সবুজদেশ ডেস্কঃ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউনুচ আলীর বিরুদ্ধে আটক বাণিজ্য, জিডি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ও নিরীহ মানুষদের আটক করে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৮ অক্টোবর তাকে হঠাৎ করেই খুলনা পুলিশ লাইনের আর আর এফে সংযুক্ত করা হয়। কালীগঞ্জ থানায় দায়িত্বপালনকালে আসামি আটকের পর ছেড়ে দেওয়া, নিরীহ মানুষকে হয়রানি, জিডি ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট থেকে তিনি প্রায় অর্ধকোটি টাকার আটক বাণিজ্য করেছেন।
পুলিশের একাধিক সুত্র জানিয়েছে, সাবেক এই ওসির বিরুদ্ধে পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে একাধিক অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। এসব অভিযোগের তদন্তে পর্যায়ক্রমে যশোর সিআইডি কার্যালয়ে ভুক্তভোগীদের স্বাক্ষী নেওয়া হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ৪৫টি অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৭৫ জন স্বাক্ষীকে তলব করছে যশোর সিআইডি। কালীগঞ্জ থানায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি ব্যাপক আটক বাণিজ্য করেছেন।
আটক বাণিজ্যঃ আটক বাণিজ্যের বিষয়টি অনুসন্ধান করার সময় থানার হাজতি রেজিস্ট্রারের কয়েকটি কপি পাওয়া যায়। সেখানে দেখা গেছে, থানার এসআই ও এএসআইরা অভিযান চালিয়ে থানায় এনে হাজতে আটকে রাখে। এরপর তাদের নাম হাজতি রেজিস্টারের লিপিবব্ধ করা। যারা টাকা দিয়ে ছাড়া পান তাদের নাম কেটে দেওয়া হয়। গত জুলাই মাসের হাজতি রেজিস্টারের বিভিন্ন তারিখের ৬টি পাতা এ প্রতিবেদকের হাতে আসে। সেখানে ২৮ জনের নাম লেখা আছে। এরমধ্যে ১২ জনকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন ওসি।
গত ১ জুলাই তারিখের হাজতি রেজিস্টারে প্রথম পাতায় ৫ জনকে আটক করে নাম লেখা হয়। তারা হলেন বকুল হোসেন, রুহুল আমিন, রীনা বেগম, জুয়েল হোসেন ও পিয়ার আলী। এরমধ্যে জুয়েল হোসেনকে হাজতে আটকে রাখা হয়। তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নেওয়ার পর তাকে হাজত থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তার নাম হাজতি রেজিস্টার থেকে কেটে দেওয়া হয়। একই মাসের ১৮ তারিখের প্রথম পাতায় তিনজনকে আটক করে হাজতি রেজিস্টারে নাম লেখা হয়। তারা হলেন, সোহেল রানা, তানমিন আহমেদ জয় ও সুজন ইসলাম। এই তিনজনকেই থানা হাজত থেকে টাকার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। গত ৩০ এপ্রিল সিআর নং- ৩৪৭/১৮ মামলার আসামি উপজেলার রাখালগাছি গ্রামের মোঃ আব্দুল মুজিতের ছেলে আব্দুল খালেককে মোটরসাইকেলসহ আটক করা হয়। এরপর থানা হাজত থেকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি। গত ৩ জুন কালীঃ সিআর-১৭/১৮ মামলার আসামি মোঃ আরিফুজ্জামানকে আটক করা হয়। এরপর ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়া পান তিনি। এছাড়া গত ৪ এপ্রিল অর্থ জারী ০৪/১৭ মামলার আসামি শাহজাহান কবিরকে আটকের পর ৭ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২৪ জুনে উপজেলা দূর্গাপুর গ্রাম থেকে নিরীহ হাবিবুর রহমানকে আটক করে থানায় এনে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। গত ২৪ জুন তারিখে মহেশপুর উপজেলার বলিভদ্রপুর গ্রামের শিপন হোসেনকে আটক করে থানায় এনে ১৫ হাজার টাকা ও মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকার একজন বলেন, গত অক্টোবর মাসে মারামারির ঘটনায় আমাদের তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। প্রায় তিনদিন থানার হাজতেই আটকে রেখে ১২ হাজার টাকা দিয়ে আমরা ছাড়া পায়।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্সঃ অনুসন্ধানে থানায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিতে একজনের সন্ধান পাওয়া গেছে। একজন হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার ঘোপপাড়া গ্রামের মোঃ শান্তি। তার কাছ থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য ৭ হাজার টাকা নেন ওসি।
এ ব্যাপারে মোঃ শান্তি বলেন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিতে আবেদন করলে আমাকে থানার ওসিকে ৭ হাজার টাকা দিতে হয়। টাকা দেওয়ার পর আমি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেয়েছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারবো না তবে তদন্ত চলছে।
কালীগঞ্জ থানার সাবেক ওসি মোঃ ইউনুচ আলী পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর টাকা নেননি বলে অস্বীকার করেন। এরপর অন্য একটি প্রশ্ন করার সময় হঠাৎ ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি। পরে পুনরায় অন্য একটি নম্বর থেকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই আবার ফোনটি কেটে দেন।
ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস বলেন, সাবেক ওসি ইউনুচ আলীর বিষয়ে জেলা পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। পুলিশের অন্য কোন দপ্তরে অভিযোগ যেতে পারে। এরপর অন্য একটি নম্বর দিয়ে ফোন করা হলে তিনি কন্ঠ শুনেই ফোনের লাইন কেটে দেন।