চুয়াডাঙ্গাঃ
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় সদ্যভূমিষ্ঠ নবজাতককে বিক্রি করে দিলেন এক প্রসূতি। স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি পুত্রসন্তান বিক্রি করেন। বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার নতিডাঙ্গা আবাসনে।
পার্শ্ববর্তী গোয়ালবাড়ি গ্রামের নিঃসন্তান এক ব্যক্তির কাছে সন্তান বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে। এর আগেও ওই নারী তার আরেক সন্তানকে বিক্রি এবং এক সন্তানকে হত্যা করে পুঁতে রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের নতিডাঙ্গা আবাসনের ৪নং শেডের ৫নং কক্ষে বসবাস করেন খাইরুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী মিনারা খাতুন (৩২)। আর প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী নতিডাঙ্গা গ্রামে থাকেন খাইরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার ভোরে প্রসব বেদনা উঠলে সেবিকা হেনা খাতুন ও আবাসনের বাসিন্দা বারেক আলীর স্ত্রী আমেলা খাতুনের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন মিনারা। সকাল ৮টার দিকে পুত্রসন্তান প্রসব করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই মিনারা খাতুন তার সন্তান হেনা খাতুনের হাতে তুলে দেন।
মিনারা খাতুন বলেন, ‘আমার গর্ভবতী হওয়ার কথা শুনে ৮ মাস আগে আমাকে রেখে আমার স্বামী চলে যায়। এখানে (আবাসনে) আর আসে না। মাঝে মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা হয়। কন্যাসন্তান হলেই আমার স্বামী আমাকে মেনে নেবে বলে জানায়। কিন্তু আমার ছেলে হওয়ায় আমি অন্যকে সন্তান দিয়ে দিয়েছি।’
নবজাতকের পিতা খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দুই সংসারে প্রথম স্ত্রীর ৩ ছেলে। দ্বিতীয় স্ত্রীরও এক ছেলে আছে। আমি আর ছেলেসন্তান নিতে চাই না। তবে আমার সন্তানকে বিক্রি করা হয়েছে কিনা আমি জানি না।’
আলমডাঙ্গা উপজেলা ব্র্যাক সংস্থার সেবিকা হেনা খাতুন বলেন, মোবাইল ফোনে আমাকে ডেকে নেয়ার কারণে তাদের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। পুত্রসন্তান হওয়ার পর মিনারা তার সন্তানকে অন্য কারও কাছে দিয়ে দিতে বলেন। পরে আমি পার্শ্ববর্তী গোয়ালবাড়ি গ্রামের মনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নিঃসন্তান বুলবুলি খাতুনের কাছে ওই সন্তান দিয়ে দিই।
এ বিষয়ে আবাসন পরিচালনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদার খাঁ অভিযোগ করে বলেন, বছর দুয়েক আগেও পুত্রসন্তান প্রসব করেন খাইরুল ইসলামের স্ত্রী মিনারা খাতুন। সেই সন্তান তারা হত্যা করে নদীর পাশ পুঁতে রাখে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সেখান থেকে লাশ তুলে গ্রামের কবরস্থানে নিয়ে একাই দাফন করেন খাইরুল ইসলাম।
আবাসনের কাশেম আলী বলেন, মিনারা খাতুন বছর চারেক আগে তার প্রথম সন্তান ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে কুষ্টিয়া এলাকায় বিক্রি করেছেন।
স্থানীয় বাড়াদী ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এলাকার লোকজনের মুখে শুনছি মিনারা খাতুন সন্তান জন্ম দেয় আর বিক্রি করে।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লিটন আলী বলেন, বিষয়টা আমার জানা ছিল না। ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিচ্ছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।