সবুজদেশ ডেস্কঃ

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত হয় সে বিষয়ে আবারও তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে মার্কিন দুটি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদের দেওয়া সুপারিশে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকা সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন আফরিন। বৈঠকের বিষয়ে রাতে পররাষ্ট্র সচিব মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৈঠক চলাকালীন বিকালে ফেসবুকে একটি বিবৃতি দেয় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সম্প্রতি বাংলাদেশে সফর করা এনডিআই ও আইআরআই’র প্রতিনিধি দল যে সুপারিশ দিয়ে গেছে সে বিষয়ে মার্কিন অবস্থানও একই রকম। তারা চাচ্ছে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হোক; এবং সেটি যেন সহিংসতামুক্ত হয়। তাদের যে অবস্থান সেটি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আমরাও বলেছি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর এনডিআই এবং আইআরআইয়ের প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানেও দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার এবং সরকারের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। সরকারের যে প্রতিশ্রুতি আছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার সেটি বলেছেন। আমাদের ঐতিহাসিক যে পটভূমি আছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেখানে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান তুলে ধরেছিলেন। এ বিষয়ে আমাদের আর কিছু বলার ছিল না। আমরা শুধু বলেছি, যদি এনডিআই ও আইআরআই তাদের পর্যবেক্ষক দল পাঠায় তাহলে ইসির পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যতটুকু করার আছে, সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

এদিকে এই বৈঠকের বিষয়ে সোমবার বিকালে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পোস্টে বৈঠকের কয়েকটি ছবি যুক্ত করা হয়। এতে দেখা যায়, বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন। সেই পোস্টে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদ-উল আলমের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা (মার্কিন প্রতিনিধি দল) আনন্দিত। বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার শক্তিশালী বহুমুখী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও এর অনেক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে মার্কিন প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদারত্ব, মধ্যপ্রাচ্য, মার্কিন নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের সাম্প্রতিক সফর, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমর্থন। এছাড়া বাংলাদেশের মানুষ যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে তাদের ভোট দিতে পারে সেজন্য সরকারি প্রচেষ্টা নিশ্চিত করা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

র‌্যাবের স্যাংশন প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ব্রিফিংয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, র‌্যাবের স্যাংশনের বিষয়টি আমি তুলেছি তাদের কাছে। স্যাংশন তুলে নেওয়ার বিষয়ে আমাদের যে প্রচেষ্টা সেটি অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে আমরা ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি আমাদের ল’ ফার্মের মাধ্যমে। আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব ব্যক্তিগতভাবে যে স্যাংশনগুলো আছে সেগুলো যদি কেইস বাই কেস তুলে নেওয়া হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়বে। সহিংসতামুক্ত যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে সেখানেও হয়তো এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা বলেছি পাবলিক ডোমেইনে (জনসম্মুখে) তারা যদি এমন কিছু বলেন এবং সেটা যদি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হয় সেটাতে আমরা আপত্তি দিয়েছি। কিন্তু আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে বা উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে আলোচনার সময় যদি তাদের কোনো জিজ্ঞাসা থাকে, বক্তব্য থাকে তাহলে সেটি আমরা সবসময় উত্তর দিতে প্রস্তুত রয়েছি।

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হলো তাদের রাখাইন প্রদেশে প্রত্যাবর্তন করা। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। তারা বলেছে, এই প্রত্যাবর্তন নিরাপদ, টেকসই হতে হবে। রাখাইনের যে নিরাপত্তা অবস্থা সে বিষয়টিও মনে রাখতে হবে। আমরা বলেছি, আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না যাতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক কিছু আমরা করব না।

আমরা মিয়ানমার ও চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখব, যাতে দ্রুত প্রত্যাবর্তন শুরু করতে পারি। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন কোনো বাণিজ্যিক চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এর আগে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার।

সোমবার দুপুরে তিনি ঢাকা পৌঁছান। আজ মঙ্গলবার তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। পুরো সফর শেষে তিনি প্রতিবেদন প্রকাশ বা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সফরের বিষয়ে জানাবেন বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব।

সংলাপের বিষয়ে আফরিন আখতার কোনো আলোচনা করেছেন কিনা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটি রাজনৈতিক একটি বিষয়। এ বিষয়ে তিনি কোনো প্রশ্ন করেননি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here