সবুজদেশ ডেস্কঃ

ঘুষ ছাড়া কোনো দলিলেই স্বাক্ষর করেন না সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার।

রীতিমতো সাবরেজিস্ট্রি অফিসকে ঘুষের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন তিনি ও তার সহযোগীরা।

ইতিমধ্যে তার ঘুষ নেয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।

ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, সুব্রত কুমার দাস ও নকল নবিশ সুমনসহ বেশ কয়েকজন অসাধু ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারী দলিল গ্রহীতাদের কাছ থেকে সরাসরি ঘুষ নিচ্ছেন।

গত ১৫ আগস্ট নিজের ফেসবুক পেজে শাহজাদপুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ঘুষ বাণিজ্যের এই ভিডিওটি পোস্ট করেন শাহজাদপুর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি সোহেল রানা।

এর পরই দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন জেলা রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মঞ্জুরুল ইসলাম।

তবে ভিডিও প্রসঙ্গে অভিযুক্ত সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার বলেন, একটি অসাধু মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আমি বা আমার অফিসে কোনো প্রকার ঘুষ নেয়া হয় না। আপনারা যা শুনেছেন তা সঠিক নয়।

যদিও সাংবাদিকদের হাতে আসা তার ২৩ ভিডিওফুটেজ বলছে ভিন্ন কথা। ভিডিওফুটেজগুলোর একটিতে দেখা যায়, সুব্রত কুমার দাস নিজেই একজন দলিল লেখকের কাছ থেকে ১৫শ’ টাকা ঘুষ নিচ্ছেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য সাবরেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারী আনিছের কাছে তিন হাজার টাকা দেন এক দলিল গ্রহীতা। তখন আনিছ বলেন, স্যার বলেছেন সাড়ে তিন হাজার টাকা লাগবে। দলিল গ্রহীতা সাবরেজিস্ট্রারকে ফোন দিতে বলেন। আনিছ সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাসকে ফোন দিয়ে জানান, সাড়ে ৩ হাজার টাকার কমে হবে না। বাধ্য হয়ে ওই গ্রহীতা সাড়ে ৩ হাজার টাকাই দেন।

সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাস ঘুষ ছাড়া কোনো দলিলই পাস করেন না বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন দলিল লেখকরা।

সাধারণ দলিলপ্রতি দেড় হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা এবং হেবা দলিলের জন্য ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত।

তার ঘুষ নেয়ার বিষয়ে প্রতিবাদ করায় ৫ জন দলিল লেখক ইতিপূর্বে সাসপেন্ড হয়েছেন বলে জানান বর্তমান দলিল লেখকরা।

ভিডিও ফাঁসকারী দলিল লেখক সোহেল রানা বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যোগ দেয়ার পর থেকেই শাহজাদপুর সাবরেজিস্ট্রার অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন সুব্রত কুমার দাস। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন দুই কর্মচারী সুমন ও আবদুস সালাম।

এতো দুর্নীতি আর সইতে না পেরে প্রমাণ হিসেবে গোপনে তোলা তার ঘুষ বাণিজ্যের ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বলে জানান তিনি।

সোহেল রানা আরও বলেন, ‘শাহজাদপুরবাসী ভবিষ্যতে যেন ঘুষ বাণিজ্যের শিকার না হন, সেজন্য ভিডিওটি ফেসবুকে দিয়েছি। এটি ফেসবুকে দেওয়ার পর থেকে আমাকে ভয়ভীতি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন সাব-রেজিস্ট্রার।’

তবে দলিল লেখক সোহেল রানা ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্য এমন ভিডিও প্রচার করেছে বলে দাবি অভিযুক্ত সাব রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাসের।

তিনি বলেন, ‘সোহেল রানা নিজেই একজন চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও প্রতারণার ১০/১২টি মামলা রয়েছে বলে শুনেছি। আমার অফিসে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও সুবিধা না পেয়ে এ ধরনের ভিডিও প্রচার করেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা আইসিটি অ্যাক্টে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

তিনি আসার পর প্রায় ৩০ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব জমা হয়েছে জানিয়ে ভিডিওটিকে ভুয়া বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, ভিডিওতে টাকা গ্রহণের ছবি দেখানো হলেও কারা, কীজন্য টাকা দিচ্ছেন, সেটিও পরিষ্কার নয়।’

এ প্রসঙ্গে জেলা রেজিস্ট্রার বলেন, ‘ভিডিও আমাদের নজরে আসার পর সুষ্ঠু তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।’

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত কুমারের ঘুষ গ্রহণের ভাইরাল সেই ভিডিও-

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here