ফারুক নোমানীঃ

সন্তান:
হৃদয়ের সবটুকু আদর-সোহাগ, মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে যে শব্দটি বলা হয় তা হলো ‘সন্তান’। সন্তান সংসারের আলো। বংশের বাতি। ভবিষ্যত প্রজন্মের ধারক। তাই দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই মুরব্বীদের চোখে একটি স্বপ্ন জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে- কবে আসবে এ পরিবারে সকলের মুখ আলোকিত করে মায়ের কোলে ফুটফুটে সন্তান! এই সন্তান বুকে পেয়েই মা ভুলে যান তাঁর দীর্ঘ গর্ভধারণের অবর্ণনীয় কষ্ট-যন্ত্রণা। এমনকি প্রসবের হুশ-বেহুশ, জন্ম-মৃত্যুর এই কঠিন সময়েও সন্তানের মুখটি দেখেই তিনি মুছে ফেলেন মৃত্যসম যাতনা। এই হলো সন্তান। সারাদিনের প্রচণ্ড কাঠফাটা রোদে ঘাম ঝরানো পরিশ্রম শেষে বাড়ি ফিরে সন্তানের মুখখানি দেখে ভুলে যান পিতা তার সকল কষ্ট-ক্লান্তি। বুকে জড়িয়ে ধরেন আদরের ধন, নয়নের মনি, কলিজার টুকরা সন্তানকে। চুমোয় সোহাগে সিক্ত করেন ভালোবাসার এই ফুল, চোখের শীতলতাকে।
পৃথিবীতে সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী এমন কোন পিতার সন্ধান পাওয়া যাবে না যিনি তার সন্তানকে ভালোবাসেন না। পিতা অর্থই যেন মাথার উপরে থাকা মেঘের ছায়া। সন্তানের জন্য হৃদয়ের সবটুকু মায়া-মমতা, স্নেহ-প্রীতি উজাড় করে দেয়া একটি নি:স্বার্থ ত্যাগী মানুষ। তার প্রতিটি মুহূর্তই পার হয় সন্তানের কল্যাণে। তার ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে। আরবি কবি কত সুন্দর করে বলেছেন- ‘আমাদের সন্তানরা যেন আমাদের বুকের ভেতরে থাকা তাজা কলিজা, যা ভূপৃষ্ঠের উপর করছে চলাফেরা। তাদের কারো উপর বাতাস বইলেও আমার চোখের পলক ফেলা অসম্ভব হয়ে ওঠে।’
মানবিক ও প্রাকৃতিকভাবেই মানুষ সন্তানের জীবনে আলো জ্বালতে নিজেকে মোমের বাতির মত নি:শ্বেষ করে দেয়। তিলেতিলে নিজেকে ক্ষয় করে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে । কারণ এই সন্তানই তার হাতের লাঠি। অমূল্য সম্পদ ও শ্রেষ্ঠ সম্বল। দুনিয়াতে ও আখিরাতে। দুনিয়ায় বার্ধক্যে সন্তান যেমন পিতার হাতের লাঠি, তেমনি মৃত্যুর পরও সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির মত মহাবিপদের সময়ে নেককার সন্তান আসবে তার উপকারে।
তাই সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি এক মহান নিয়ামত। সন্তানহারা ব্যক্তিই বোঝেন এ নিয়ামতের কদর কত! জাগতিক সকল ঐশ্বর্যের মধ্যে বসবাস করেও সন্তানহীন মা-বাবার জীবনটা কতশূন্য তা সহজেই অনুমেয়। সবকিছু থেকেও কী যেন না থাকার মহাশূন্যতা পীড়া দেয় তাদের প্রতিটি ক্ষণে। প্রতিটি মুহূর্তে।
সন্তান সম্পর্কেই আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত হাদিসটি কতইনা বাস্তবসম্মত! নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘সন্তান হলো হৃদয়ের ফল। সন্তান ভীরুতা কার্পণ্য ও মনবেদনার উৎস।’ ( মাজমাউয যাওয়াইদ ১৩৪৭৮, কানযুল উম্মাল ৪৪৪৮৬, কাশফুল আসতার ১৮৯২, জামউল জাওয়ামি’ ১০৯২৩)।
চমৎকার একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা.। নবীজী সা. বলেছেন- সন্তানের সুবাস বেহেশতের সুবাস। ( মাজমাউয যাওয়াইদ ১৩৪৮৭, তাবরানী আওসাত ৫৮৬০, সাগীর ৮২৩, শুয়াবুল ঈমান ১১০৬১, ১০৫৫০, কানযুল উম্মাল ৪৪৪২৬)

সন্তান প্রার্থনা:
সভ্যতার এই উৎকর্ষতার যুগেও আমরা অনেকেই প্রাচীন কুসংস্কার ও শিরকের ভেতরে ডুবে আছি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সন্তান দানের একমাত্র মালিক সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তা’য়ালাই। কুরআনুল কারীমে ঘোষণা হয়েছে: ‘নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা’য়ালারই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র-সন্তান দান করেন, অথবা তাদেরকে দান করেন উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।’ ( সূরা শূরা : ৪৯-৫০)
সুতরাং সন্তান কামনার জন্য বিভিন্ন মাজার, দরগা ও দরবারে মানত করে আল্লাহর কাছে সবচে’ বড় অপরাধ শিরকে যেন আমরা জড়িয়ে না পড়ি। কুনআনুল কারীম অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা জানতে পাই যে, অনেক নবী ও নেককার মানুষ আল্লাহর কাছে বিনীত প্রার্থনা করেছেন সন্তান লাভের জন্য। আল্লাহ তাদের প্রার্থনা কবুল করেছেন ও নেককার সন্তান দান করেছেন। দেখুন নবী হযরত যাকারিয়া আ. এর বিবরণ। বাধ্যর্কের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে তিনি যখন তার পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়ে আশঙ্কা করলেন তখন আল্লাহর কাছে একটি নেককার সন্তানের জন্য প্রার্থনা করলেন। যে সন্তান তাঁর ও ইয়াকুব বংশের প্রতিনিধিত্ব করবে। আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনুল কারীমে তাঁর আলোচনা করেছেন এভাবেই ‘সেখানেই যাকারিয়া তাঁর পালনকর্তার নিকট প্রার্থনা করলেন: বললেন, হে, আমার পালনকর্তা! আপনার নিকট থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান করুন, নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ (সূরা আলে ইমরান: ৩৮) । অন্যত্র তিনি আরো বলেন: ‘এটা আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহের বিবরণ তাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি। যখন সে তাঁর পালনকর্তাকে আহ্বান করেছিল নিভৃতে। সে বলল, হে আমার পালনকর্তা আমার অস্থি বয়স-ভারাবনত হয়েছে, বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়েছে, হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে কখনো আমি বিফলমনোরথ হইনি। আমি ভয় করি আমার পর আমার স্বগোত্রকে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। কাজেই আপনি নিজের পক্ষ থেকে আমাকে একজন কর্তব্য পালনকারী দান করুন, সে আমার স্থলাভিষিক্ত হবে ও হবে ইয়াকুব বংশের এবং হে আমার পালনকর্তা, তাকে দান করুন সন্তোষজনক।’ (সূরা মারইয়াম:২-৭) নবী যাকারিয়া আ. বার্ধ্যকের ভারে যখন নূয্য হয়ে পড়েছিলেন, চুল-দাড়ি সব সাদা হয়ে গিয়েছিল, শরীরের অস্থি-মজ্জাও হয়ে পড়েছিল দুর্বল, আবার স্ত্রীও ছিলেন বন্ধ্যা। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এমন একটি অসম্ভব মুহূর্তেও আল্লাহ তাঁকে নেককার সন্তান দান করেছিলেন।
আরো দেখুন পিতা ইবরাহীম আ. এর ইতিহাস। তিনিও ছিলেন নি:সন্তান। বার্ধক্যে এসে তিনিও আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে একটি নেককার সন্তান কামনা করে ফরিয়াদ করলেন। ফলে ৮৬ বছর বয়সে আল্লাহ তাঁকে পুত্র ইসমাঈলের জন্মের সুসংবাদ দেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- ‘সে বলল: আমি আমার পালনকর্তার দিকে চললাম, তিনি আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন। হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক পুত্র সন্তান দান করুন। সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম।’ ( সূরা সাফফাত : ৯৯-১০১)
আমারা দু’জন সম্মানিত নবীর বিষয়ে জানলাম যে, তাঁরা ছিলেন নি:সন্তান। তবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমেই দু’জন নবীকেই তিনি নেককার সন্তান দান করেছেন। এখান থেকে আমরা এটাই শিখতে পারি যে, সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করতে হবে। অন্য কোথাও নয় এবং এটাই আল্লাহর বিধান। কুরআনুল কারীমে আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দাদের গুণাবলীর ভেতরে তিনি উল্লেখ করেছেন-
‘এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ করুন।’ (সূরা ফুরবান: ৭৪)। তাই প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব আল্লাহর কাছে নেককার স্ত্রী/স্বামী ও সন্তানের জন্য প্রার্থনা করা।

সন্তান প্রতিপালনে মহাপুণ্য:
ইসলাম সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার মমতা, ভালোবাসা ও সন্তানের কল্যাণে প্রতিটি ভালো কাজকে মহাপুণ্য বলে ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি নবীজী সা. নিজে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। সন্তান লালন করেছেন এবং সন্তানের জন্য তিনি উম্মতকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এ সম্পর্কেই আনাস ইবনু মালিক রা. বলেন, নবীজী সা. বলেছেন: তোমরা অধিক ভালোবাসা ও অধিক সন্তানদানকারীণী নারীদের বিবাহ কর। আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের উপর গর্ব করবো।
(আবু দাউদ ২০৫২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪০২৮, কানযুল উম্মাল ৪৪৫৬১, ৪৪৫৯৭, ৪৪৫৯৮, ৪৪৫৯৮, ৪৫৫৯৬, মাজমাউয যাওয়াইদ ৭৩০৭, ৭৩৩৯)।
পিতা-মাতার পরিচয় তাঁরা নিজেরাই। মা-বাবা সন্তানকে ভালোবাসবেন এটা নীতিকথা ও আইনের মাধ্যমে জানানোর প্রয়োজন নেই,আল্লাহ নিজেই সৃষ্টিগতভাবে সন্তানের ভালোবাসা তাদের ভেতরে বদ্ধমূল করে দিয়েছেন। তাই স্বভাবগত কারণেই মানুষ সন্তানকে ভালোবাসে। আর ইসলাম এই ভালোবাসাকে আরো গভীর ও প্রাণবন্ত করতে এটাকেও বড় সাওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা দিয়েছে। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘বাবা যখন তার সন্তানের দিকে তাকায় এবং খুশি অনুভব করে তখন সে একজন গোলাম আযাদ করার পুণ্য লাভ করে। প্রশ্ন কার হলো – হে আল্লাহর রাসূল! যদি কেউ তিনশ’ ষাট বার তাকায়? বললেন: আল্লাহু আকবার – আল্লাহর ভাণ্ডার এরচেয়েও বড়।’ (তাবরানী আওসাত ৮৬৪৬, তাবরানী কাবীর ১১৬০৮, মাজমাউয যাওয়াইদ ১৩৪৮৭, শুয়াবুল ঈমান ৭৮৫৭, মুসনাদে দাইলামী ১২৭২, কানযুল উম্মাল ৪৫৪৬১, ৪৫৫০৭)।
আবার আপনার সন্তানকে মানুষের মত মানুষ বানাতে যে ব্যয় আপনি বহন করছেন তা শুধু ব্যয়ই হচ্ছে না, বরং তা আল্লাহর কাছে সাওয়াব হিসেবে জমা থাকছে। এ বিষয়ে আবু হুরায়রা রা.বলেন, নবীজী সা. বলেছেন, যে দীনার (মূদ্রা) তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ, যে দীনার তুমি ব্যয় করেছ ক্রীতদাস মুক্তির জন্য, যে দীনার তুমি সদকা করেছ মিসকিনের জন্য, যে দীনার তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করেছ, সাওয়াবের দিক হতে সর্বোত্তম হল, যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করেছ। (সহীহ বুখারী ২৭৪২, সহীহ মুসলিম ৯৯৫, আহমাদ ১০১১৯)। আপনার সন্তান মানুষও হয়ে যাবে আবার তার জন্য খরচ করা সম্পদও জমা থাকবে পরপারের একাউন্টে। অভিভাবকদের জন্য বড় আনন্দের কথা এটি।
সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সে সন্তানই। সকলের ব্যাপারেই ইসলামে সাওয়াবের ঘোষণা এসেছে। তবে কন্যা সন্তানকে অনেকেই অবহেলা করে, তাই কন্যার ফযীলাত আরো বধির্ত করা হয়েছে। উকবা ইবনু আমের রা. বলেন,নবীজী সা. বলেছেন: যার তত্ত্বাবধানে তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে,আর সে তাদের লালন-পালনের কষ্ট সহ্য করেছে এবং সামার্থ্য অনুযায়ী তাদের পানাহার ও পোষাক পরিধানের ব্যবস্থা করেছে, কিয়ামতের দিন সে কন্যা সন্তানেরা তার জন্য জাহান্নামের পথে প্রতিবন্ধক ও বাধা হয়ে দাঁড়াবে। (ইবনু মাজাহ :২৬১)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত- নবীজী সা. বলেছেন: যার তিন জন কন্যা সন্তান হবে আর সে তাদের লালন-পালন করে, তাদের প্রতি মমতা প্রদর্শন করে এবং তাদের ভার বহন করে তাহলে তার বেহেশত নিশ্চিত। প্রশ্ন করা হলো – হে আল্লাহর রাসূল! যদি দুইজন হয়? বললেন: দুইজন হলেও। জাবের বলেন: কারো কারো ধারণা, যদি কেউ বলতো – একজন হলে? তাহলে নিশ্চয়ই নবীজী বলতেন: একজন হলেও। (ইবনু মাজাহ ৩৬৬৯, আহমাদ ৮৪২৫, তাবরানী আওসাত ৪৭৬০, মাজমাউয যাওয়াইদ ১৩৪৯০, সহীহাহ ২৯৪, ১০২৭)
আয়শা রা. বলেন, আমার নিকট একবার এক মিসকিন মহিলা আসলো, যার সাথে ছিল তার দু’টি কন্যা। আমি তাদের খাওয়ার জন্য তিনটি খেজুর দিলাম। তখন সে মহিলা প্রত্যেক কন্যাকে একটি করে খেজুর দিল এবং নিজে একটি খাওয়ার জন্য মুখের নিকট নিল। তখন তার কন্যাদ্বয় সে খেজুরটিও চাইল। তখন মা খেজুরটিকে দু’টুকরো করে দু’জনের ভেতর ভাগ করে দিলো। আয়শা রা. বলেন, আমি পরে এ ঘটনা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালাম, তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ এ মেয়েদের কারণে তার জন্য জান্নাত অবধারিত করে দিয়েছেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। (মুসলিম)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত- নবীজী সা. বলেছেন: আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তির তিনজন কন্যা কিংবা তিনজন বোন থাকবে আর সে তাদের দেখাশোনা ও ব্যয়ভার বহন করবে- সাবালক হওয়া পর্যন্ত, সে আমার সাথে এইভাবে বেহেশতে থাকবে- বলে তিনি বৃদ্ধা ও তর্জনী এক সাথে করে দেখান। ( তাবরানী আওসাত ৫৪৩২, মাজমাউয যাওয়াইদ ১৩৪৯৫)
এভাবেই নবীজী সা. সন্তান লালনের মাধ্যমে মহাপুণ্য অর্জনের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন মানুষকে।

মহাবিপদে সম্বল:
দুনিয়ায় সন্তান যেমন পিতা-মাতার শ্রেষ্ঠ সম্পদ, তেমনি আখেরাতেও মুক্তির উপায়। মৃত ব্যক্তি কবরে সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির মত মহাবিপদে থাকে। বিশেষভাবে তখন সন্তানের দুআ তার উপকারে আসে। কবরে থেকেও সে সন্তানের দুআর মাধ্যমে উপকৃত হতে থাকে। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবীজী সা. বলেছেন, মানুষ মারা গেলে তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তবে তিনটি আমলের ধারা অব্যাহত থাকে, ১) সদকায়ে জারিয়া, ২) উপকারী বিদ্যা, তার মৃত্যুর পরও যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হতে থাকে, ৩) নেককার সন্তান, যে পিতা-মাতার জন্য দুআ করে। (সহীহ মুসলিম : ১৬৩১, তিরমিযী : ১৩৭৬, নাসায়ী : ৩৬৫১, দারামী : ৫৭৮, আহমাদ : ৮৮৪৪)
আবু হুরায়রা রা. থেকে আরো বর্ণিত, নবীজী বলেছেন: জান্নাতে আল্লাহ তা’য়ালা নেককার বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন, তখন সে জিজ্ঞেস করে- হে আমার প্রতিপালক এটা কোত্থেকে আসল? তখন বলা হবে ‘তোমার সন্তান কর্তৃক তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে। ( ইবনু মাজাহ : ৩৬৬০, আহমাদ :৮৭৫৮, ১০৬১০)
এ ছাড়াও সন্তানকে যত ভালো কাজ পিতা শিখিয়েছেন , মৃত্যুর পরও তার সাওয়াব তিনি পেতে থাকবেন। আনাস রা. বলেন, নবীজী সা. বলেছেন, ভালো কাজের পথ দেখানো তা সম্পাদন করার মতই। (তিরমিযি: ২৬৭০)

প্রিয় পাঠক, এই হল সন্তান। আপনার বড় সম্পদ। দুনিয়াতে ও আখেরাতে। তাই আসুন, সন্তানকে মানুষের মত মানুষ বানিয়ে উভয় জগতে সুখ-সমৃদ্ধি, মুক্তি ও সফলতা অর্জন করি।

লেখক: ইমাম, মেইন বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদ কালীগঞ্জ।
মুহাদ্দিস, বলিদাপাড়া মাদরাসা, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here