বিশেষ প্রতিনিধিঃ

লুৎফর রহমান লাড্ডু। ক্রীড়াঙ্গনের খেলার মাঠ ও বাইরে ছেলে বুড়ো সব বয়সের মানুষই তাকে ”লাড্ডু ভাই” নামেই চিনেন। কালীগঞ্জ বাসীর কাছে একজন সাদা মনের ব্যক্তি হিসাবেই পরিচিত। সেই সর্বজন শ্রদ্ধেও মানুষটার সাথেই চরম দূর্ব্যবহার করলেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শামীমা শিরিন লুবনা।

অনুমতি না নিয়ে তার হাসপাতালের অফিসে কক্ষে প্রবেশ করায় ক্ষেপে গিয়ে গালিগালাজ সহ চরম দুর্ব্যবহার করেন ওই কর্মকর্তা। এতেও ক্ষ্যান্ত না হয়ে তিনি তার কাছে ক্ষমা চাওয়া সহ পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিতেও উদ্যত্ব হন।

সোমবার সকালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ লুবনার এমন অমানবিক আচরনের খবর শুনে ক্ষুব্ধ হয়েছে কালীগঞ্জে ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ সহ সব পেশার মানুষেরা। তারা এহেন বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক ও মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক লুৎফর রহমান লাড্ডু জানান, সোমবার সকালে তিনি কালীগঞ্জ হাসপাতালে গিয়ে করোনার টিকা গ্রহন করেন। এরপর তার অসুস্থ স্ত্রী ওই টিকা গ্রহন করতে পারবে কিনা জানতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অফিসে ঢোকা মাত্রই ক্ষেপে উঠেন ডাঃ লুবনা। শুরুতেই অনুমতি না নিয়ে বা কেন ঢুকলেন বলেই শুরু করেন মুখ খিস্তি গালি গালাজ।

তিনি ভুক্তভোগীকে উদ্দেশ্য করে দাম্ভিকতার সুরেই বলেন, ইউএনওর অফিস রুমে ঢুকতে অনুমতি না লাগলেও আমার অফিস রুমে অনুমতি ছাড়া ঢোকা যাবে না। এ সময় ভুক্তভোগি তার বিষয়টি খুলে বলতে গেলে ডাঃ লুবনা আরো ক্ষেপে বাইরে বের করে দেন তাকে। এরপর তিনি উচ্চস্বরে তার অফিসের ষ্টাফদের বলেন লোকটাকে ধরে আনতে। এবং তাকে নেশাখোর বলে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিতে হবে বলে হুংকার দেন।

এ নিয়ে জটলা বাঁধায় সেখানে জড়ো হয় হাসপাতালের ষ্টাফ সহ স্থানীয় লোকজন। এরপর ডাঃ লুবনা হাসপাতাল অভ্যন্তরে দাড়িয়ে থাকা লাড্ডুকে আবারো হেনস্থা করতে মুখ খিস্তি শুরু করেন এবং বলেন, মাফ চাইতে হবে, নইলে হাসপাতাল থেকে বের হতে দিবেন না। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করলে ডাঃ লুবনা ক্ষ্যন্ত হন।

পরে ডাঃ লুবনার এহন দূর্ব্যবহারের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে ফুসে উঠেন ক্রীড়াঙ্গন সহ সর্ব্বস্তরের মানুষ। প্রতিবাদের ঝড় উঠে শহরে। তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান স্থানীয় জনগণ। তারা তাৎক্ষনিক বিষয়টির সুষ্ঠু বিচারের জন্য কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার ও কালীগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্ণা রানী সাহাকে অবহিত করেন।

বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন লুবনা মুঠোফোনে সবুজদেশ নিউজ ডটকমের এ প্রতিবেদককে বলেন, অফিসে এসে কথা বলতে হবে। আমি অফিসে আছি। যেহেতু হাসপাতালে ঘটনা ঘটেছে, তাই হাসপাতালে গিয়ে শুনতে বলেন। ফোনে এসব কথা বলা যাবে না।

ইউএনও সূবর্ণা রানী সাহা জানান, আমরা সরকারী কর্মকর্তাগন জনগনের সেবক। সব মানুষেরা আমাদের অফিসে আসতে পারে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কর্তৃক লাড্ডু ভায়ের সাথে দূর্ব্যাবহারের ঘটনাটি মোটেও কাম্য নহে। তিনি এমপি মহোদ্বয়ের সাথে আলোচনা পূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার জানান, লাড্ডু ভাই সর্বজন শ্রদ্ধেও একজন নীরিহ মানুষ। তার সাথে এহেন দূর্ব্যবহার আচরনের জন্য অবশ্যই তাকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হবে।

উল্লেখ্য, এর আগেও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই কর্মকর্তা সাংবাদিকসহ হাসপাতালের রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। গত ২৭ নভেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে “করোনায় হোটেলে না থেকেও চিকিৎসকদের বিল ৫৭৬০০’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। করোনা প্রণোদনার ৩ লাখ টাকা হরিলুট হওয়ায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে হইচই পড়ে যায়। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন এ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here