সবুজদেশ ডেক্সঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে দুজনকে আটকে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে আখতারুজ্জামান ও রাজিউর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মী রিয়াজুল ইসলাম ও মো.সাইফুদ্দিন সিফাত নামের ওই দুজনকে আটক করে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা আটককৃতদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের একটি কক্ষে নিয়ে মারধর করেন। এরপর মুঠোফোনে একজনের পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন৷

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে টিএসসি–তে ডেকে আনেন। এরপর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মী আখতারুজ্জামান ও রাজিউর রহমানকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন তাঁরা।

অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মী হলেন, ঢাবির পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান এবং সংগীত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাজিউর রহমান। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও সংগঠনের কোনো পর্যায়ের কমিটিতেই রাজিউরের কোনো পদ নেই।

ঘটনার শিকার রিয়াজুল ইসলাম ও মো.সাইফুদ্দিন সিফাতের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলায়।

রিয়াজ ও সিফাত প্রথম আলোকে জানান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় দাঁড়িয়ে তাঁরা গল্প করছিলেন। হঠাৎ সাত থেকে আটজন এসে তাঁদের ঘিরে দাঁড়ায়। ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে তাঁদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর সেখান থেকে তাঁদের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের মারধর করা হয় বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।
সিফাতের মুঠোফোন থেকে তাঁর বাবাকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করেন ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা।

সাইফুদ্দিন সিফাতের বাবা নেসারউদ্দিন বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত আটটার দিকে আমাকে আমার ছেলের নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। আমার কাছে তাঁরা দশ মিনিটের মধ্যে এক লাখ টাকা চায়। আমি বললাম, টাকা কোথায় পাব? ঠিক আছে দেখি। তাঁরা বারবার ফোন করে আমার কাছে টাকা চাইছিল। এর মধ্যে তাঁরা আমার ছেলেকে বোধ হয় মারধর করছিল, ফোনে আমি আমার ছেলের কান্নার শব্দ শুনেছি। একসময় তাঁরা ফোনটা আমার ছেলের হাতে দেয়। ছেলে আমাকে বলে, আব্বা, তোমার কাছে যা টাকা আছে পাঠাও, তা না হলে আমাকে এরা মারবে। কী করব, বুঝতে পারছিলাম না। পরে ঢাকায় থাকা আমার এক ভাতিজাকে ঘটনাটা জানাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন জানান, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘যারা আটক করেছে, তাঁরা আইনবিরোধী কাজ করেছে। যে ঘটনাটি ঘটেছে, যখনই আমরা সেটি জানতে পেরেছি, তখনই ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানিয়ে তাঁদের পুলিশের হাতে দিয়েছি। প্রক্টরকে আমরা বলেছি, এর বিরুদ্ধে যেন প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কেউ আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তাঁদের মাধ্যমেই কেবল তাঁকে আইনের আওতায় নেওয়া যেতে পারে। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজে কেউ জড়িত থাকলে সে যে সংগঠনেরই হোক, তাঁর বিরুদ্ধে আমরা চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেব।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমি অবহিত আছি। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কোনো অভিযোগ না থাকলে পুলিশ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান প্রথম আলোকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুজনকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here