জাহিদ হাসান, যশোরঃ

দেশের ফুলের রাজ্য খ্যাত যশোরের গদখালি। আর এখানেই এই ফুলের বেঁচাকেনার জন্য গড়ে উঠে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার। প্রতিদিন ভোর থেকে আনাগোনা শুরু হয় এ বাজারে গদখালি-পানিসারার কয়েক হাজার ফুল চাষীরা। ফুল নিয়ে ভোর থেকেই হাজির হন এ অঞ্চলের চাষীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট-বড় পাইকাররা সেখান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান।

এরপর বিভিন্ন হাতবদল হয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ফুলের রঙ ছড়ায় নানান বয়সের মানুষের মনে। বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে ছন্নপতন র্সবত্র। তেমনি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের সবচেয়ে ফুলের যোগান দেওয়া গদখালি ফুলের চাষ ও বাজারে।

সরেজমিনে গদখালি বাজারে যেয়ে দেখা যায়, যেখানে পূর্ব আকাশে লাল সূর্য উঁকি দেওয়ার সাথে সাথে জমে উঠতো ফুলের বাজার। সেখানেই করোনার প্রাদুর্ভাবে বাজার প্রাঙ্গন জনমানব শূণ্য। নেই আগের মতো ফুলের দাম নিয়ে তর্কা-তক্কি। নেই কোন হাকডাক। গুটি কয়েক দোকানদার বসে আছে দোকান খুলে। ফুল চাষীরা ফুল বাগান থেকে ফুল কেটে ছাগল-গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছে। চাষীদের চোঁখে মুখে বিষর্ণে ভরা।

গদখালি ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি-পানিসারার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। ফুল চাষে আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ফুলের উৎপাদন হয়েছিলো। ছাড়িয়েছিলো দামেও। দেশের সবচেয়ে ফুলের বাজার গদখালি বাজারে প্রায় ১২ রকমের ফুল বেঁচা-কেনা হয়। প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফুল চাষীরা ভরা মৌসুম। কিন্তু করোনা ভাইরাসে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে ফুল চাষি ও ব্যবসায়িদের অন্তত ১শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে দাবি গদখালি ফ্লাওয়ার সোসাইটির।

গদখালি এলাকার কৃষক শাহজাহান জানান, তিনি এবার আড়াই বিঘা জমির গোলাপ ফুলের ক্ষেত এখন ছাগলের খাদ্যে পরিনত হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ১২ দিন ধরে ফুলের বেচাকেনা নেই। এদিকে বাগান থেকে প্রতিদিনই দেড় থেকে দুই হাজার গোলাপ কেটে ছাগল-গরু দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। কারণ গোলাপ না কাটলে বাগান নষ্ট হয়ে যায়। একদিকে ফুলের বেচাকেনা নেই; অন্যদিকে ফুল কাটার জন্যে শ্রমিক খরচ গুনতে হচ্ছে। প্রতিদিনই শাহজাহানের দুই হাজার টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে।

পানিসারা এলাকার ফুল চাষী শের আলী জানান, ‘আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছি। বাংলা বর্ষবরণ উৎসব সামনে রেখে ফুল উৎপাদনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিলো। কয়েক লাখ টাকা গোলাপ বাগানে বিনিয়োগ করা আছে। ঠিক সেই সময়ে করোনা ভাইরাসের দুর্যোগের কারণে ১২ দিন ধরে পরিবহন-দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ফুলের বাজার বসছে না। ক্ষেত থেকে প্রতিদিনই দেড় হাজারের বেশি গোলাপ ফুল কেটে ছাগল গরু দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। ফুল না কাটলে নতুন করে আর কুড়ি আসে না। অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি আমরা ফুল চাষিরা। তিনি আরো বলেন, শুধু আমার মতো না এই এলাকার হাজারো ফুলচাষী এমন বিপাকে পড়েছেন। তাদের বাগানের রজনীগন্ধা, গøাডিওলাস, জারবেরা ফুল কেটে গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে গদখালির পাইকারি ফুলের বাজার ২৪ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। চাষিরা ফুল বিক্রি পারছেন না। আবার ক্ষেতে ফুল রাখতেও পারছে না। এরকম উভয় সংকটে পড়েছেন তারা। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে যশোর অঞ্চলে ফুল চাষি ও ব্যবসায়িদের অন্তত ১ শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখনি কৃষকরে খাদ্য সরবারাহ ও বিনা সুদে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ দাবিতে আমরা কৃষি মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। যশোরের জেলা প্রশাসক ও ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here