বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

আবুল কালাম শেখ গ্রামের একজন ক্ষুদ্র মুদি দোকানী। উপজেলা সদরের সরকারী অফিসে যাওয়া তার জন্য যেমন কঠিন তেমন কষ্টকরও বটে। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয় পত্রে পিতার না ভুল হয়েছে তাতো ঠিক করা প্রয়োজন। তবে গ্রামের স্কুল মাঠে যাওয়া তার জন্য কোন ব্যাপারই না। আর নির্বাচন অফিস যখন বাড়ির কাছে তখন কে এমন সুযোগ হারায়? এজন্য তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য এসেছেন গাংনী স্কুল মাঠে। আবুল কালাম শেখ বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার গাংনী সরকার পাড়া গ্রামের মুনসুর শেখের ছেলে।

শুধু আবুল কালাম নয় এরকম প্রায় গ্রামের পাঁচ হাজার সাধারন মানুষ গাংনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এসে সরকারী বিভিন্ন সেবা গ্রহন করেছে। আর উপজেলা পর্যায়ের সরকারী সব অফিস নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে সেবা প্রদানের এই উদ্যোগ নেয় মোল্লাহাট উপজেলা প্রশাসন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ব্যতিক্রমধর্মী সমন্বিত মাঠ সেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলা প্রশাসন। গতানুগতিক সরকারি সেবা থেকে বের হয়ে বাড়ির কাছে সর্বপ্রথম এসব সেবা পেয়ে খুশি হয়েছেন স্থানীয় সেবা গ্রহিতারা। শুধু মোল্লাহাট বা বাগেরহাট নয় দেশের মধ্যে এমন উদ্যোগ এই প্রথম নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাফ্ফারা তাসনিম।

দিনব্যাপি উপজেলার গাংনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ত্রিশটি স্টলে উপজেলা পর্যায়ের ৩৭টি দপ্তর স্থানীয়দের বিভিন্ন সেবা প্রদান করে।

জমির নামজারি, খাজনা প্রদান, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানসহ ভূমি সংক্রান্ত নানান সেবা, স্বাস্থ্য সেবা, প্রাণি সম্পদ সংক্রান্ত সেবা, ব্যাংকিং সেবা, স্থানীয় সরকার বিভাগের সেবাসহ উপজেলা প্রশাসনের সকল সেবা প্রদান করা হয় এই মাঠ থেকে।

গাংনী উত্তর পাড়ার সরোয়ার হোসেন জমিন নামজারি করতে আসেন। একেবারেই কম খরচে কোন প্রকার দালাল ছাড়া এই সেবা পেয়ে তিনি হতবাক হয়ে বলেন, এতদিন শুনেছি জমির নামজারি করতে অনেক টাতা লাগে। এখন দেখছি সামান্ন টাকায় কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই এটা সহজে করা যায়।

সেবা গ্রহিতরা বলেন, আমরা কখনও চিন্তাও করিনি স্যাররা আমাদের কাছে এসে সেবা প্রদান করবেন। এই ধরণের সেবা পেয়ে আমরা খুশি হয়েছি।

মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাফ্ফারা তাসনিম বলেন, নানা হয়রানির কারণে কাঙ্খিত সেবা পায় না সাধারন মানুষ। একদিকে সময় নষ্ট, অন্যদিকে অর্থের অপচয় হচ্ছে তাদের। এর থেকে মুক্ত করতে এবং মানুষের দোড় গোড়ায় সেবা পৌছে দিতে আমাদের এই আয়োজন। ভবিষ্যতেও আমরা এধরণের আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

মোল্লাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুল আলম ছানা বলেন, আগে মানুষ জানত না কোন দপ্তর থেকে কি ধরণের সেবা নেওয়া যায়। আজ এই সমন্বিত মাঠ সেবার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এই প্রথম সকল দপ্তরের সেবা সম্পর্কে জানতে পারল। সেই সাথে তারা সেবা পেয়ে আনন্দিত। আমি সরকারের এ ধরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

সমন্বিত মাঠ সেবার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে অনিয়ম দূর্নীতি ও হয়রানি মুক্তভাবে মানুষের দোড়গোড়ায় সেবা পৌছে দেওয়ার লক্ষেই এ ধরণের আয়োজন করা হয়েছে। সকল শ্রেণির মানুষের সহযোগিতায় সরকারি সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। পর্যায়ক্রমে জেলার সকল উপজেলায় এ ধরণের আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here