দামুড়হুদায় বিনামূল্যে সারও বীজ  বিতরণ উদ্বোধন করলেন এমপি হাজি আলী আজগার টগর মহাদয়।।
আল মামুন সোহাগ চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ চুয়াডাঙ্গা জেলা দামুড়হুদা উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণের উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চত্বরে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষকদের হাতে সার,বীজ, সিডার (বীজবপন) মেশিন,পাওয়ারপ্রিলার ও কম্বাইন্ড হারভিষ্টার তুলে দেন। এসময় তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ভাবে বাংলাদেশ ছিল একটি খাদ্য ঘাটতির দেশ। ব্রিটিশ আমলে গঠিত বিভিন্ন কৃষি কমিশনের প্রতিবেদনের তথ্য থেকে এখানকার চরম খাদ্য ঘাটতির চিত্রই ফুটে ওঠে। পাকিস্তান আমলেও পূর্ববঙ্গের খাদ্য উৎপাদনের চিত্র তেমন সুখকর ছিল না। এ অঞ্চলে প্রতি বছর গড়ে খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ লাখ টন।
ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রাপ্ত এ বাংলাদেশকে সোনালি ফসলে ভরপুর দেখতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে কারণেই স্বাধীনতার পর তিনি ডাক দিয়েছিলেন সবুজ বিপ্লবের, কৃষিকে দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কৃষকে সক্ষম করতে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে, তা নাহলে বাংলাদেশ বাঁচতে পারবে না। কৃষিতে গুরুত্বারোপ করে কৃষকদের কথা চিন্তা করে ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির খাজনা মওকুফ করেছিলেন তিনি।
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষি কাজে জনগণকে অধিকতর সম্পৃক্ত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রবর্তন করেছিলেন। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মসুচিকে সম্প্রসারিত করে পৌঁছে দেন কৃষকের দোরগোড়ায়। অপরদিকে কৃষি উৎপাদনে সহায়তার কারণে উৎসাহিত হয় কৃষক। ফলে কৃষিতে আধুনিক চাষাবাদের নিবিড়তা বেড়ে যায় ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে গত ১০ বছর ধরে ক্রমাগতভাবে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষিখাতে নীতিগত সমর্থন বাড়ায়। ফলে কৃষির সকল ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রবৃদ্ধির হার। খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল খুবই লক্ষ্যণীয়। ১৯৭২ সালে এদেশে খাদ্যশস্যের মোট উৎপাদন ছিল এক কোটি টন। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি টনেরও উপরে। এ সময় উৎপাদন বৃদ্ধির গড় হার ছিল বার্ষিক তিন শতাংশের বেশি।
বর্তমানে চাল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়নে বাংলাদেশের স্থান হলো সবার উপরে। তাছাড়া পাট উৎপাদনে বাংলাদেশের স্থান দ্বিতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মৎস্য উৎপাদনে চতুর্থ, আম উৎপাদনে সপ্তম ও আলু উৎপাদনে অষ্টম।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চার গুণ, গম দুই গুণ, ভুট্টা ১০ গুণ ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ। খাদ্যশস্য, মৎস্য ও মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। আলু উৎপাদনে উদ্বৃত্ত। মাছ রপ্তানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিরকালের দুর্ভিক্ষ, মঙ্গা আর ক্ষুধার দেশে এখন ঈর্ষণীয় উন্নতি হয়েছে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণের ফলেই এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করি। জমির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন আর সারের জন্য কৃষককে জীবন দিতে হয় না। বরং সার কৃষকদেরকে খুঁজে বের করছে যথাসময়ে কৃষকদের কাছেই পৌঁছে যায় সার। আওয়ামী লীগ সরকার সেই ব্যবস্থা করেছে। খাদ্যের জন্য আর কোনো দিন বাংলাদেশকে কারো কাছে হাত পাততে না হয় সেটা নিশ্চিত করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য।
উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির সমৃদ্ধির জন্য কৃষির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের জিডিপিতে বৃহৎ কৃষি খাত (ফসল, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ এবং বন) এর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায় ৪১ শতাংশ কর্মক্ষম শ্রমশক্তি এ খাতে নিয়োজিত।
বিবিএস এর হিসেবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের বৃহৎ তিনটি খাতের মধ্যে কৃষিখাতের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশে, যা গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। বৃহৎ কৃষিখাতের মধ্যে কৃষি ও বনজ খাতে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়ে ১ দশমিক ৯৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বৃহৎ কৃষিখাতের মধ্যে মৎস্যসম্পদ খাতেও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি’তে কৃষিখাতের অবদান ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। দারিদ্রের হার যেখানে বিগত ১৯৯১ সালে ছিল ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির কার্যকরী বাস্তবায়নের ফলেই এই সফলতা এসেছে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে কৃষিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করে কৃষির উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপরই নির্বাচনী ওয়াদা এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে কৃষিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উন্নয়নমুখী সরকারি সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে। জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকার কৃষক ও কৃষির সার্বিক উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে ‘জাতীয় কৃষি নীতি, ১৯৯৯ এবং পরবর্তী মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ‘জাতীয় কৃষি নীতি, ২০১৩ প্রণয়ন করে।বর্তমান মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনশীল বাস্তবতার আঙ্গিকে কৃষিকে বাণিজ্যিক ও আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে প্রণীত জাতীয় কৃষি নীতির সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সে ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিককালে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন দলিল, বিশেষ করে রূপকল্প-২০২১, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি), টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ইত্যাদিতে সরকারের লক্ষ্য ও উন্নয়ন কৌশল অনুসরণে ইতোপূর্বে প্রণীত ‘জাতীয় কৃষি নীতি, ২০১৩’ পরিমার্জন ও সংশোধন করে সময়োপযোগী একটি নতুন ‘‘জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮” প্রণয়ন করা হয়েছে। আপনারা জানেন জলবায়ু পরিবর্তনসহ কৃষিখাত নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এ সকল চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে মোকাবেলা করে কৃষিকে টেকসই করে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তর, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যকে সামনে নিয়েই ‘‘জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮” প্রণীত হয়েছে।দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু। আরো উপস্থিত ছিলেন, ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন, আজিজুল হক, মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টু, শাহ মো. এনামুল করীম ইনু প্রমূখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ শামিউর রহমান। একই দিনে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে এলাকার ৫ জন কৃষককে ভর্র্তূকীমুল্যে সিডার মেশিন,দুইটি পাওয়ারট্রিলার ও দুইটি কম্বাইন্ড হারভিষ্টার দেয়া হয়।

আল মামুন সোহাগ
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here