সবুজদেশ ডেক্সঃ ঝিনাইদহসহ ১০ জেলায় গত তিন বছর গম আবদে ব্লাষ্ট নামক রোগের কারনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিছিু কিছু চাষি ব্যাক্তিগত ভাবে গমের আবাদ করছে। চলতি মোসুমে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার রোগ বালাই দেখা যায়নি। এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ব্লাষ্টারের কারন উদ্ভাবন, প্রতিরোধ পদ্ধতি ও প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের গবেষনা চলছে। এর মধ্যে নতুন জাতের গম বীজরে প্রদর্শনী শুরু করেছে বিএডিসি। যে গবেষনাটি বিশে^র মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম হচ্ছে। সফল হলে এক যুগান্তকারি উদ্ভাবনী দুয়ার খুলবে। প্রতিরোধকরা সম্ভব হবে বাøস্টা রোগের আক্রমন।

দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর সদর উপজেলার নতুন মদনাডাঙ্গা গ্রামের জনৈক রেজাউল হকের দু’বিঘা জমি লিজ নিয়ে কৃষি গবেষনা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে গমের ব্লাস্ট রোগ দমনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় (বাকৃবি), ময়মানসিংহ-স্থ বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট (বিনা) ও মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর (ডিএই) যৌথভাবে গবেষনা পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব (প্লান্ট প্যথোলজি) বিভাগের ড. বাহাদুর মিয়ার তত্ত্ববধায়নে ১২ জন এমএস শিক্ষার্থী গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যে সকল কার্যকারি পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে- ছত্রাকনাশকের কার্যকারিতা পরীক্ষা, মাটিতে সার প্রয়োগ, পাতায় সার প্রয়োগ, বীজবাহিত পরীক্ষা, বিভিন্ন জাতের গম ব্লাস্টের প্রতিরোধি পরীক্ষা, মিউটেশন পরীক্ষা, মসুরের সাথে শস্য পর্যায় অবলম্বন। এছাড়া আরো চার ধরনের পদ্ধতি পরীক্ষ হিসাবে চালালো হচ্ছে।

গবেষনা টিমের সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেছে, গমে ব্লাস্ট রোগের আক্রমনের পরই দেশে এবং বিদেশে গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ। আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা গবেষনা কেন্দ্র (সিমিট) এবং বাংলাদেশের কৃষি গবেষনা কেন্দ্রের কৃষি বিজ্ঞানীরা ব্লাষ্ট প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন। তারা ছোট বড় সব মিলিয়ে ১১টি পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে গবেষনা ৭টি কার্যকারি পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্যে যে পদ্ধতি ব্লাস্ট প্রতিরোধে ভুমিকা রাখবে সেটি গবেষনায় চুড়ান্ত হিসাবে ধরা হবে। আগামি দু’ মাসের মধ্যেই এর চুড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন গবেষনা দল।

ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রফেসর ড. বাহাদুর মিয়া বলেন, ব্লাস্ট গম চাষের জন্য বড় ধরনের হুমুক হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা এক বছর ধরে ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত উদ্ভাবনের গবেষনা চালাচ্ছি। আরো দু’বছর সময় লাগতে পারে। এই গবেষনাটি বাংলাদেশেই প্রথম হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তবে বালাই, ছত্রাক নাশক ব্লাস্ট আক্রান্ত হওয়ার আগে স্প্রে করলে প্রতিরোধ হতে পারে। তবে প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী সমাধান হবেনা।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্ত সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহে ২০১৬ সালে গমের রোগের আক্রমন দেখা দেয়। পরে পাশের কয়েকটি জেলায় ছড়িয় পড়ে। শীষে দানা না হওয়ায় মারাতœক ভাবে ফলন বিপর্যয় দেখা দেয়। কৃষি বিভাগ গম আবাদে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করেন। পরে আন্তর্জতিক গম ও ভুট্টা গবেষনাকেন্দ্র (সিমিট) এবং বাংলাদেশের কৃষি গবেশনা কেন্দ্রের কৃষি বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে ব্লাষ্ট প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে গমের নতুন জাত-৩৩ উদ্ভাবিত হয়েছে। চলতি মোসুমে ঝিনাইদহে কৃষকরা তাদের বীজে দেড় হাজার বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছে। এরই মধ্যে কোন কোন এলাকায় গমের শীষ বের হয়েছে। কৃষি বিভাগও সকল সময়ই কৃষকদের নিরন্তর প্রশিক্ষন দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দলীয় আলোচন, ব্যাক্তিগত যোগাযোগ, অনেক সময় ফোনকল মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করে চলেছে।

জানা যায়, ১৯৮৫ সালে বিশে^ প্রথম ব্লাস্ট রোগের আক্রমন দেখা দেয় ব্রাজিলে। পরবর্তিতে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কয়েক বছর যেতে না যেতেই সে দেশ গুলোতে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ও প্রতিশেধক ব্যবস্থার কারনে আর ক্ষতির সম্মখিন হতে হয়নি।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ বিএডিসি’র ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক সফিউদ্দিন সবুজ বলেন, গম আবাদে ব্লাস্ট রোগ দেখার পর গত’ক বছর বিজ সংগ্রহ বন্ধ ও বিতরন করেছে না বিএডিসি। একই সাথে কৃষি বিভাগ কৃষকদের গম আবাদে নিরুৎসাহিত করছেন। এরই মধ্যে ব্লাস্ট রোগের আক্রমন থেকে রেহাই পেতে ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত উদ্বোধন করা হয়েছে। যা বারি গম-৩০,৩৩ জাতের। জাতীয় বীজ বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে। খামার ও কৃষি খামারে প্রদর্শনের মাধ্যমে আবাদ হচ্ছে। দ্রুতই বীজ কৃষকদের মাধ্যে বিতরন করা যেতে পারে বলে তিনি জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here