মোংলাঃ

খ্রীষ্টান ধর্ম থেকে মুসলিম হবে এবং বিয়ে করার প্রলোভন দিয়ে দিনের পর দিন মুসলিম কিশোরীকে ধর্ষণ করে আসছিল খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের এক যুবক। বিষয়টি জানাজানি হলে বিয়ের দাবি তুললে বিয়েতো করবেই না, উল্টো তাকে কোন দিন দেখিনি বলে মারধর করে বাড়ী থেকে বের করে দেয় ওই যুবক ও তার পরিবারসহ স্থানীয় কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এ ব্যাপারে কিশোরী থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন। কিন্তু সেই মামলায় পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার না করায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেরাচ্ছে তারা। উল্টো মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামিরা প্রাণনাশের হুমকি দেয়ায় ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্যাতিতা কিশোরী।

জানা গেছে, মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের উত্তর হলদিবুনিয়া গ্রামের খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের ডঃ জুলিয়ান বৈরাগীর বাড়ীর পাশেই শহিদুল হাওলাদারের বাড়ী। প্রতিবেশী হওয়ার সুবাধে পুর্ব থেকেই কিশোরী (১৭)’র সাথে সুবির বৈরাগীর পরিচয়। সুবিরের বাবা জুলিয়েন বৈরাগী অসুস্থ হওয়ায় প্রাযই কিশোরী তাদের বাড়ীতে আসা-যাওয়া করতো। সুবির বৈরাগী পরিবারের মুসলিম ধর্ম ভাল লাগায় প্রায়ই তার মা সপ্না ও বড় ভাই সোহাগ বৈরাগী তাদের বাড়ীতে ডেকে পাঠাতেন কিশোরীকে। এক পর্যায় সুবিরের সাথে কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

সুবির বৈরাগী খ্রীষ্টান ধর্মের হওয়ায় মুসলিম হয়ে তাকে বিয়ে করবে বলে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে আসছিল অভিযুক্ত সুবির। এছাড়াও কিশোরীর সাথে ধর্ষণের দৃশ্য গোপনে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়েছে এমনও ভয় দেখাতো বলে অভিযোগ করে কিশোরী। এ ঘটনা সুবিরের বড় ভাই সোহাগ ও তার মা সপ্না বৈরাগীর কাছে জানালে তারা দু’জনকে বিয়ে দিবে বলে কারো কাছে না বলার জন্য কিশোরীকে শান্ত থাকতে বলেন তারা।

গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে জরুরি কাজের কথা বলে সুবির বৈরাগী কিশোরীকে বাসায় ডেকে আনে। ঘরে কেউ না থাকার সুবাধে পুনরায় তাকে জোর পুর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনা কাউকে কিছু না বলার জন্য ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায় সুবির। এ ঘটনা পুনরায় সুবিরের বড় ভাই সোহাগ ও মা সপ্না বৈরাগীর কাছে জানালে এবং বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তারা কিশোরীকে মারধর করে বাড়ী থেকে বের করে দেয় বলেও মামলায় উল্লেখ করেন নির্যাতিতা ওই কিশোরী। ঘটনার খবর শুনে ওই রাতেই ইউপি সদস্য কৌশীক মন্ডল (কানু) ও স্থানীয় লোকজন এসে কিশোরীকে উদ্ধার করে তার বাবার বাড়ীতে পৌঁছে দেন তারা।

পরে ওই কিশোরী মোংলা থানায় অভিযোগ করলে জড়িত অভিযুক্তসহ স্থানীয় রাজীব বৈরাগীর সহায়তায় মিজান মোল্লা, জিম হালদার, জেবিয়ার বৈরাগী, অনুজ হালদার, দিলিপ, সুমন, শুভ, পিয়াস, মিলন, সুজন ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঘটনা স্থানীয়ভাবে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে একদিকে মামলা না নেয়ার জন্য পুলিশকে থামিয়ে রাখে। আরেকদিকে কিশোরী দুশ্চরিত্র অপবাদ দিয়ে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরবর্তীতে ১২ সেপ্টেম্বর ওই কিশোরী থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। থানায় ধর্ষণ মামলার প্রায় ৪ মাস অতিবাহিত হলেও আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্ত গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এছাড়া আসামী সোহাগ বৈরাগী ও মা সপ্না বৈরাগীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময় পুলিশ তাদের নামে মামলা থেকে বাদ দেয়ারও পায়তারা করছে। পাশাপাশি মামলা তুলে না নিলে আসামী ও তাদের সহযোগীরা এসিড মেলে ঝলছে দেয়ারও প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে বলেও কিশোরী অভিযোগ করেন।

এছাড়া মামলার ২নং আসামী সোগাহ বৈরাগী খুলনার একটি হাসপাতালে চাকরি করার সুবাধে কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত ও ডাক্তারি রিপোর্টও পাল্টে দেয়া ও মামলা মিটিয়ে নেয়ার ভয় দেখাচ্ছে আসামীদের সহযোগীরা।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় এ কর্মকর্তা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here