সবুজদেশ ডেস্কঃ

শরীরকে ভাল রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম অত্যন্ত দরকারি। যদি ঘুম কম হয় তাহলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। মানসিক অবসাদ থেকে শুরু করে উদ্বেগে ভোগা, ডায়বেটিস, হার্টের রোগ, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যানসারের সম্ভাবনাও আছে। এমনটাই বলছে গবেষণা। 

অনেকেই রাত জেগে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করেন। সম্প্রতি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, না ঘুমিয়ে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়াও চোখে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

রাত জেগে স্মার্ট ফোনে চ্যাটের অভ্যাস এখন ঘরে ঘরে৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কের হাতছানি শুধু নবীনদের নয়, জাল বিছিয়েছে প্রবীণদের দিনযাপনেও। বিছানায় শুয়ে ট্যাবে বই পড়ার নেশা কিংবা কমপিউটার বা টিভি স্ক্রিনে অপলক চোখ রাখার নজিরও বিরল নয় এতটুকু। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা, সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এলইডি-র নীল আলোকে ক্যানসারের অন্যতম কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই তাতে উদ্বেগ বেড়েছে সারা বিশ্বে।  

চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ হল আলোর রং। কারণ, ক্ষুদ্রতম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এই দৃশ্যমান নীল আলোর সবচেয়ে বড় উৎস যা, সেই এলইডি (লাইট এমিটিং ডায়োড) আজ সকলের রোজনামচায় ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। রাস্তাঘাটের আলো কিংবা জায়েন্ট স্ক্রিনের দৌলতে তার আত্মপ্রকাশ প্রথমে শহুরে জীবনে হলেও, স্মার্ট ফোন আর টিভি-র কল্যাণে এলইডি এখন মুছে দিয়েছে শহর ও গ্রামের ভেদাভেদ।।এক করে দিয়েছে প্রায় গোটা দুনিয়াকেই৷ আর তাতেই শঙ্কিত খোদ গবেষকরা। কেননা, চোখের সামনে স্মার্ট ফোনের উপস্থিতি আজকের দৈনন্দিন জীবনে কারো ক্ষেত্রেই ১০-১২ ঘণ্টার কম নয়।

চিকিৎসকদের মতে, রাতে শুয়ে স্মার্ট ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার চোখের নানা সমস্যা তৈরি করে। ফোন থেকে বের হওয়া নীল রশ্মি মস্তিষ্কের কাজে বাঁধা দেয়। এতে রাতের ঘুম ব্যাহত হয়। এছাড়া চোখে রক্ত সঞ্চালনও ব্যাহত হয়।

মাথা ঝুঁকিয়ে দীর্ঘ সময় মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে কাঁধের দিক থেকে ওজন সরাসরি মেরুদণ্ডের উপর না পড়ে পড়ছে ঘাড় ও মাথার পিছনের পেশীতে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘাড় ও মাথার সংযোগস্থলকে অতিরিক্ত চাপ বহন করতে হচ্ছে। এতে করে শরীরের ওই অংশের টেন্ডন ও লিগামেন্টের উপর খারাপ একটি প্রভাব পড়ছে। ক্রমাগত শরীর চাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে ওই সংযোগস্থলের চামড়া শক্ত হয়ে গিয়ে এই প্রবর্ধনের সৃষ্টি করছে। বিজ্ঞানীরা এই প্রবর্ধনের নাম দিয়েছেন ‘হেড হর্ন’, ‘ফোন বোনস’ কিংবা ‘উইয়ার্ড বাম্পস’। তবে এই সমস্যার আনুষ্ঠানিক নামকরণ এখনও করা হয়নি।

অনেকেই মোবাইলে পড়তে পছন্দ পড়েন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এর চেয়ে বই পড়া অনেক উপকারী। কারণ এক পাতা ই-বুক পড়তে যে সময় লাগে বইয়ের পাতায় চোখ বুলালে তার চেয়ে অনেক সময় কম লাগে। সেই সঙ্গে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে।

রাত জেগে দীর্ঘসময় মোবাইল দেখলে ক্ষুধা অনুভূত হয়। বেশি রাতে খাবার খেলে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

চিকিৎসকদের মতে, ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দু’ঘণ্টা আগে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। আর ঘুম ভালো না হলে শরীরে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে বিপাকে সমস্যা দেখা দেয়। তখন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া রাতে ভালো ঘুম না হলে সারাদিন ক্লান্ত লাগে। এতে দৈনন্দিন কাজকর্মও ব্যাহত হয়। 

অসময়ে মোবাইল ঘাঁটা ছাড়াও এমন বেশ কিছু বদঅভ্যাস আছে, যা ঘুমের দফারফা ঘটায়। যেমন: বিকেল বা সন্ধ্যায় কফি পান করা, ছুটির দিনে দীর্ঘক্ষণ ঘুম, অফিসের কাজ আবার বাসায় নিয়ে করা, বিছানায় কাজ করা, রাত করে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানোর আগে মদ্যপান। সময় থাকতে থাকতে সেগুলো বদলে ফেলা জরুরি। নয়তো পরে বিপদ বাড়তে পারে। সূত্র : সাইকোলজি টুডে 

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here