খুলনাঃ

একদিকে অনাহার, অন্যদিকে তীব্র শীত। দু’য়ের সাথে পেরে উঠছেন না খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলের শ্রমিকরা। তবুও দাবি আদায়ে একটুও ছাড় দিতে নারাজ তারা। তাই শীত আর অনহারকে দূরে ঠেলে দিয়ে দিন রাত অনশন করে চলেছেন শ্রমিকরা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মিলের অর্ধশত শ্রমিক অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। অনেকেরই দেয়া হচ্ছে স্যালাইন।

মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহবানে এ অনশন পালন করছেন শ্রমিকরা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন।

গত রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) তৃতীয় দিনের মতো মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে খালিশপুরের বিআইডিসি সড়ক, আটরা ও রাজঘাট এলাকার খুলনা-যশোর মহাসড়কে শ্রমিকরা এ অনশন পালন করেছেন। অনশনের জন্য স্ব স্ব মিলের সামনের সড়কে প্যান্ডেল করে নিয়েছেন শ্রমিকরা।

এদিকে কনকনে শীতে সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে থাকায় বেশির ভাগ বয়স্ক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দিন যত যাচ্ছে পাটকল শ্রমিকদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সংখ্যা বাড়ছে।

খালিশপুর বিআইডিসি সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পিপলস গোল চত্বর থেকে প্লাটিনাম জুট মিলের গেটের কিছুটা পর পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সড়কের ওপর পাটের চট বিছিয়ে উপরে সামিয়ানা টানিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করে তার মধ্যে অবস্থান করছেন শ্রমিকরা। এই সড়কে রয়েছে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুর ও দৌলতপুর এই পাঁচটি পাটকলের শ্রমিকরা। নিজ নিজ মিলের সামনে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। দুর্বল হয়ে পড়া শ্রমিকদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। প্যান্ডেলে শ্রমিক নেতারা বক্তব্য রাখছেন। তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা।

খালিশপুর জুটমিলের স্থায়ী আবেদ আলী (৫৬), কেসমত আলম, শেখ তাসলিমসহ অন্যান্য শ্রমিকরা জানান, শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘব করতে কেউ এখন এগিয়ে আসছে না। কিন্তু যখন ভোটের প্রয়োজন হয় তখন কিছু টাকা ছাড় করে ভোট আদায় করা হয়। এখন ভোট নেই, তাই শ্রমিকদের দাবি সব জায়গায় উপেক্ষিত হচ্ছে। নামে মাত্র বৈঠক দেখিয়ে দাবিগুলোকে অবহেলা করা হচ্ছে। তারা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া অবধি এখানেই থাকবো। মরলে এখানেই মরবো।

প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, অনশনে আমার মিলের তাঁত ও ফিনিশিংয়ে আবু ও শাহ আলম সোমবার রাতে স্টোক করেছেন। তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। প্লাটিনাম জুট মিলে প্রায় ১৫ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন বলেন, শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে পাটকল শ্রমিকরা সড়কে অনশন করছেন।। যতই দিন যাচ্ছে অসুস্থের সংখ্যা বাড়ছে। অসুস্থর কোন শেষ নেই। ঠান্ডাজনিত কারণে প্রায় সবাই অসুস্থ। যারা শুনে আছে তারা প্রায় অসুস্থ। ক্রিসেন্ট জুট মিলে ৩০ জন অসুস্থ অছেন। প্লাটিনাম ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের ন্যায় প্রায় প্রতিটি মিলেই অনশনরত শ্রমিকদের অসুস্থতার সংখ্যা বাড়ছে।

শ্রমিকদের দাবি নিয়ে গত ১৫, ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর তিন দফা বৈঠক হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি। সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় ওই দিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আবারও অনশন করার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা। সেই অনুযায়ী শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here