শাহরিয়ার আলম সোহাগঃ

সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়া পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের কাজ। যে ব্যক্তি এই সাধ গ্রহণ করেছেন, তিনি ছাড়া এই কষ্ট কেউ উপলব্ধি করতে পারবেন না। কিন্তু মৃত্যুর অনেক কারণ থাকতে পারে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বা সড়ক দুর্ঘটনায়। কিন্তু একটা শিশুকে কেন হত্যা করতে হবে? একটা শিশু কি এমন অপরাধ করতে পারে? শিশুরা কেন টার্গেট আমাদের?

গত ৪ তারিখে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়ার একটা ৪তলা ভবনের পিছনে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে জানা যায়, লাশটি ছিল ৩০ নভেম্বর বাড়ির পাশে ওয়াজ শুনতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া মাদ্রাসা ছাত্র আলামিনের । নিখোঁজের পর অনেক খোঁজাখুজি করেও কোন লাভ হয়নি শিশুটির পরিবারের। কারণ, তাদের সন্তান যে আর পৃথিবীতে নেই।

একটু বলে রাখা ভালো, আমি পেশায় একজন সংবাদকর্মী। সবচেয়ে বড় কথা আমিও একজন পিতা। আগে তেমনটা বুঝতাম না। সন্তানদের প্রতি বাবা মায়ের কষ্ট ও ভালোবাসা। নিজে বাবা হওয়ার পর বুঝি সন্তান কি। তাই আলামিনের এই হত্যার ঘটনা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। অনুভব করছি একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আলামিনের বাবা-মা এখন কি অনুভব করছে। এমন যদি আমার হতো, আমি কি করতাম? নানারকম প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি।

মুল ঘটনায় আসি। আলামিনের বয়স খুব বেশি হলেও ১৩ বছর হবে। ১৩ বছরের একটা শিশু কি এমন অপরাধ করতে পারে সেটা আমরা সবাই কমবেশি বুঝি। যতটুকু জানতে পেরেছি আলামিন খুব নরম প্রকৃতির ছেলে ছিল। একমাত্র সন্তান হওয়ায় তার বাবার সাথে ছিল খুব ঘনিষ্ঠতা। সেই ছেলেকে কেউ হত্যা করবে এটা আলামিনের পরিবার বা এলাকাবাসীও মানতে পারছে না।

আলামিনকে বুকে ছুরি দিয়ে ফুসফুস বরাবর তিনটি আঘাত করা হয়। আচ্ছা, আলামিনের মরদেহ যেখানে পড়ে ছিল। সেখানে কোন রক্ত ছিল না। আপনারা যারা দেখেছেন, নিশ্চয় আমার সাথে একমত হবেন। তাহলে ওর দেহের রক্ত কোথায় পড়ে আছে? আলামিনকে কি তাহলে কোন ঘরের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে? সেই ছুরি বা রক্ত কোথায়? এসব প্রশ্ন উকি দিচ্ছে আমার মনে। আশাকরি সব কিছুই প্রকাশ হয়ে যাবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হত্যাকান্ডের ক্লু বা মোটিভ উদ্ধার করতে সক্ষম হবেন। আটক বা মামলা সংক্রান্ত কোন মন্তব্য আমি করতে চাইনা। জানতে চাই কেন হত্যা করা হলো আলামিনকে। কি দোষ ছিল ১৩ বছরের শিশুর?

আলামিনের বাবা-মাকে বলতে চাই, আপনাদের সন্তানকে তো কখনো ফিরে পাবেন না। বিচারের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ে যান। আপনাদের ছেলের খুনিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হলে আমার বা আমাদের সন্তানরা নিরাপদ থাকবে। এটুকু সমাজকে ভিক্ষা দেন আপনারা। এছাড়া আপনাদের কোন শান্তনা দেওয়ার ভাষা পৃথিবীর কোন মানুষের আছে কিনা আমার জানা নেই। সবশেষে, এমন নৃশংস হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানায়।

যার চলে যায়, সেই বোঝে হায়, বিচ্ছেদের কি যন্ত্রণা……………..

লেখকঃ গণমাধ্যম কর্মী।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here