঘুষ বাণিজ্য। গভীর রাতে থানার ওসি গাড়ি ব্যবহার করে তিনি নিজে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতেন এবং টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ভরি ভরি। সকালে তিনি থানায় না প্রবেশ করা পর্যন্ত কোন অফিসার প্রবেশ করতে পারতেন না।
এছাড়া তিনি নিজে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও জিডির বিষয়ে দেখাশোনা করতেন। টাকায় দফারফা শেষে অন্য এসআই দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিতেন।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও জিডি থেকে টাকা নেওয়ার অপরাধে পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে ওসি ইউনুচ আলীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। যার ফলে গত ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর রাতারাতি কালীগঞ্জ থানা থেকে তাকে ক্লোজড করা হয়। বর্তমানে তিনি খুলনা পুলিশের আরআরএফে সংযুক্ত আছেন।

পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে জানা যায়, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানায় দায়িত্ব পালনকালে ওসি ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে পুলিশের বিভিন্ন দফতরে ৪৫টি অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এতে প্রায় ৭৫ জন সাক্ষীর বক্তব্য গ্রহণ করছেন যশোর সিআইডি।

এছাড়াও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, হয়রানিসহ নানা অভিযোগের ভিত্তিতে ৩২ পুলিশ সদস্য সাবেক ওসি মো. ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেন।

গত ২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ থানা চত্বরে এ সাক্ষীদের বক্তব্য শোনেন খুলনা পুলিশের আরআরএফের কমান্ডেন্ট তাছলিমা খাতুন ও ঝিনাইদহ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস (বর্তমানে তিনি চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত)।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ৩২ পুলিশ এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল পদমর্যাদার। কালীগঞ্জ থানায় মো. ইউনুস আলী দায়িত্ব পালন করার সময় এই সদস্যরাও কর্মরত ছিলেন। তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এসব নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেন তারা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here