যশোরঃ

যশোরের চৌগাছায় মাদ্রাসাছাত্রীকে (১০) ঝাড়ফুঁকের চিকিৎসার নামে কয়েক দফায় ধর্ষণ করেছে এনায়েত আলী (৬০) নামে এক জিনের কবিরাজ। এ ঘটনায় বুধবার রাতে ওই জিনের কবিরাজের বিরুদ্ধে ভিকটিমের পিতা মামলা করেছেন।

বৃহস্পতিবার যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ভিকটিম চৌগাছা উপজেলা সদরের একটি মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। অভিযুক্ত এনায়েত আলী চৌগাছা উপজেলার তিলকপুর গ্রামের বাসিন্দা।

ভিকটিমের পিতার অভিযোগ, কিছুদিন আগে মেয়েটি হঠাৎ ভয় পেয়ে বাড়ির উঠানে পড়ে গিয়ে বমি করতে থাকে। এ সময় জিনের কবিরাজ এনায়েত আলী (৬০) তাদের বাড়িতে গিয়ে বলেন- মেয়েটিকে জিনে ধরেছে। ঝাড়ফুঁক করলে ঠিক হয়ে যাবে। তার কথায় বিশ্বাস করে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ঝাড়ফুঁক করানোর জন্য পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানিকতলা দরগাহে (সেখানে একটি বেলগাছ রয়েছে) আমার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, পথিমধ্যে কবিরাজ আমার স্ত্রীকে বলে ঝাড়ফুঁক করানোর সময় অন্য কেউ থাকতে পারবে না। তখন আমার স্ত্রী এনায়েত আলীর সঙ্গে আমার মেয়েকে দিয়ে গ্রামের জনৈক ব্যক্তির বাড়ির সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু এনায়েত আলী আমার মেয়েকে মানিকতলায় না নিয়ে গ্রামের এক ব্যক্তির পেয়ারা বাগানে নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে।

তিনি আরও বলেন, এভাবে এক মাসে মেয়েটিকে চিকিৎসার নামে প্রতি শনি, মঙ্গলবারে ঝাড়ফুঁকের নামে ৬-৭ দিন একই পেয়ারা বাগানে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। গত ১৫ আগস্ট সে বলে আর একবার ঝাড়ফুঁক করলেই জিন চলে যাবে। পরে ১৮ আগস্ট আমার মেয়ে তার মা অর্থাৎ আমার স্ত্রীর কাছে বিষয়টি খুলে বলে।

ওই ছাত্রীর পিতা বলেন, এরপরও মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে আমরা স্থানীয় ডাক্তারের মাধ্যমে চৌগাছা শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা করাই। চৌগাছা শহরের একটি মাদ্রাসায় তাকে রেখে আসি। কিন্তু আসামি এনায়েত আলী গত ২৫ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওই মাদ্রাসায় গিয়ে নিজেকে আমার মেয়ের চাচা পরিচয় দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। তখন ওই মাদ্রাসার একজন শিক্ষক আমাকে মোবাইলে জানালে নিষেধ করি। পরে আমরা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসি।

ভিকটিমের স্বজনরা আরও জানান, আড়াই মাস আগে ঘটনাটি ঘটেছে। মান-সম্মানের ভয়ে প্রথম দিকে মামলা করতে চাননি। এ ঘটনায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে একাধিকবার সালিশও হয়েছে। সালিশে অভিযুক্ত এনায়েত আলী নিজেই স্বীকার করেছে অন্তত সাতবার মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে। মীমাংসার নামে সময়ক্ষেপণ করেছে। এনায়েতের লোকজন নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব বলেন, ঘটনাটি প্রায় আড়াই মাস আগের। বুধবার রাতে মামলা রেকর্ড হয়েছে। শিশুটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আসামি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here