যশোর প্রতিনিধিঃ

করোনা ঝুঁকির মধ্যে মালয়শিয়ায় প্রবাস জীবনযাপন করছেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ইত্যা গ্রামের জসীম উদ্দীন। প্রবাসে থেকেও উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের কর্মহীন গৃহবন্দি ৭৫০টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি

পরিবারের স্বজনদের মাধ্যমে এলাকার কর্মহীন দরিদ্র মানুষের তালিকা করে তিনদিন ধরে প্রত্যেকটি পরিবারে চাল-ডাল-তেল পৌছে দেওয়া হচ্ছে।

(৪ এপ্রিল) শনিবার দুপুরে ইত্যা গ্রামের ঋষিপাড়া মন্দিরের পাশে দ্বিতীয়দিনের মত খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় ঋষিপাড়ার ৬৩ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সাত কেজি চাল, এক কেজি ডাল ও আধা কেজি ভোজ্যতেলের একটি করে প্যাকেট বিতরণ করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাশিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম আহাদ আলী, পুলিশপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক, প্রবাসী জসীম উদ্দীনের বাবা মো. জয়নাল মোড়ল, জসিমের ভাই মো. মহিউদ্দীন প্রমুখ।

ত্রাণের প্যাকেট পেয়ে ঋষিপাড়ার বাসিন্দা রেখা রানী বলেন, ‘আমি ইত্যা বাজার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করি। দোকানদারেরা কিছু পয়সাকড়ি দেয়। তাতেই আমার ৫ জনের সংসার চলে। কিন্তু ১০/১২ দিন ধরে বাজার বন্ধ। কোন কাজ নেই। না খেয়ে মরছি। এই প্রথম কেউ ত্রাণ সহয়তার খাবার দিলো। এতে কমপক্ষে তিনদিন চলবে।’

ভ্যানচালক বেত কুমার দাস বলেন, ‘বাইরে মানুষজন নেই। ভাড়াও হচ্ছে না। এজন্য ১০দিন ধরে বাড়ি থেকে ভ্যান বের করিনি। ঘরে খাবার নেই। জসীমের দেওয়া চাল-ডালে তিনদিন সংসার চলানো যাবে। আমিও এই প্রথম কোন খাদ্য সহায়তা পেলাম।’

‘প্রবাসী জসীম উদ্দীনের পক্ষে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ’ এমন লেখা ব্যানার একটি পিকাপের সামনে লাগিয়ে গত শুক্রবার থেকে গ্রামে গ্রামে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। আজ রোববার বিতরণ কাজ শেষ করা হচ্ছে। গত দুইদিনে ৬২৫টি পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

মালয়শিয়া প্রবাসী জসীম উদ্দীন মুঠোফোনে বলেন, ‘১৯ বছর ধরে আমি মালয়শিয়ায় আছি। বিদেশে থাকলে কিন্তু মন পড়ে থাকে গ্রামে। এলাকার মানুষের যে কোন সংকটে আমি এগিয়ে যাই। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে সরকার দোকান-পাট, বাজার, পরিবহন সবকিছু বন্ধ রাখার আহবান জানিয়েছে। এতে দরিদ্র মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মানবেদন দিনযাপন করছেন তারা। যে কারণে আমার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের কর্মহীন দরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করে প্রত্যেকটি পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রবাসে থাকলে দেশমাতৃকার জন্যে বোধ হয় বেশি মন কাঁদে।’

কাশিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আহাদ আলী যশোর বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দ আসছে একাবারেই সীমিত। আমার ইউনিয়নে সরকারি বরাদ্দের চাল এ পর্যন্ত মাত্র ২০টি পরিবারে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। জসীম উদ্দীনের মত মানুষ এগিয়ে না এলে জাতির এই ক্রান্তিকালে দুর্যোগ মোকাবেলা করা সরকারের একার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। জসীমের পক্ষে ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের ৭৫০টি দরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। দরিদ্র পরিবারের তালিকা তৈরি করতে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের কাজে লাগানো হয়েছে। যে কারণে অত্যন্ত সুচারুভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কাজ চলছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here