নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ এনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইসরাত জাহানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকারি মাহাতাব উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঝিনাইদহ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুর্নীতি দমন পিটিশনে ওই মামলা করেন। পরে বিচারক মো. নাজিমুদৌলা দুদকের উপ-পরিচালক সমন্বিত ঝিনাইদহ কার্যালয়কে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।

ইউএনও ইসরাত জাহান ছাড়াও মামলার অপর আসামিরা হলেন, কালীগঞ্জ সরকারি মাহাতাব উদ্দিন কলেজের প্রধান হিসাবরক্ষক মো. রজব আলী, সহকারী অধ্যাপক মনোজ কান্তি বিশ্বাস, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপক এ বি এম আহসানুল কবীর, একই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মসলেম উদ্দিন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতার হোসেন এবং খুলনা জোনের প্রধান মো. সাইদুর রহমান।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি কলেজটির অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন মামলার বাদী ড. মো. মাহবুবুর রহমান। ওই বছরের ৮ আগস্ট কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। পরে একই বছরের ২৭ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করা হয়। শিক্ষক-কর্মচারী আত্তীকরণের পূর্ব পর্যন্ত কলেজের আর্থিক ব্যয় মেটানোর জন্য কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে কলেজটিতে ৭৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী পদায়িত হয়েছেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও খাতের বেতন রুপালী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখা এবং কারিগরি শাখার শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিও খাতের বেতন সোনালী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখা থেকে উত্তোলন করা হয়। এছাড়া শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের স্থানীয় শাখার পৃথক দুইটি অ্যাকাউন্টে অবকাঠামো উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ ব্যয়ের টাকা জমা রাখা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কলেজের প্রধান হিসাবরক্ষক মো. রজব আলীর লেখা চেক বইয়ে সহকারী অধ্যাপক মনোজ কান্তি বিশ্বাস ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান প্রতিস্বাক্ষরে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কালীগঞ্জ শাখা থেকে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা যোগসাজশে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার বাদী ও সরকারি মাহাতাব উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. মাহবুবুর রহমানের অভিযোগ- শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কালীগঞ্জ শাখার চলতি হিসাব নম্বর ৫৮৫৮ ও ৬১২৭ থেকে তার অনুমতি ও স্বাক্ষর ব্যতীত আসামিরা চলতি মাসের ১৫ তারিখে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে নিয়েছেন। পরবর্তীতে ব্যাংক থেকে মোবাইলে অটো ম্যাসেজের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানানো হয়। ওই অ্যাকাউন্টে কলেজ উন্নয়ন খাতের অর্থ জমা রাখা হয়।

বাদী আরও জানান, পুনরায় আসামিরা বেআইনি পন্থায় টাকা তুলে নিতে পারে- এমন আশঙ্কায় দুর্নীতি দমন আইনে নালিশি মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ঝিনাইদহ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. নাজিমুদৌলা ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারা মতে বাদীর জবানবন্দি রেকর্ডসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা আছে কি-না তার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত ঝিনাইদহ কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ২০ মার্চ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ ইউএনও ইসরাত জাহান বলেন, কলেজের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ফি শাহজালাল ব্যাংকে প্রথমে জমা হয়। যেহেতু রেজিস্ট্রেশনের শেষ তারিখ ছিল তাই টাকাটা সোনালী সেবায় পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা প্রদান করা হয়েছে। এর বেশিকিছু না। এখানে কোনো সমস্যা নেই। আইনগত কিছু জটিলতা থাকতে পারে কিন্তু খুব দ্রুতই এই ঝামেলা মিটে যাবে বলেও উল্লেখ করেন ইউএনও।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here