ঢাকাঃ
হাসপাতালে বেডে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন ছোট ভাই। মাথায় আঘাতের ব্যান্ডেজ। তার অবস্থা এখনও আশংকাজনক। তবে ডাকসু ভিপি নুরুল হকের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। মুক্তিযুদ্ধ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় চারদিনে ধরে দু’জনই ভর্তি রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে। তবুও রক্তের বাঁধনের খোঁজে ছুটে আসেন আপন ছোট ভাই আমিনুলের বেডের পাশে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন তাকে, জানতে চান শরীরের অবস্থা।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মূল ফটক বন্ধ করে ভিপি নুর ও তার সহযোগীদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এ হামলায় আহত হয়েছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর এর আপন ছোট ভাই আমিনুল।
হামলায় আহতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাকসু ভবনে বড় ভাই ভিপি নুরের ওপর হামলা ঠেকাতে ছোট ভাই দাঁড়িয়ে যান সামনে। পেতে দেন নিজের বুক। হামলাকারীদের বড় আক্রমণগুলো গিয়ে পড়ে তার ওপর। ভাইকে কিছুটা রক্ষা করতে পারলেও নিজেই আহত হন বেশি। নির্মম এ হামলায় আহত ভিপি নুরুল হক নুর নিজে অসুস্থ হলেও ছোট ভাইকে দেখতে ছুটে যাচ্ছেন মাঝে মাঝে। ভাইকে নিয়ে বর্তমানে কেবিনে চিকিৎসারত নুরকে দেখা গেছে উদ্বেগ প্রকাশ করতে।
বুধবার সন্ধ্যায় ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মসিউর রহমান দুই ভাইয়ের এইদৃশ্য দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি ছবি দিয়ে তিনি লেখেন- ‘এ যে রক্তের সাথে রক্তের টান, আত্মার সাথে আত্মার বাঁধন। অসুস্থ ডাকসু ভিপি নুরুলহক নুর আপন ছোটভাই আমিনুরকে দেখতে গিয়েছেন। আমিনুর এর অবস্থা এখনও আশংকাজনক। ছোট ভাইয়ের জন্য কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো নুর ভাইয়ের। তাই আমাদের শতো বাধা সত্বেও অসুস্থ শরীর নিয়েই ছোট ভাই আমিনুরকে দেখতে তার কেবিনে ছুটে যান নুরুল হক নুর। এটাই তো আত্মার টান, ভালোবাসার বন্ধন।’
এদিকে রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে ডাকসু ভিপি নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীদের উপর হামলার বিচার চেয়ে নুরের বাবা বলেছেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পানি খাওয়াইছি, আজ তাদের ছেলেরাই আমার সন্তানকে পেটায়। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে এই কথা বলেন তিনি।
ছেলের করুণ অবস্থার কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি- নুরুল হক সারাদেশের ছাত্র সমাজের অভিভাবক। তাকে হামলার ৪/৫ দিন আগে আমি ঢাকায় এসেছি। তার করুণ অবস্থা দেখে আমি বাবা হয়ে ধৈর্য রাখতে পারছি না। আরও কয়েকজন ছাত্র নেতাসহ তারা হাসপাতাল বেড়ে রয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার কথা স্মরণ করে নুুরের বাবা বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় আমার বয়স ১৬/১৭ বছর। তখন মুক্তিযুদ্ধোদের পানি খাওয়ানোর কাজ করতাম আমরা। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতাম। কিন্তু আজ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নাম দিয়ে আমার সন্তান ও ছাত্রনেতাদের উপর যে নৃসংশ হামলা হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিচারের আশ্বাস পাওয়া কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে হাসপাতালে আমার দেখা হয়েছে। তাকে হাসপাতালে আহত সন্তানদের দেখিয়েছি। নানক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই আশ্বাস দিয়েছেন- হামলাকারীর দল পরিচয় না দেখে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য।
প্রসঙ্গত, গত রোববার দুপুরে রড, লাঠি ও বাঁশ নিয়ে ভিপি নুরুলের ওপর হামলা চালান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ সময় নুরুলের সঙ্গে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি কলেজের কিছু ছাত্রসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।