বিশেষ প্রতিনিধিঃ

সুফিয়া খাতুন কাজ করেন পরের বাড়িতে। পরের জমিতে খুপড়ি করে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে থাকেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। পরের বাড়ি কাজ করে যা পান তাই দিয়েই নিজেদের খরচ চালান। রোববার গিয়েছিলেন ত্রাণ নিতে। ত্রাণের প্যাকেট সামনে নিয়ে ছবি তোলার পর তা আবার কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বাড়িতে।

এমন করেই ঘটনার বর্ণনা দেন সুফিয়া খাতুন। তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলিদাপাড়া গ্রামের হায়দার আলীর স্ত্রী।

ছবি তোলার পর ত্রাণ কেড়ে নেওয়া এমন ভুক্তভোগীদের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, গত রোববার বিকালে বলিদাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ত্রাণ দেওয়ার জন্য ডাকা হয়। পৌরসভার গাড়িতে করে এসব ত্রাণ নিয়ে আসা হয়। এ সময় অসহায়দের ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়াতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার, ইউএনও সুবর্ণা রানী সাহা ও পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ ত্রাণ বিতরণ করতে মাঠে আসেন।

তারপর তাদের সামনে দেওয়া হয় ত্রাণের প্যাকেট। এরপর ত্রাণ বিতরণের ছবি তোলা হয়। ত্রাণ বিতরণ শেষে মাগরিবের আযান দেওয়ায় স্থানীয় সাংসদ ও পৌর মেয়র বিদ্যালয় মাঠ ত্যাগ করেন। সাথে সাথে ইউএনও চলে যান। এরপর অসহায় কিছু ব্যক্তিদের বলা হয় আপনাদের নাম তালিকায় নাই। তাদের কাছ থেকে ত্রাণের প্যাকেট কেড়ে নেন বলিদাপাড়ার যুবলীগ নেতা সমীর হোসেন ও বাবরা গ্রামের লিটন আলী।

যুবলীগ নেতা সমীর হোসেন বলিদাপাড়া গ্রামের মৃত হাতেম দফাদারের ছেলে। সে কালীগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য।

আরেক ভুক্তভোগী বাহাদুর মন্ডলের স্ত্রী সুন্দরী খাতুন জানান, আমার স্বামীর বয়স প্রায় ৮০ বছর। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। একটা মাত্র ছেলে ভাংড়ির ব্যবসা করে। অনেকদিন ধরে কাজে যেতে পারছে না। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি। সেখান থেকে যা পাই সেটা দিয়েই চলি। গত রোববার চাল দেয়ার পর আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সমীর নামের একজন চাল কেড়ে নেয়। একটা মেয়ে ছবি তুলছিল। ছবি তোলার পর চাল গাড়িতে করে নিয়ে যায়।

সুন্দরী খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন জাম্বু জানান, আমি ভাংড়ির ব্যবসা করি। অনেকদিন তেমন কোন ব্যবসা নেই। মা-বাবা, স্ত্রী সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। গত রোববার চাল দিবে শুনে তিনি বলিদাপাড়া মাঠে যান।

তিনি আরো জানান, চাল সামনেই ছিল। এরপর এমপি সাহেব নামাজ পড়তে গেল সমীর নামের একজন এসে বললো তোমার নাম নেই। এই বলে চাল নিয়ে চলে গেল।

বলিদাপাড়া এলাকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছোট থাকতেই বাবা মারা গেছে। বড় ভাই ইজিবাইক চালায়। করোনার মধ্যে সেটিও চালাতে পারছে না। আমি ড্রাইভার ছিলাম। সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাই। এখন কিছুই করেননা। তিনি কোন স্থান থেকে ত্রানের সহযোগিতা এখনো পাননি।

এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা সমীর হোসেন জানান, গত রোববার বলিদাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এমপি, মেয়র ও ইউএনও থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ছবি তোলার পর ত্রাণ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, তাদের তালিকায় নাম না থাকায় ত্রাণ নিয়ে অন্যদের দেওয়া হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণী সাহা বলেন, আমি গিয়েছিলাম সেখানে। ত্রাণ কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা।

ভিডিও দেখুন…

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here