বিশেষ প্রতিনিধি, ঝিনাইদহঃ

৪র্থ ধাপে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে শনিবার। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর ও হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার নগরপিতা নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ করা হবে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে।

ইতিমধ্যে নির্বাচনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা নির্বাচন অফিস। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ব্যালট পেপার।

হরিণাকুণ্ডু ও কোটচাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশের পক্ষে ব্রিফিং করা হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে হরিনাকুণ্ডু থানা চত্বরে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

এসময় দিকনির্দেশনা দেন পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল আবুল বাশার, সহকারী পুলিশ সুপার শৈলকুপা সার্কেল আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে, বিকেল তিনটা থেকে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে ব্যালট পেপার, সিলসহ অন্যান্য ভোটের সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পুলিশ সদস্যদের সকল প্রকার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করবে। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নির্বাচনী এলাকায় টহল দিচ্ছে।

নির্বাচন উপলক্ষে পৌরসভা দুটিতে চার প্লাটুন বিজিবি, ৪৬৫ জন পুলিশ সদস্য, ২০৭ জন আনসার সদস্য, ২৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুইজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

কোটচাঁদপুর পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৪৯৩। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৪৮৫ এবং মহিলা ভোটার ১৪ হাজার আটজন। নয়টি ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৪টি।

হরিণাকুণ্ডু পৌরসভায় মোট ভোটার ১৭ হাজার ৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ আট হাজার ৩৯২ জন এবং মহিলা আট হাজার ৬৮৩ জন। নয়টি ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্র নয়টি।

হরিণাকুণ্ডুতে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে অস্বস্তিতে আ’লীগ, ৬ আওয়ামী লীগ নেতাকে বহিষ্কার

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই হৃদস্পন্দন বাড়ছে প্রার্থীদের মধ্যে। নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীদের ঘুম খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ আর দুই দিন পরই (আগামী শনিবার ৩০ জানুয়ারি) ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু পৌরসভার নির্বাচন। তাই পাড়া মহল্লা পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। মাইকংয়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে গ্রাম শহরের পরিবেশ। প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরা গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।

হরিণাকুন্ডু পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে সবর্ত্রই উৎসবমুখর পরিবেশ। আইনশৃংখলা রক্ষায় টহল জোরদার করা হয়েছে। পৌর এলাকার ৯টি ভোট কেন্দ্র ঝুকিপুর্ন হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোন অপ্রীকর ঘটনা না ঘটলেও অজনা আশংকা দিনকে দিন ভর করছে ভোটারদের মাঝে।

কারণ হিসেবে ভোরটাররা জানান, বিএনপি একক প্রার্থী দিতে পারলেও আওয়ামীলীগে একজন শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও অনেকের মধ্যে মান অভিমান কাজ করছে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে বিভেদ আর ফাটল ধরেছে বলে নৌকার সমর্থক ও ভোটারদের অভিমত। ফলে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ কাজ করছে। ইতিমধ্যে দলের হাই কমান্ড হরিণাকুন্ডু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মশিউর রহমান জোয়ারদার ও বর্তমান মেয়র রিন্টুসহ ৬ জনকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করেছে। এই বহিস্কারের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।

বহিস্কৃতদের ভাষ্য, তারা হরিণাকুন্ডু পৌর নির্বাচনে নৌকার পক্ষে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইলেও জেলা রাজনীতির বলি হয়েছেন তারা। যার প্রভাব পড়েছে ভোটারদের মধ্যে। তবে জেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের বক্তব্য সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বহিস্কার করা হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিসার রোকনুজ্জামান জানান, হরিণাকুন্ডু পৌর নির্বাচনে ৪ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এরা হলেন নৌকা প্রতিক নিয়ে ফারুক হোসেন (আ’লীগ), ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে জিন্নাতুল হক (বিএনপি), ইসলামী আন্দোলনের নাসির উদ্দীন হাত পাখা প্রতিক নিয়ে ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী হিসেবে জগ প্রতিক নিয়ে সাইফুল ইসলাম টিপু মল্লিক প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রতিদ্বিন্দতা করছেন।

আ’লীগের প্রার্থী ফারুক হোসেন জানান, তৃনমুলে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। ভোটাররাও নৌকার প্রতি আস্থা জানাচ্ছেন। ফলে জয় নিয়ে আমি আশাবাদী।

বিএনপি প্রার্থী জিন্নাতুল হক জানান, এটা হচ্ছে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। আমরা গনতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। তাই জয় পরাজয় নিয়ে ভঅবছি না। তবে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসতে পারলে ভোট বিপ্লব ঘটতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিশিষ্ট ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম টিপু জানান, নির্বাচনে প্রভাব ও পেশী শক্তি ব্যবহার না হলে আমি জয়ী হবো। তিনি বলেন, বেশির ভাগ তরুন ভোটার আমার জন্য কাজ করছেন। তিনি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।

কোটচাঁদপুরে সুবিধায় বিএনপি, ২ বিদ্রোহী নিয়ে চিন্তায় আ’লীগ!

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি’র একক প্রার্থী নিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। অন্যদিকে অওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীসহ আরো দু জন বিদ্রেহী প্রার্থী নিয়ে টেনশনে রয়েছে সরকারী দল। আগামী ৩০ জানুয়ারি দেশের প্রচীনতম এ পৌর সভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই প্রচার প্রচারনায় সরগরম গোটা পৌর এলাকার পাড়ামহল্লা। দেশের পৌরসভা গুলোর মধ্যে কোটচাঁদপুর পৌরসভা একটি প্রাচীন পৌরসভা।

১৮৮৪ সালে কোটচাঁদপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়। এটি একটি পুরানো শহর। এককালে এ শহর চিনি শিল্প হিসাবে পরিচিত ছিল। কোটচাঁদপুর ও আশেপাশের এলাকায় প্রায় ৫’শ ছোটবড় চিনি কারখানা ছিল। খেজুরে গুড় থেকে একেবারে দেশীয় পদ্ধতিতে এ চিনি তৈরি হতো। যশোর ডিস্ট্রিক গেজেটিয়ারের বর্নিত তথ্যে এ সব তথ্য জানা যায়। এ চিনি কলকাকাতা বন্দর দিয়ে বিলেতে রপ্তানী হতো। কোটচাঁদপুরে সাহেবদের বাস ছিল। তাদের চেস্টায় কোটচাঁদপুর পৌসভা স্থাপিত হয়।

জেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা যায়, এবার পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনিত মোঃ শাহাজাহান আলি, বিএনপি মনোনিত সাবেক মেয়র এস কে এম সালাউদ্দিন বুলবুল সিডল, সতন্ত্র সাবেক মেয়র মোঃ জাহিদুল ইসলাম জিরে ও সহিদুজ্জামান সেলিম। সহিদুজ্জামান সেলিম কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহবায়ক ও জাহিদুল ইসলাম আওয়ামী লীগ কর্মী। বিদ্রোহী হওয়ায় দল থেকে তাদের বহিস্কার করা হয়েছে।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি দলের কাছে মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তাই সতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। তার প্রচরনায় বাঁধা সৃষ্টির অভিযোগ করেন সরকার দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে। জাহিদুল ইসলাম জিরে অভিযোগ করেন, তার সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে। বিএনপি প্রার্থী সালাউদ্দিন বুলবুল সিডলও একই ধরনের অভিযোগ করেন। সিডল বলেন, সুষ্ঠ নির্বাচন হলে ধানের শীষ জয়ী হবে। কিন্তু এ সরকার সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচনকে ভয় পায়। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য মানুষ নৌকায় ভোট দিবে।

এ পৌর সভায় মেয়র পদে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দীতার সম্ভবনা থাকলেও ভোটারদের মধ্যে নানা সন্দেহ ও আতংক কাজ করছে। তথ্যমতে জামায়াতের এখানে শক্ত অবস্থান আছে। তাদের ভোটের উপর জয় পড়াজয় নির্ভর করছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here