ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ডিজিটাল তথ্যের সম্ভাব নিয়ে আসা “ তথ্য আপা”রা। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মহিলা সংস্থার অধীন বাস্তবায়নাধীন তথ্য আপা : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামের তৃণমুল পর্যায়ের মহিলা ও শিশুদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় এবং উপজেলা তথ্য কেন্দ্রের আয়োজনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গিয়ে শিক্ষা,স্বাস্থ্য,আইন, ব্যবসা, জেন্ডার এবং কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সেবা প্রদান করছে। গ্রামের নারীদের কাছে “তথ্য আপা” হিসেবে পরিচিত আপারা বাল্য বিবাহ,সন্ত্রাস,জঙ্গীবাদসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামুলক উঠান বৈঠকও করছে।

যেখানে উপস্থিত থাকছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার,উপজেলা কৃষি অফিসার,মৎস্য অফিসার,যুব উন্নয়ণ অফিসার কিংবা সমাজ সেবা কর্মকর্তা। সরকারি সেবাসমুহ জনগনের দৌড় গোড়াই পৌছাতে সার্বিক সহযোগিতা করছেন এই তথ্য আপারা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে তিন জন তথ্য আপা নিয়মিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই সেবা প্রদান করছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা তথ্য সেবা কর্মকর্তা (তথ্য আপা)প্রিয়াংকা চক্রবর্তী জানান, শেখ হাসার বারতা,নারী পুরুষের সমতা,শেখ হাসিনার সহায়তায় তথ্য আপা পথ দেখায়” এই স্লোগান নিয়ে তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পটি গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে তথ্য সেবা প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। মুল উদ্দেশ্য গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের তথ্য প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ণ করা। ইতিমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়নে ২টি, রায়গ্রাম ইউনিয়নে ১টি, নিয়ামতপুর ইউনিয়নে ১টি, মালিয়াট ইউনিয়নে ১টি,ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে ১টি, জামাল ইউনিয়নে ১টি এবং সিমলা রোকনপুর ইউনিয়নে ১টি সহ মোট ৮টি উঠান বৈঠক করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারের সেবাসমুহ নারী ও শিশুদের জানাতে তারা সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলায় ৩জন তথ্য আপা নিয়মিত এই সেবা প্রদান করছেন।

উপজেলা তথ্য সেবা সহকারী পাপিয়া পাল (তথ্য আপা) জানান, তারা তথ্য কেন্দ্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, উপজেলার সরকারি সেবা সমুহের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরন, ভিডিও কনফারেন্স, ই-লানিং,ই-কমার্স ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন। এছাড়াও তারা ল্যাপটপ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকাধীন গ্রামবাসীর বাড়িতে গিয়ে শিক্ষা,স্বাস্থ্য,আইন,ব্যবসা,জেন্ডার এবং কৃষি বিষয়ক তথ্য সেবা প্রদান করছেন।

পাপিয়া পাল আরো জানান, তারা গ্রামের নারী ও শিশুদের ইন্টানেটের মাধ্যমে চাকুরির খবর, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল,সরকারি সেবা বিনামুল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও বাড়িতে গিয়ে বিনামুল্যে ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা, ডায়াবেটিস পরীক্ষা, ওজন পরিমান করা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধানদের সাথে ফেসটু ফেস কিংবা স্কাইপ/ফোনের মাধ্যমে কথা বলিয়ে দেয়ার কাজ করছেন। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের জীবন ও জীবিকা সম্পর্কিত বিষয় যেমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা,বাল্য বিবাহ,ফতোয়া, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা,চাকুরি সংক্রান্ত,আইনগত সমস্যা,ডিজিটাল সেবাসমুহ সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা জানান, বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্টি নারী। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশ গ্রহন ও ক্ষমতায়ন দেশের সার্বিক অগ্রগতির অন্যতম শর্ত। নারীর ক্ষমতায়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশের গ্রামের অসহায় দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত কিংবা কম সুবিধাপ্রাপ্ত নারীর তথ্যে প্রবেশাধীকার এবং তাদেরকে তথ্য প্রযুক্তির সেবা প্রদান নি:সন্দেহে নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করবে।

এ লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক “তথ্য আপা” ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন শীর্ষক প্রকল্পটি পরিচালনা করা হচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১১মাস ধরে এই কার্যক্রম করছে তথ্য আপারা। ইতিমধ্যে তথ্য আপারা বেশ কয়েকটি সফল উঠান বৈঠক করেছেন। তারা ডোর টু ডোর ভিজিট করে নারী ও শিশুদের তথ্য সেবা প্রদান করছেন বিনামুল্যে। ইউএনও আরো বলেন, তথ্য আপা প্রকেল্পর আওতায় তথ্য কেন্দ্র থেকে তথ্য সেবা, ডোর টু ডোর সেবা ছাড়াও প্রকল্প থেকে নির্মিত ওয়েব পোর্টাল,তথ্য ভান্ডার ও আইপি টিভির মাধ্যমে গ্রামীন মহিলাসহ বাংলাদেশের সকল স্তরের মহিলাদের তথ্যে প্রবেশ ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

বিপাশ/এসএএস

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here