বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মাদ্রাসাছাত্র আলামিন হোসেনের জবাই করে হত্যার ঘটনায় ৫দিন পেরিয়ে গেলেও হত্যার রহস্য ও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে নিয়ে গেলেও পরে আবার তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গত ৩০ নভেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া দরগা এলাকায় ওয়াজ শুনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় আলামিন। এরপর তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে ১ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন আলামিনের বাবা আব্দুর রাজ্জাক। গত ৪ ডিসেম্বর দুপুরে আড়পাড়া এলাকায় একটি ৪তলা ভবনের পিছনে কচু বাগান থেকে জবাইকৃত অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর হত্যার ক্লু ও মোটিভ উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। পরের দিন সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই কিশোরকে নিয়ে যায় পিবিআই। তারা হলেন, আড়াপাড়া এলাকার মুশফিকুর রহমান ডাবলুর ছেলে সাব্বির ও মিল্টন হোসেনের ছেলে হৃদয়। সন্ধ্যায় আবার তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

নিখোঁজের দু’দিন পর আলামিনের বাবার মোবাইলে পাঠানো ক্ষুদে বার্তা

পরের দিন ৬ ডিসেম্বর সকালে আবারও হৃদয় এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠানো মোবাইলের মালিক সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকার এক মহিলাকেও নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

মাদ্রাসাছাত্র হত্যার বিষয়ে অনুসন্ধানে একটি ক্ষুদে বার্তা হাতে আসে এই প্রতিবেদকের। রবি নম্বর থেকে নিহত আলামিনের বাবার মোবাইলে পাঠানো ক্ষুদে বার্তায় লেখা হয়- ভাই, আপনার বড় ভাবি আপনার ছেলে কে সরাইছে। এখন বাকি টাকা দিচ্ছে না। আপনার বড় ভাইকেও কইছে। জুঁই আসছে আজ তাউ টাকা দেইনি। জুঁইয়ের সাথে বিয়ের আগে একটা ছেলের রিলেশন ছিল। ছেলেটা আলামানি জেনে যায় তাই আপনার ভাবি ওরে সরাই ফেলতে কয়। ছেলে কালীগঞ্জ আছে। কাল মেরে দিবো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষুদে বার্তা পাঠানো মোবাইল নম্বর এর সন্ধান পায় র‌্যাব। হৃদয় ও সাব্বির এক বছর আগে এই মোবাইল রঘুনাথপুরের বাড়ি থেকে চুরি করে। এরপর ওই নম্বর থেকে আলামিনের বাবাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। এছাড়া আলামিনের চাচাতো বোন জুঁইয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ডাবলুর ছেলে সাব্বিরের। কিন্তু এক বছর আগে একতারপুর গ্রামে বিয়ে হয় জুঁইয়ের। মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে আলামিনের বাবাকে জানায় হৃদয়ের বাবা মিল্টন হোসেন। মরদেহটি মিল্টনের বাড়ির দুই থেকে তিন’শ গজের মধ্যে।

তবে, এখনো পর্যন্ত এমন নৃশংসতম হত্যার রহস্য ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে না পারায় নিহতের পরিবার ও এলাকার মানুষের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ মানববন্ধনও করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আড়পাড়া গ্রামের এক শিক্ষক বলেন, এমন হত্যাকান্ড আসলে মেনে নেওয়া যায়না। ১৩ বছরের শিশুর কি অপরাধ থাকতে পারে। এখনো হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার না করতে পারায় আমরা হতাশ।

নিহত মাদ্রাসাছাত্র আলামিনের পিতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৩০ তারিখ নিখোঁজ হওয়ার পর আমি ১ তারিখে থানায় জিডি করি। ২ তারিখে রাত ৯.৪৮ মিনিটে ০১৮৫২-৩৬৪০৫৬ নম্বর থেকে একটি ক্ষুদে বার্তা আমার মোবাইল নম্বরে আসে। ম্যাসেজটি পাওয়ার সাথে সাথে আমি র‌্যাবকে দিই। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমার ছেলের হত্যাকারীদের খুঁজে পাইনি।

তিনি আরো জানান, আমার ছেলের মরদেহের খবর প্রথমে আমাকে জানায় হৃদয়ের বাবা মিল্টন। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই। আমার ছেলের মত অন্য কারও ছেলের যেন এমন মৃত্যু না হয়।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ র‌্যাবের কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ আলম বলেন, অনেকের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জড়িত তেমন কাউকে পাচ্ছি না। মোবাইলের ক্ষুদে বার্তার ব্যাপারে একটা জায়গায় আটকে গেছি। এক বছর আগে মোবাইলটি চুরি হয় উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকা থেকে। আড়পাড়ার বিশ^াসপাড়া থেকে রঘুনাথপুর গিয়ে তিনজন ওই ফোন চুরি করে। এই তিনজনের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা ওই দুই যুবক ছিল বলে জানান তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মতলেবুর রহমান জানান, এখনো দৃশ্যমান তেমন কিছু পায়নি। তদন্ত চলছে, খুব তাড়াতাড়ি একটা রেজাল্ট পাওয়া যাবে। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব-পিবিআই কয়েকজনকে নিয়ে গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here