বিশেষ প্রতিনিধিঃ

শিল্পী আর্ট নামে ছোট একটি দোকান আছে শহরে। সাইনবোর্ড, ব্যানার লিখে যা আয় হয় সেটা দিয়েই চলে সংসার। বাম চোখের সমস্যা হওয়ায় এখন আর তেমন একটা কাজ করতে পারেন না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে একের পর এক শিল্পকর্ম করে যাচ্ছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া এলাকার এক মুজিব ভক্ত সুভাস দাস।

বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে কখনো নিজ হাতে ছবি আঁকেন, কখনো আবার মুজিবকে নিয়ে নিজের লেখা গান, নিজের সুরে নিজেই কন্ঠ দেন আবার বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে কাঁদা মাটি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। এ যেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার বিরল ভালোবাসা।

সরেজমিনে তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুভাষ দাস নিজে বঙ্গবন্ধুকে রং-তুলিতে এঁকেছেন। যার দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট ও প্রস্থ ৩০ ফুট। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন উপলক্ষে দেশ যেখানে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে এই মুজিব ভক্ত কাদা-মাটি দিয়ে জীবন্ত বঙ্গবন্ধুর চিত্রকর্ম তৈরি করতে ব্যস্ত। তিনি বিভিন্ন সাইজের মোট ৪টি ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। সবথেকে বড় ভাস্কর্যটি লম্বায় ৭ ফুট ও প্রস্থে ৫ ফুট। বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা আর মহত্বের কারণেই সুভাষ দাস এসব কাজ করে থাকেন। তিনি কোন প্রতিদান চান না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়েই তিনি মরতে চান।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চোখে দেখেননি। কিন্তু দেশের প্রতি তার মমত্ববোধের কথা শুনে তাকে ভালোবেসে ফেলেছেন সুভাষ দাস।

মুজিব ভক্ত এই মানুষটি আরো বলেন, শেখ মুজিব শুধু একটি নাম নয়, শেখ মুজিব মানে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই মুজিবকে ভালোবেসে আমি শুধু একবেলা দুপুরের খাবার পেয়েছি। আমার বাম চোখটা হারিয়েছি। কিন্তু তাতে তার কোনো আপেক্ষ নেই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার সকল কর্ম প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চান।

সুভাষ দাস একাধারে একজন গীতিকা, সুরকার ও একজন ভাস্কর্য শিল্পী। এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৬ টি গান লিখেছেন ও সুর করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি করেছেন অসংখ্য মাটির ভাস্কর্য। রঙ আর তুলি দিয়ে তৈরি করেছেন শেখ মুজিবের ছবি।

বঙ্গবন্ধুর ছবিতে রঙ তুলির আঁচড় দিতে গিয়ে বাম চোখ হারিয়েছেন এই মুজিব ভক্ত সুভাষ দাস। কিন্তু তাতে তার কোন আপেক্ষ নেই। তার এখন একটাই সাধনা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি করা মিউজিক ভিডিওটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে দেখানো।

সুভাষ দাস জানান, সম্প্রতি ‘ও মুজিব তুমি মিশে আছো বাঙালির প্রাণে প্রাণে’ শিরোনামে নিজের লেখা ও সুরে কণ্ঠ দিয়ে একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছেন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোর জন্য। মিউজিক ভিডিওটির চিত্রায়ন করা হয়েছে নিজের হাতে আঁকা শেখ মুজিবের ছবি দিয়ে।

তিনি বলেন, ভিডিও’র জন্য ৩০ ফুট উচ্চতা ও ২৫ ফুট প্রস্থ বঙ্গবন্ধুর তিনটি ছবি আঁকি। এই ছবি আঁকতে গিয়ে তার ডান চোখে রঙ পড়ে। এরপর চোখে যন্ত্রণা শুরু হয়। ভারতে গিয়ে চোখের অপারেশন করি। ডান চোখ ভালো হওয়ার পর এবার বাম চোখে সব কিছু ঝাপসা দেখি।

তিনি বলেন, ‘শিল্পী আর্ট’ নামে নিজের একটি আর্টের দোকান আছে। সেখানে থেকে যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চালায়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন কাজ করি। চোখে কম দেখি তাই এখন আর কাজ করতে পারিনা। বাড়িতে ছবি আঁকা শেখায়। এছাড়া রোজগারের কোনো পথ আমার নেই। এই গানের পেছনে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এজন্য অনেক ধার-দেনা করতে হয়েছে।

মুজিব ভক্ত সুভাষ দাস বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মাটির তৈরি ভাস্কর্য নিজে তৈরি করে বিভিন্ন মানুষকে দিয়েছি। বিনিময়ে কোন টাকা নেয়নি। এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে সহযোগিতাও করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার এই কর্মগুলো একটু দেখলো আমার ইচ্ছা পূরণ হতো।

সুভাষ দাসের স্ত্রী রেখা রানী দাস বলেন, শেখ মুজিবকে ভালোবেসে এখন আমরা পথে বসার প্রহর গুনছি। দোকানের কাজ বন্ধ রেখে সে শেখ মুজিবের ছবি আঁকতো। এনিয়ে প্রায়ই সংসারে গন্ডগোল হতো। তারপরেও তাকে থামানো যায়নি। এখন কোন কাজ নেই। খুব কষ্টেই চলছে আমাদের। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসতে হবে।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার বলেন, আমি সুভাষ দাসকে ভালোভাবে চিনি। আমি তার চিত্রকর্মও দেখেছি। সময় ও সুযোগ বুঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো।

ভিডিও দেখুন…

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here