ফারুক নোমানীঃ

ইসলাম সত্যের ধর্ম। সুন্দরের ধর্ম। পরম সহিঞ্চুতার ধর্ম। প্রেম ও ভালোবাসার ধর্ম। স্রষ্টার প্রতিটি সৃষ্টি ভালো থাকুক। নিরাপদে থাকুক। সুখ ও সমৃদ্ধির মাঝে বসবাস করুক। এটাই ইসলামের প্রত্যাশা। এ আদর্শই শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। দ্রোহ-রক্তপাত, সংঘর্ষ-সংঘাত, হিং¯্রতা-বর্বরতাকে ইসলাম চরমভাবে অপছন্দ ও নিন্দা করেছে। এমনকি ভিন্নধর্ম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতে ইসলামই আদেশ করেছে। অমুসলিমদের জান, মাল, ধর্ম ও ধর্মপালনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে ইসলাম। যা শুধু ইসলামেরই একক বৈশিষ্ট্য। অন্য ধর্মে যা বড়ই বিরল।

একটি মিথ্যা, অবাস্তব ও অবান্তর দাবীঃ-
অনেকে প্রায়ই বলে থাকেন, ইসলাম হিংস্র, বর্বর ও সেকেলে। ইসলাম উদারতাহীন একটি উগ্রধর্ম। শরিয়তের নামে নানা সংকীর্ণ বেড়াজালে আটকে রেখেছে মানুষের চিন্তা-চেতনাকে।
যারা ইসলামকে একটি সন্ত্রাসী বা জঙ্গীধর্ম ভেবে পুলকিত হোন তারা কি জানেন ইসলামের ভালোবাসার শাশ্বত ইতিহাস! ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন্ত জীবনচরিত কি তাদের সামনে নেই? জানি দুশমনকেও যিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন হাসিমুখে। মক্কার বিধর্মী সন্ত্রাসী বাহিনীর চরম পরাজয়ের দিন তিনিই দিয়েছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে সাধারণ ক্ষমার অপূর্ব ঘোষণা। সৃষ্টি করেছেন উদারতার এক বিষ্ময়কর দৃষ্টান্ত।
অপরদিকে অন্যধর্মের ইতিহাস পড়ে দেখুন! যাদের হাতে বারবার রক্তাক্ত হয়েছে ইতিহাসের পাতা। দেখুন ক্রুসেডের নামে চলা ধর্মযুদ্ধে মানবহত্যার নৃশংসতায় মেতে ওঠা জাতির বৃত্তান্ত। রক্ত নেশায় মাতাল হয়ে যারা নির্বিচারে হত্যা করেছে ভিন্নধর্মের লক্ষ লক্ষ নিষ্পাপ-নিরীহ নারী, শিশু ও বৃদ্ধকে।
আজকের মিড়িয়ার একচোখা নীতির কাছে বিশ্ববিবেক, মানবতা ও মনুষ্যত্ববোধ পরাজিত নয় কি? পরিকল্পিতভাবেই যারা কিছু বিপথগামীকে মনে করেন ইসলামের মুখপাত্র। প্রচার করেন বিশ্বমুসলিমের আইডল হিসেবে। তাদের চোখে কি পড়ে না ইসলামের শাশ্বত উদারতার ইতিহাস! ভালোবাসার শিক্ষা!! তাদের জেনে রাখা উচিত নয় কি সকল ধর্মের ভেতর ইসলামই অন্যতম ও একমাত্র ধর্ম, যে ভিন্নধর্মের স্বীকৃতি ও তাদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করেছে! নিরাপত্তা দিয়েছে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের এবং দিয়েছে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত নীতিমালাও। এটাই ইসলামের শিক্ষা। ইসলামের উদারতা।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের রাজনৈতিক ঘোলাজলকে কেন্দ্র করে যারা ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন, তাদের মনে রাখতে হবে একমাত্র ইসলামই সংখ্যালঘুর অধিকারকে নিশ্চিত করেছে। রক্ষা করেছে তাদের মানবিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতাকে।

ইসলামে পরধর্মনীতিঃ-
ইসলাম চায় মানুষের ইহকালীন সফলতা ও পরকালীন মুক্তি। আর এই সফলতা ও মুক্তির মূল চাবিকাটি হলো ইসলামের অনুসরণ ও আনুগত্য। কিন্তু এই আনুগত্য ও অনুসরণের ক্ষেত্রে ইসলাম কোন জোর জবরদস্তির আশ্রয় নেয়নি। এ সম্পর্কেই কুরআনুল কারীমে ঘোষণা হয়েছে: ‘মুমিন হয়ে যাওয়ার জন্য কি তুমি লোকদেরকে বাধ্য করবে?’ (সুরা ইউনুস: ৯৯)।
সুতরাং ইসলাম প্রচারের জন্য অন্যদের সামনে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে ইসলামের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য, আদর্শ ও গুণাবলী, উদারতা ও ভালোবাসার কথা প্রচার করবে, কখনো কাউকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করবে না। তাই তো আল্লাহ তা‘য়ালা বলেছেন, ‘তোমরা (অন্যধর্মের লোক) আহলে কিতাবদের সাথে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া তর্ক-বিতর্ক করো না।’ (সুরা আনকাবুত:৪৬)। এ আয়াতে তাদের সাথে কথা-বার্তা ও তর্ক-বিতর্কের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পদ্ধতি অবলম্বনের আদেশ দিয়েছেন।
মানুষের সামনে সত্য-মিথ্যা দুইটি পথই স্পষ্ট। সুতরাং যে চায় ইসলাম গ্রহণ করুক আর যে চায় তার মিথ্যা বিশ্বাসকে আঁকড়ে পড়ে থাকুক। ইচ্ছার বিপরীতে কাউকে চাপাচাপি, জোরাজুরি ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার কোন বিধান নেই। এ ব্যাপারে ইসলামের ঘোষণা স্পষ্ট। ‘ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হিদায়াত গুমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে, সে বস্তুত সুদৃঢ় এক হাতল ধারণ করবে যা ভাঙ্গার নয়।’ (সুরা বাকারা: ২৫৬)।
ফলে ইসলামের সহজাত ধর্মীয় সহনশীলতাকে পরিহার করে চাপ ও ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা একটি ফেতনা। আর তার ভয়াবহতা সম্পর্কেই কুরআনুল কারীম বলেছে: ‘ফিতনা হচ্ছে হত্যার চেয়েও মারাত্মক।’ (সুরা বাকারা:১৯১)।

অমুসলিদের সাথে সদাচারঃ-
অমুসলিমদের সাথে সদ্ব্যবহারের বিধান দিয়ে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘য়ালা মুসলিমদের বলেছেন: ‘আল্লাহ নিষেধ করেন না ওই লোকদের সঙ্গে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের আবাসভূমি হতে তোমাদের বের করে দেয়নি। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা মুমতাহিনা:০৮)।
এখানে মুসলিমদেরকে আল্লাহ তা‘য়ালা নিরীহ সাধারণ অমুসলিমদের সাথে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহারের কথা বলেছেন। অন্যধর্মের ইতিহাসে যা বিরল।
তাই ঈমানের দাবিদার প্রতিটি মুসলিমকে পরমসহিঞ্চুতা ও পরধর্ম বা মতবাদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকেই।
তবে ইসলাম নির্ভেজাল তাওহীদ বা একত্ববাদের ধারক। একত্ববাদ পরিপন্থী কোন ভাবধারার সাথে ইসলামের কোন আপোস নেই। তাই তো ইসলাম একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো পূজা-আর্চনা, ইবাদত-উপাসনাকে শিরিক আখ্যায়িত করেছে। আর শিরিকের শাস্তিকে সর্বোচ্চ শাস্তি বলে ঘোষণাও করেছে।
শিরক মানব জীবনের ভয়ঙ্করতম পাপ। মহান আল্লাহ বলেন: ‘বল, এসো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ করেছেন তা তোমাদের পড়ে শোনাই : তা এই যে তোমরা তাঁর সাথে শরিক করবে না…।’ (সুরা আনআম :১৫১)
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জঘন্যতম পাপ এই যে, তোমরা কাউকে আল্লাহর সমতূল্য বানাবে, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (সহীহ বুখারী ৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৭৫২০, ৭৫৩২, সহীহ মুসলিম ৮৬, আবু দাউদ ২৩১০, তিরমিযী ৩১৮২, ৩১৮৩, নাসায়ী ৪০১৩, ৪০১৪, ৪০১৫, আহমাদ ৩৬১২, ৪১০২, ৪১৩১, ৪৪১১, ৪৪২৩)।
শিরকের পাপ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেন: ‘আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না । তা ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। এবং যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়।’ (সুরা নিসা: ১১৬)
অন্য সকল পাপের সাথে শিরকের পার্থক হলো : সাধারণভাবে পাপের কারণে পুণ্য বিনষ্ট হয় না। কিন্তু শিরকের কারণে মানুষের সকল নেক কর্ম বিনষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহর বাণী: ‘তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই ওহী করা হয়েছে যে, তুমি আল্লাহর শরীক স্থির করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা যুমার: ৬৫)
‘কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ করবেন ও তার আবাস হবে জাহান্নাম।’ (সুরা মায়িদা :৭২)

প্রিয় পাঠক, ইসলামে শিরক হলো সবচেয়ে ভয়ংকর পাপ। আর শিরকের স্বরূপ হচ্ছে: আল্লাহ ছাড়া অথবা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে উপাসনা বা ইবাদত করা। সুতরাং প্রকৃতি, মূর্তি বা কোন দেবদেবীর উপাসনা-আরাধনা তো দূরের কথা, এসবের অস্তিত্বকেই ইসলাম অস্বীকার করে। তবে এই ইসলামই আবার অন্যধর্মের দেবদেবী ও উপাস্য ও পূজনীয়দেরকে নিন্দা, গালাগাল ও বাজে কথা বলতে কঠিনভাবে নিষেধ করেছে।
আল্লাহ তা‘য়ালা এ সম্পর্কেই বলেন- ‘তারা আল্লাহ তা‘য়ালার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, তাহলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তা‘য়ালাকেও গালি দিবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি বলে দিবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে।’ (সুরা আনআম:১০৮)। পরধর্মের প্রতি ইসলামের এটাই উদারতা! এটাই সহনশীলতা!!

ধর্মীয় নিরাপত্তাঃ-
ইসলাম মূলত: সার্বজনীন মানবীয় ভ্রাতৃত্ববোধে বিশ্বাসী। ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতির নীতির প্রবক্তা। সুতরাং ধর্মীয় অসহনশীলতার কোন স্থান নেই ইসলামে। ইসলাম চায় নানা ধর্মের এই সমাজে সকলে মিলেমিশে বসবাস করুক। কেউ কারো ধর্ম ও ধর্মীয় বিষয়ের উপর আঘাত না করুক। ভিন্নধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, উপাসনালয় ও ধর্মযাজকদের নিরাপত্তাও একমাত্র ইসলামই নিশ্চিত করেছে পৃথিবীর ইতিহাসে।
অতএব একজন অমুসলিম তার ধর্ম পালন করতে পূর্ণ নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা পাবে, কোন মুসলিম কোন অবস্থায়ই তাদের ধর্মপালনে, অনুষ্ঠানিকতায় বাধা দিতে পারবে না ও তাদের উপাস্যদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য বা গালি দিতে পারবে না।
অনুরূপভাবে কোন বিধর্মী উপাসনালয়ে সাধারণ অবস্থা তো দূরের কথা যুদ্ধাবস্থায়ও হামলা করা যাবে না। কোন পুরোহিত বা পাদ্রীর প্রতি অস্ত্র তাক করা যাবে না। কোন উপাসনালয় জ¦ালিয়ে দেয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গেই হাবীব ইবনু অলীদ হতে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৈন্যদল প্রেরণকালে বলতেন: ‘তোমরা আল্লাহ ও আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যাত্রা কর। তোমরা আল্লাহর প্রতি কুফরকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই কর। আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি: (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের ) কারো চেহারা বিকৃতি ঘটাবে না, কোন শিশুকে হত্যা করবে না, কোন গির্জা জ্বালিয়ে দিবে না এবং কোন বৃক্ষও উৎপাটন করবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৯৪৩০)।
তিনি আরো বলেছেন, ‘তোমরা কোন নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোন শিশুকেও না, আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোন গাছ উপড়াবে না, কোন খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোন গৃহও ধ্বংস করবে না।’ (সহীহ মুসলিম ১৭৩১ )।
অন্য হাদীসে আছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের কোন বাহিনী প্রেরণ করলে বলতেন, ‘তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না।’ (মুসান্নাফে ইবনু আবী শায়বা হাদীস ৩৩৮০৪)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পর আবু বকর রা.ও একই রীতি অবলম্বন করেন। সেনাপতি উসামা ইবনু যায়েদ রা.কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন: ‘হে লোক সকল দাঁড়াও, আমি তোমাদের দশটি বিষয়ে উপদেশ দিব। আমার পক্ষ হিসেবে কথাগুলো তোমরা মনে রাখবে। কোন খেয়ানত করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, (শত্রুদের ) অনুরূপ করবে না, ছোট বাচ্চাকে হত্যা করবে না, বয়োবৃদ্ধকেও না আর নারীকেও না। খেজুর গাছ কাটবে না কিংবা জ্বালিয়েও দিবে না। কোন ফলবতী গাছ কাটবে না। আহারের প্রয়োজন ছাড়া কোন ছাগল, গরু, উট জবাই করবে না। আর তোমরা এমন কিছু লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে যারা গির্জাগুলোয় নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে। তোমরাও তাদেরকে তাদের এবং তারা যা ছেড়েছে নিজেদের জন্য তাতে ছেড়ে দেবে।’ (মুখতাসারু তারিখি দিমাশক ১/৫২)।
শুধু এ পর্যন্তই নয়। কোন মুসলিম যদি কোন অমুসলিম নাগরিকের প্রতি অন্যায় করে, তবে কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে সে মুসলিমের বিপক্ষে লড়বেন।
একাধিক সাহাবা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘সাবধান! যদি কোন মুসলিম কোন অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।’ ( সুনানে আবু দাউদ ৩০৫২)
আবদুল্লাহ ইবনু উমার রা. হতে বণির্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘যে মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তা প্রাপ্ত কোন অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ পাওয়া যায় চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে।’ (সহীহ বুখারী ৩১৬৬, ৬৯১৪, নাসায়ী ৪৭৫০, ইবনু মাজাহ ২৬৮৬, আহমাদ ৬৭৪৫)
আবু বকর রা. হতে বর্ণিত অন্য হাদীসে তিনি বলেন-‘যে ব্যক্তি চুক্তিতে থাকা কোন অমুসলিমকে অসময়ে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।’ ( আবু দাউদ ২৭৬০, নাসায়ী ৪৭৪৭, দারামী ২৫৪৬, আহমাদ ২০৩৭৭, ২০৩৮৩, ২০৩৯৭, ২০৪০৩, ২০৪৬৯, ২০৫০৬, ২০৫১৫, ২০৫২৩)

আপনি কি ভাবতে পারেন! ইসলাম কত উদারতা দেখিয়েছে অমুসলিমদের প্রতি। বিশ্ববিবেককে শিখিয়েছে কত প্রসস্ত হৃদয় লালন করতে!! । অন্য ধর্ম যেখানে পরধর্মের অস্তিত্বকেই মিটিয়ে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, সেখানে ইসলামই একমাত্র ধর্ম যে ভিন্নধর্ম, ধর্মগুরু ও ধর্ম পালনের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করেছে। স্বাধীনতা দিয়েছে যার যার নিজধর্ম পালনের। এর থেকে উদারতা আর কী হতে পারে? সার্বজনীনতা ও উদারতার পরিপন্থী হিসেবে যারা ইসলামকে অপবাদ দেন, তারা কি কখনো এ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন? ইসলামে পরধর্মীয় নীতিমালাগুলো তারা কখনো খুঁজে দেখেছেন কি? অথবা শুধু ইসলামের উপর এই অপবাদ চাপিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যটাই বা কী!

লেখক:
ইমাম, বাইতুল আমান জামে মসজিদ (মেইন বাসস্ট্যান্ড) কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ। ।
মুহাদ্দিস: আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া কাসিমুল উলুম (কওমি মাদরাসা) বলিদাপাড়া, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here