আহত বৃদ্ধার ছবি। ইনসেটে কথিত কবিরাজ সিমা খাতুন। (ছবিঃ সবুজদেশ নিউজ)

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে রুপভান বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধাকে জ্বীন তাড়ানোর নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বারপাখিয়া গ্রামে।

কথিত কবিরাজ বারপাখিয়া গ্রামের আলম হোসেনের মেয়ে সিমা খাতুন (২৬) এ জ্বীন তাড়ানোর নামে শারিরীক নির্যাতন করেছেন বলে জানান বৃদ্ধা রুপভান বেগম। বৃদ্ধার সারা শরীরে নির্যাতনের ফলে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে।

বৃদ্ধা রুপভান বেগম জানান, গত ৬ দিন আগে আমি কবিরাজ সিমা খাতুনের বাড়িতে যায়। প্রথমে হাতচালক দিল। এরপর বললো আমার ঘাড়ে জ্বীন আছে। জ্বীন কথা বলেই আমাকে মারধর শুরু করে। এরপর তিনি জ্বীন নেই বললেও আরও বেশি মারধর শুরু করে। আমার শরীরে ২ টা কাঁচি দিয়ে পিটাতে থাকে। এরপর লাঠি দিয়েও মারধর করে। আমার সারা শরীরে মারধরের রক্তজমাট বেঁধে আছে। পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছি। আমার কাছ থেকে ওই কবিরাজ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে। কি জন্য আপনি কবিরাজের কাছে গিয়েছিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার মেয়ের ছেলে প্রায় ২ মাস ভাত খেতে চাই না। সে কারণে কবিরাজের কাছে যায়। তখন কবিরাজ বলেন যে নানীর ঘাড়ে জ্বীন আছে এজন্য সে ক্ষতি করছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে এ প্রতিবেদক কথিত কবিরাজ সিমা খাতুনের বাড়িতে যায়। প্রতিবেদক পরিচয় গোপন করে একজন রোগীকে দেখাবেন বলে ভন্ড কবিরাজ সিমার সাথে কথা বলেন। এসময় সিমা খাতুনের মা ও জামাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

নিজ বাড়িতে এ প্রতিবেদককে কথিত কবিরাজ সিমা খাতুন বলেন, তার ঘাড়ে জ্বীন সবসময় থাকে না। যখন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় তখন জ্বীন চলে আসে। রোগী আসার পর আমার ঘাড়ে থাকা জ্বীন বলে দেয় চিকিৎসা বাবদ কত টাকা লাগবে। তিনি বিভিন্ন চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। যখন কেউ কথা শুনে না তাকে মারধরও করা হয়। জ্বীন কিভাবে তাড়িয়ে দেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন তদবির ও মন্থর দিয়ে জ্বীন তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

কথা বলতে বলতে এ সময় প্রতিবেদকের সামনেই ভন্ড সিমার ঘাড়ে জ্বীন আগমন ঘটে। মুখ নাড়া দিয়েই এ প্রতিবেদকের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এরপর উচ্চস্বরে বলেন, আপনাদের কোন কথা থাকলে আমার সাথে বলেন, ওদের সাথে না। আপনাদের কেউ তদন্ত করতে পাঠালেও সেটাও আমাকে বলতে হবে। কোন রোগী অন্যায় কাজ করলে তাকে আমি শাস্তি দিই। এরপর সেই জ্বীন প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, আপনাদের আমার ঠিকানা কে দিয়েছে?

কয়েকদিন আগে বৃদ্ধা রুপভানকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে ভন্ড কবিরাজ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

বিষয়টি নিয়ে ৪নং নিয়ামতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ রনি লস্কর জানান, কথিত কবিরাজ সিমা খাতুন পার্শ্ববর্তী ফারাশপুর গ্রামের বৃদ্ধা রুপভান বেগমকে জ্বীন তাড়ানোর নামে মারধর করেছে। বৃদ্ধার শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। তিনি ওই বৃদ্ধাকে দেখেও এসেছেন। অভিযোগ পেলে কথিত ওই কবিরাজ সিমা খাতুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।

ভিডিও দেখুন…

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here