নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাঃ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ডেঙ্গু ও মানুষ পিটিয়ে মারার ঘটনাগুলোর ব্যর্থতা আড়াল করতে বিরোধী দলের সংশ্লিষ্টতা খুঁজছে সরকার। সরকার এডিস মশা মারতে পারে না, কিন্তু ঠিকই বিএনপি মারতে পারে। ডেঙ্গু নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ এবং মানুষ পিটিয়ে মারার গুজব নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) জাবেদ পাটোয়ারীর বক্তব্যের জবাবে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) খুলনার সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে আজকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্টুন-টার্টুনও বেরুচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে একটা কার্টুনে দেখলাম, ডেঙ্গু ও পিটিয়ে মারার ভয়ে সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষকে পুরোপুরি অনিরাপদ ও অনিশ্চিত একটা অবস্থার মধ্যে ফেলা হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পিটিয়ে মারায় গতকাল তথ্যমন্ত্রী সাহেব বলেছেন, বিরোধী দলের সংশ্লিষ্টতার গন্ধ পাচ্ছেন। কোনও কিছু ঘটলেই তারা বিরোধী দলের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়। এটি তাদের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।’

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির একটি মিছিল। ছবিঃ সবুজদেশ নিউজ ডটকম।

খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই বিভাগীয় সমাবেশ হয়। এতে যশোর, নড়াইল, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন প্রভৃতি জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার প্রতিকৃতি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগানে মুখর ছিল পুরো সময়। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের সময়ে এই মাঠে খালেদা জিয়া বক্তব্য দিয়েছিলেন। এরপর এই মাঠে বিএনপির কোনও সমাবেশ হয়নি।

সমাবেশে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে নেতাকর্মীদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান ফখরুল। বৈরী আবহাওয়া ও সরকারের বাধা ডিঙিয়ে সমাবেশে ব্যাপক নেতাকর্মীর উপস্থিতির জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অভিনন্দন জানান বিএনপি মহাসচিব।

বন্যার কারণে বিভাগীয় অন্য সমাবেশগুলো স্থগিত করার কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, দলের ত্রাণ কমিটিগুলো দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের কাজ শুরু করেছে।

খুলনা বিভাগীয় সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবিঃ সবুজদেশ নিউজ ডটকম।

প্রিয়া সাহার বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেখুন আজকে কত ভয়ানক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে বাংলাদেশকে পুরোপুরি নতজানু, পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য। বিভিন্নভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেই চক্রান্ত চলছে। আমরা জানি না, আমরা পত্রিকায় পড়ছি প্রিয়া সাহা নামে এক ভদ্রমহিলা ওয়াশিংটনে কী বক্তব্য দিয়েছেন। যে বক্তব্যের জন্য আজকে আওয়ামী লীগের লোকেরা নিজেরাই ক্ষুব্ধ হয়ে গেছেন।’

ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম দিন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, তার (প্রিয়া সাহা) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত। এরপরের দিন তিনি বললেন- না, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে দেওয়া উচিত। তিনি (প্রিয়া সাহা) আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। যে ভিডিও টেলিফোন কনভারসেশন বেরিয়ে এসেছে সেখানে তিনি বলেছেন, “এটা তো আমার কথা নয়, এটা প্রধানমন্ত্রীর কথা”।’

ফখরুল প্রশ্ন করেন, ‘আমরা জানতে চাই, দেশবাসী জানতে চায় কোনটা সত্যি? এটা প্রধানমন্ত্রীর কথা, নাকি প্রিয়া সাহার কথা? আমরা জানতে চাই, এই চক্রান্ত কিসের চক্রান্ত? জাতীয়-আন্তর্জাতিক চক্রান্ত বলা হচ্ছে, সেই আন্তর্জাতিক চক্রান্তটা কী? এটা কি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে, দেশের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। অবশ্যই এর জবাব এই সরকারকে দিতে হবে।’

কিছু পত্রিকার খবর প্রকাশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচনে সরকারি দলকে পরাজিত করার জন্য আমরা ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। কিছু মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলছে, বিএনপি যে মিটিং-টিটিং করছে তা ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য করছে।’

সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীরা। ছবিঃ সবুজ দেশ নিউজ ডটকম।

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার ঘোষণা দিতে চাই– ২০ দল ঠিক আছে, ঐক্যফ্রন্টও ঠিক আছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারকে পরাজিত করবো, নেত্রীকে মুক্ত করবো।’

পাটকল শ্রমিকদের চরম দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে অবিলম্বে তাদের ন্যায্য মজুরি কাঠামোর দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

জনগণ আপনাদের সার্টিফিকেট পড়তে চায় না: ভারতের হাইকমিশনারকে গয়েশ্বর

খুলনার সমাবেশে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করায় ভারতীয় হাইকমিশনারের সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সমাবেশে ভারতীয় হাইকমিশনারের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ভারতীয় হাইকমিশনারের একটা বক্তব্য দেখলাম দৈনিক পত্রিকায়। তাকে সম্মান জানিয়ে বলছি– তিনি বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশের সরকার নাকি বিপুল বিজয় নিয়ে সরকার গঠন করেছে। বাহ! ভারতের হাইকমিশনার আপনি। ভারতের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির বিজয় আর শেখ হাসিনার বিজয় আপনি এক মাপকাঠিতে মাপলেন।

‘সেই কারণে বলবো, আপনারা বিদেশিরা যারা এই সরকারকে যত বৈধ্তার সার্টিফিকেট দেন না কেন, জনগণ আপনাদের সার্টিফিকেট পড়তে চায় না, শুনতে চায় না। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভাগ্য তারা পূরণ করবে। যে দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে পারে, তারা দেশে গণতন্ত্রও ফিরিয়ে আনতে পারবে।’

খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে মঞ্চে উপস্থিত স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ছবিঃ সবুজ দেশ নিউজ ডটকম।

মহানগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। মহানগর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ও জেলা সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খানের পরিচালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মশিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, কবীর মুরাদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সোহরাবউদ্দিন, আজিজুল বারী হেলাল, আসাদুজ্জামান, শামীমুর রহমান শামীম, রফিকুল ইসলাম বকুল, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নেওয়াজ হালিমা আরলি, অমলেন্দু অপু, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, আমিরুজ্জামান শিমুল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, যুবদলের মোরতাজুল করীম বাদরু, মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জু্য়েল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মৎস্যজীবী দলের একেএম ওয়াজেদ বক্তব্য রাখেন।
খুলনার এসএম শফিকুল আলম মনা, গাজী আবদুল হক, সাহারুজ্জামান মোর্তজা, যশোরের বিলকিস ইসলাম, বাগেরহাটের এমএ সালাম, সাতক্ষীরার রহমতউল্লাহ পলাশ, নড়াইলের বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন জেলার নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে মাসুদ অরুন, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মজিবুর রহমান, টিএস আইয়ুব, ইশতিয়াক আজিজ, উলফাত শায়রুল কবির, ইয়াসীন আলী প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here