বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী নিজেই সংসদীয় প্যাডে সুপারিশ করলেন। স্কুলটির দুরত্ব ২৮ কিলোমিটার। পথে চারবার গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়। যাহা যাতায়াতের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। আমার নির্বাচনী এলাকার চাঁদপুর ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা নাজমা খাতুন। সহকারী শিক্ষক পদে নিত্যনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। তার নিজ বাড়ি যাদবপুর। যাদবপুর হতে নিত্যনন্দপুরের দুরত্ব ২৮ কিলোমিটার। কিন্তু সুপারিশটি রাখলেন না উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। আইনের দোহায় দিয়ে বদলি করলেন অন্য বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে।

ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায়। ঘটনাটি নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে শিক্ষক মহল ও ঝিনাইদহের রাজনীতির অঙ্গনে।

প্রাপ্ত সুত্রে জানা গেছে, নিত্যনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাজমা খাতুনের বদলির জন্য নিজ গ্রাম ১১৮নং যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবেদন করেন। আবেদন পত্রে সুপারিশসহ সংসদীয় প্যাডে গত ইংরেজি ১৮ জানুয়ারি তারিখে নিজেই সুপারিশ করেন। এছাড়া গত ইংরেজি ৩১ ডিসেম্বর তারিখে নাজমা খাতুনের আবেদনে নিত্যনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপারিশ করেন। একই সাথে গত ১ জানুয়ারি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুবীর কুমার ঘোষ নাজমা খাতুনের যাতায়াতের সুবিধার্তে আবেদন পত্রে সুপারিশ করেন। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনের এক সপ্তাহের মধ্যে জেলা শিক্ষা অফিসে আবেদন পাঠানোর নিয়ম থাকলেও সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও আবেদনটি জেলা শিক্ষা অফিসে না পাঠিয়ে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে আছমা খাতুনকে নিত্যনন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির সুপারিশ করেন। যিনি ভাতুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন।

নাজমা খাতুন অভিযোগ করেন, চাকরি যোগদানরত থেকে অদ্যবধি তিনবার বদলির জন্যে আবেদন করেও বদলি হতে পারিনি । জীবনের প্রয়োজনে তিনি চাকরিটি করেন। তা নাহলে প্রতিদিন যে কষ্ট করে চাকরিস্থলে যান এতো কষ্ট করে আসলে চাকরি করা যায় না।

একই ভাবে ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি বাণিজ্য থামছে না। উপজেলাগুলো- ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুন্ডু ও শৈলকুপা। নিয়ম নীতির দোহায় দিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বদলি বাণিজ্য হছেন চলেছে। এক শ্রেণির শিক্ষক নেতারা এই কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। এর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষকদের। কখনো কখনো এইসকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা জেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় আবার কখনো বা মন্ত্রনালয়ের দোহায় দিয়ে স্থানীয় আইন প্রণেতাসহ রাজনীতিবিদদের হেয় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার এক রাজনীতিবিদ জানান, যেখানে মাননীয় সংসদ সদস্যদের সুপারিশ উপেক্ষিত হয়, সেখানে আমরা কিবা করতে পারি। তবে এই ধরনের ঔদ্ধর্তপূর্ণ আচরণের সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হওয়া উচিৎ।

হরিণাকুন্ডু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস.এম আব্দুর রহমান জানান, প্রাথমিকের বদলির নীতিমালা অনুযায়ী একই পদে যদি একাধিক প্রার্থী আবেদন করেন তাহলে বয়জৈষ্ঠ্যের ভিত্তিতে বদলির নিয়ম রয়েছে। যেকারণে নীতিমালা অনুযায়ী বদলির সুপারিশ করেছি।

ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি ছুটিতে আছি। এ জাতীয় বিষয় ঘটে থাকলে অবশ্যই আইনের মধ্যে থেকে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here