খুলনা ব্যুরোঃ
আগামী ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন। এই লক্ষে বিতরণ হয়েছে প্রাথমিক সদস্য পদ। বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা পর্যায়ের সম্মেলনও সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। প্রতিদিনই কোন না কোন ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সম্মেলন। মিছিলে কেপে উঠছে এলাকা।
এই সম্মেলনকে ঘিরে নগর ও জেলা শাখার সভাপতি পদে খুব বেশী আগ্রহী প্রার্থীর দেখা না মিললেও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য রয়েছেন বেশ কয়েকজন। যারা বেশ আগে থেকেই পদটি দখলে নেবার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রানুযায়ী, এই সম্মেলনের মাধ্যমেই ঋণখেলাপী, উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে হেরে যাওয়া প্রার্থী, খুলনার রাজনীতির সাথে সম্পর্কহীন, নৌকা প্রতিকের বিরোধীতাকারী, বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতকারী, ভূমিদস্যু ও মাদক বিক্রেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতারাও হতে চাইছেন সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগ সুত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। সম্মেলনে শেখ হারুনুর রশীদকে সভাপতি ও এসএম মোস্তফা রশিদী সুজাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এর ৯ মাস পর কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। তিন বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবার আগেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই মারা যান। তারপর থেকে সাধারণ সম্পাদকের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুজিত অধিকারী।
জেলা আওয়ামীলীগের সূত্রটি জানায়, কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পর চলতি বছরের মে মাসে খুলনার এক ক্লাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে নগর ও জেলা শাখার বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা ও নগরীর সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দেন। কিন্তু বিভিন্ন কারনে কেন্দ্রীয় নেতাদের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে সম্মেলন করতে পারেনি খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামীলীগ।
পূর্ননির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী ১০ ডিসেম্বর খুলনা সার্কিট হাউজে মহানগর ও জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলণ অনুষ্টিত হবে। তবে এখনও নির্ধারণ হয়নি কাউন্সিলর। ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন শেষ হলেই কাউন্সিলর নির্ধারণ হবে বলে জানান মহানগর আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক মুন্সী মাহবুব আলম সোহাগ। তিনি বলেন, গতকাল (৩০ নভেম্বর শনিবার) পর্যন্ত নগরীর ৩১ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩ টির সম্মেলন হয়ে গেছে। বাকীগুলোর সম্মেলন ৪/৫ তারিখের মধ্যে হয়ে যাবে।
জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট ফরিদ আহমেদ বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর নগর ও জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের আগেই সবকিছু প্রস্তত করা হবে বলেও জানান তিনি।
দলীয় সূত্রানুযায়ী, খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি পদের জন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন কোন আলোচনা নেই। কারণ এখানে বর্তমান সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক আবারও সভাপতি হবেন এমনই ধারণা সবার। তবে সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহ প্রকাশ করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট সরদার আনিসুর রহমান পপলু, সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সাইফুল ইসলাম, খালিশপুর থানা আওয়ামীলীগের আশরাফুল ইসলাম। তবে ধারণা করা হচ্ছে এই পদেও বর্তমান যিনি আছেন তিনিই বহাল থাকবেন।
সূত্রানুযায়ী, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ প্রত্যাশীরা হলেন বর্তমান সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি এডভোকেট এমএম মুজিবর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোল্লা জালাল উদ্দিন ও বতর্মান সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ।
সাধারণ সম্পাদকের পদের প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন, বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুজিত অধিকারী, সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, আকতারুজ্জামান বাবু এমপি, যুগ্ম-সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, কেন্দ্রীয় নেতা অসিত বরণ বিশ্বাস, বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী কামরুজ্জামান জামাল বলেন, দলীয় প্রধান প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবেন তিনিই হবেন। তবে তিনি এই পদের জন্য জোরালো দাবিদার বলেও জানান।
আকতারুজ্জামান বাবু এমপি বলেন, দলীয় প্রধান ও নেতাকর্মীরা যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই মেনে নেবো।
এসব প্রার্থীদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ঋণখেলাপী, নিয়োগ বাণিজ্য, খুলনার আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পর্কহীনতা, স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ করে অট্টালিকা তৈরী, সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের বিরোধীতা করা, ঘের ও জমি দখল, সিনিয়র নেতাদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া ও মাদক বাণিজ্য।