পাবনা প্রতিনিধিঃ
পাবনার ফরিদপুরে আকস্মিক অসুস্থতায় সাথী ও বিথী নামের স্কুল ছাত্রী দু’বোনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে গত শুক্রবার রাতে সাথী নিজ বাড়িতে এবং শনিবার বিথী পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
সাথী ও বিথী ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের শহীদ প্রামানিকের মেয়ে। এদের মধ্যে সাথী খাতুন অষ্টম শ্রেণীর ও বিথি চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
স্থানীয় চিকিৎসকরা এদের মৃত্যুর সঠিক কোন কারণ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তবে খাদ্যে বিষক্রিয়া অথবা অজানা কোনো ভাইরাস এ তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। এছাড়া একই উপসর্গ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ওই গ্রামের তাসলিমা খাতুন ও রেশমা খাতুন নামে দুই গৃহবধু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য রোববার(২ ফেব্রুয়ারি) একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছেন।
নিহত ও অসুস্থদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে সাথী ও বিথী। এরপর তারা কিছুক্ষণ পর পর বমি শুরু করে। বাড়ির সদস্যরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মনে করে দু’ বোনকে প্রথমে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করান। তাদের মধ্যে বিথীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে পাবনা জেনারেল হপসাতালে ভর্তি করা হয়। এরই মধ্যে শুক্রবার রাতে সাথী বাড়িতে এবং শনিবার সকালে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে বিথী মারা যায় ।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, একই গ্রামের তাজ প্রামানিকের স্ত্রী তসলিমা খাতুন (৪০) ও ফজলুল হকের স্ত্রী রেশমা খাতুন (৩২) নামে দুই গৃহবধূ একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ পড়েছেন। অসুস্থ হওয়ার পরে তারাও একাধিকবার বমি করেন বলে তাদের স্বজনরা জানান। পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে প্রথমে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় ওই দুই গৃহবধুকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা।
সাথী ও বিথীর মা সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘মেয়ে দুটি আমাকে রাতে ডাকলো বুমি করছি মা ওঠো। উঠে দেখি বুমি করে মেয়ে দুটো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বড় মেয়ে মারা গেছে বাড়িতে আর ছোট মেয়ে মারা গেছে হাসপাতালে। কি কারণে মঋরা গেছে আমি কিছুই বুঝতেছিনা।’
স্থানীয় কয়েকজন জানান, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এখানে একজন বুমি বা মাথা ঘুরলেও এই যে সাথি-বিথী মারা গেলো তাদের মতই হয়ত হয়ে গেছে এজন্য তারা অনেক ভয়ের মধ্যে আছে। আমরা বুঝানোর চেষ্টা করছি যে ভয়ের কিছু নাই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ্য দুই গৃহবধূ জানান, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব ও ঘাড় অবশ হয়ে আসার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তারা।
তবে দুইবোনের আকস্মিক মৃত্যু সম্পর্কে সঠিক কোনো কারণ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, কি কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আতংকে অনেকে অসুস্থ হচ্ছেন। সবাইকে আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আরএমও ডাঃ লুলু ওয়াল মারজান বলেন, আমরা ফরিদপুর হাসপাতাল থেকে উদ্বোধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় মেডিকেল টিমের সদস্য হসেবে এসেছি। যে দুইজন মেয়ে মারা গেছে তাদের বিষয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা চলছে। পরে হয়ত আমরা মৃত্যুর কারণ জানাতে পারব। আর তাদের মৃত্যুর কারণে আশেপাশের মানুষ আতঙ্কের কারণ হয়েছে আমরা তাদেরকে দেখতে এসেছি তাদেরকে চিকিৎসা দিয়েছি। এবং পরামর্শ দিয়েছি।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ সালেহ্ মুহাম্মদ আলী বলেন, একজন পেটের ব্যাথা নিয়ে এসেছে। তিনি এখন ভালো আছেন, খাওয়া দাওয়াও করছেন। তিনি এখন বাড়ি চলে যেতে পারছেন। আরেকজন আছেন। তিনি হঠাৎ করে জ্ঞান নাই এমন হয়ে এসেছিলেন সার্বিক পরীক্ষা নিরিক্ষা করে আমরা তার কিছু সমস্যা পেয়েছি। পরীক্ষা রিপোর্ট আসার পরে নিশ্চিত হয়ে রোগ সনাক্ত করতে পারব।
বিষয়টি জানার পর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র ৬ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম রোববার (২ ফেব্রুয়ারি)ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহম্মদ আলী জানান, দুই বোনের মৃত্যু সংবাদ স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জেনেছি। তাদের মৃত্যু হয়েছে কিভাবে তা খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ আকসাদ আল মাসুর আনন জানান, স্বজনরা তাদের জানিয়েছেন, ঝাল মুড়ি খাবার পরে দুই বোন অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফুড পয়জনিং বা অজানা কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত্র হয়ে সাথী-বিথীর মৃত্যু হতে পারে বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।