ঢাকাঃ

ফিল্মের ডনদের স্টাইলে সানগ্লাস চোখে দামি প্রিন্টের শার্ট গায়ে দিয়ে চলাফেরা করতেন তিনি। সব সময় অস্ত্রধারী সুঠাম দেহের অধিকারী, প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার ছয়জন দেহরক্ষী ঘিরে রাখতেন তাকে। তার নাম এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, কিন্তু ‘টেন্ডার শামীম’ নামেই তিনি সকলের কাছে পরিচিত।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শামীম। যদিও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি যুবদলের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। 

শুক্রবার দুপুরে সেই শামীমকে গুলশানের নিকেতনে তার অফিস থেকে আটক করেছে র‌্যাব। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নগদ ১০ কোটি টাকা ও প্রায় ২০০ কোটি টাকার এফডিআর চেক। এছাড়া তার কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও বিদেশি মদের বেশ কয়েকটি বোতল উদ্ধার করা হয়।

বিকালে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম জানান, শামীমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ রয়েছে। শামীমসহ মোট আট জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে তার একাধিক দেহরক্ষীও রয়েছে। তার কাছ থেকে যে অত্যাধুনিক অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে তার কোন বৈধতা আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ভিডিও

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শামীম। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম মেঝো। বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন যুবদলের ওয়ার্ড রাজনীতি দিয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন শামীম।

পরে খুব কম সময়েই নাম লেখান যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক পদে। হয়ে উঠেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ডান হাত। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাদের সমর্থনপুষ্ট হিসেবে গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারির নিয়ন্ত্রণে নেন।

ক্ষমতার পালাবদল হলে শামীমও ভোল বদলে ফেলেন, যোগ দেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগে। এখন তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদকের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগেরও সহসভাপতি।

যুবলীগে যোগ দেয়ার পর আবারও শামীম বাগাতে থাকেন সরকারি টেন্ডার। যে কারণে তার নাম হয়ে যায় ‘টেন্ডার শামীম’। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় শামীম ঠিকাদারি কাজ করে থাকেন। শুধু তাই নয় গণপূর্ত ভবনের বেশি ভাগ ঠিকাদারি কাজ তিনিই করেন। 

সারা বাংলাদেশের কনস্ট্রাকশনের যত বড় বড় কাজ হয় সকল কাজ শামীমের নির্বাচিত ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ করতে পারেন না। যদি কেউ জি কে শামীম-কে না জানিয়ে দরপত্র ক্রয় করেন তবে তার পরিণাম হয় ভয়ঙ্কর। ওই প্রতিষ্ঠানে তার অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী শুধু হামলাই করবে না, প্রয়োজনে তাদের মেরেও ফেলতে পারে।

বাসাবো এলাকায় পাঁচটি বাড়ি এবং একাধিক প্লট রয়েছে শমীমের। বাসাবোর কদমতলায় ১৭ নম্বরের পাঁচতলা বাড়িটি জি কে শামীমের। বাড়িটি ম্যানেজার হিসেবে দেখাশোনা করেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন সর্দার।

জানা গেছে, যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদের স্বীকারোক্তিতে বিভিন্ন অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে জি কে শামীমের নাম উঠে আসে।

এরপরই শুক্রবার সকালে সাদা পোশাকে নিকেতনের ৫ নম্বর সড়কের ১১৩ নম্বর ভবনে শামীমের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে শামীকে নিয়ে নিকেতনের ১৪৪ নম্বর ভবনে তার অফিসে অভিযান শুরু করে র‌্যাব।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here